পাতা:প্রবাসী (চতুর্দশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৪৮৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8?br মুখচ্ছবি ! আমি ষ্টেসন হইতে দুইখানি কাগজ কিনিয়া, লইয়াছিলাম—সে দুইখানিতেই আমাদের কাশ্মীর যাইবার কথা বিশদভাবে আলোচিত হষ্টয়াছিল। সেগুলি পড়িতে পড়িতে আমার মনে হইল সত্যই যেন আমরা কাশ্মীর যাত্রা করিয়াছি! যথাসময়ে আমরা রামনগরে আসিয়া পৌছিলাম। গ্রামখানি অতিক্ষুদ্র । অধিবাসী প্রায় নাই বলিলেই হয় । কাজেই খালি বাড়ী আমরা বিনাক্লেশেই ভাড়া পাইলাম। বাটীর অধিকারীকে বলিলাম আমার বন্ধুর স্বাস্থ্য ভঙ্গ হওয়ায় আমরা কয়েক মাসের জন্য বায়ুপরিবর্তনের জন্য রামনগরে থাকিব । লোকটা ঝটিতি বলিয়া ফেলিল—“হাওয়া বদলাবার এমন জায়গা আর পাবেন না মশায় ; লোকের হাওয়া বদলাবার দরকার হলে ডাক্তারেরা এইথানে আসতেই পরামর্শ দেন।” আমরা রামনগরে পৌছিবার কয়েক দিন পরেই বসন্তের প্রথম বাতাস দেখা দিল । একদিন হেমেন বাবুকে জিজ্ঞাসা করিলাম,--“জায়গাটা লাগছে কেমন ?” গম্ভীর মুখে তিনি বলিলেন,—“আরে ছ্যা ছ্যা, এমন জায়গাতেও মানুষ আসে ! না আছে একটা গানবাজনার আডডা, না আছে কিছু! গ্রামটার যেন প্রাণ নেই। বসে বসে যে কি করি, তার ঠিক নেই। দৈনিক ইংরেজী কাগজগুলো বিকেলে এসে পৌঁছয়, কিন্তু সারা দিনটা কাটে কিসে ?” কলিঙ্গত হইতে আসিবার সময় হেমেনবাবু শতাধিক পুস্তক সঙ্গে আনিয়াছিলেন, কিন্তু এই কয় দিনেই সেগুলি সব শেষ করিয়াছেন ; কাজেই এখন আর তাহার পড়িবার মত কিছুষ্ট ছিল না । কিয়ৎক্ষণ নীরবে থাকিয়া তিনি আবার বলিলেন,— “কদিন হল মশায় ? আর যে পারি না ; এই অপরিস্কার গুম্‌টা ঘরের মধ্যে বসে বসে যে পাগল হয়ে উঠলুম। একটু যে বেড়িয়ে আসব তারও যো নেই, এমনি বিশ্ৰী মোটা আমি যে রাস্তায় বেরুলেই ছোড়াগুলো হাততালি দিতে দিতে পেছনে ছুটতে থাকে । তবু ভাগ যে গ্রামে বেশী ছেলে “নেষ্ট,—ত না হলে এতদিন সত্যিই পাগল হয়ে যেতুম।” প্রবাসী—মাঘ, ১৩২১ [ ১৪শ ভাগ, ২য় খণ্ড একথা আমার নিকট আজ নূতন নহে, প্রায় প্রত্যহই তিনি সারাদিন ধরিয়া এইরূপ নানা অভিযোগ করিতেন । কাজেই আমি হাস্ত দমন করিয়া কেবলমাত্র বলিলাম,— “দিন কুড়ি হল আমরা এখানে আছি,--আর মাত্র সোত্তর দিন থাকতে হবে। তার পর ভেবে দেখুন কি সৌভাগ্য-স্বৰ্য্য আপনার ভাগ্য-আকাশে উঠবে।" “ই, ততদিন বাচলে ত সৌভাগ্য, এদিকে যে মরতে বসেছি! মরেই যদি যাই ত সৌভাগ্য ভোগ করবে কে ? এখনও সে-ত্ত-র দিন । বাবা, সে যে একযুগ মশাই! না ম্যানেজার মশাই, তার চেয়ে চলুন ফিরে যাই ; সত্যি বলছি, এখানকার হাওয়া আমার পক্ষে অসহ হয়ে উঠেছে। শরীরটাও বড় খারাপ হয়েছে। আর বাড়ীতে সেই যে একটা লোক হা পিভেশ করে পড়ে রয়েছে তার কথাও ত আমায় ভাবতে হয়!” হেমেন বাবু যে এই কুড়িদিনেই পত্নীর বিরহে যক্ষের মত কাতর হইয়া হা-হুতাশ করিবেন তাহা আমি পূৰ্ব্বেই জানিতাম। সে কথার কোন উত্তর না দিয়া বলিলাম, “কিন্তু এখন ত ফেরবার কোন উপায় নেই!” গম্ভীরমুখে হেমেন বাবু একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলিয়া নীরব রহিলেন । ( o ) সেদিন হেমেনবাবুকে বাসায় রাখিয়া একাকী আমি একটা দোকানে কাগজ কিনিতে গিয়াছিলাম । দোকানের ভিতর একখান তক্তাপোষে বসিয়া একজন লোক সেই দিনের একখন কাগজ উচ্চৈঃস্বরে পড়িতেছিল আর কয়েকজন নিষ্কৰ্ম্ম বসিয়া বসিয়া তাহাই শুনিতেছিল । লোকটা পড়িতেছিল আমাদের কাল্পনিক ভ্রমণের ইতিহাস । আমি এক দিস্তা কাগজ কিনিয়া একটা টাকা দিয়াছিলাম ; বাকি পয়সার জন্য কাজেই অপেক্ষা করিতে হইতেছিল। এই সময় একজন আসিয়া একটা পয়সা ফেলিয়া দিয়া বলিল,—“এক পয়সার চ!” লোকটার শরীর অত্যন্ত শীর্ণ, পরিচ্ছদ মলিন ও অৰ্দ্ধছিন্ন ; তাহার মত লোকেও চায়ের নেশা করে |