পাতা:প্রবাসী (চতুর্দশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৬৭৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩৪২ হইল মিশরের একজন বদান্ত ধনী-কুমার ইউসুফ কামাল পাশ৷ ফরাসী বন্ধুগণের পরামর্শে কাইরো নগরে এক সুকুমার - কলা-বিদ্যালয় প্রবর্তন করিয়াছেন । এষ্ট বিদ্যালয়ের সমস্ত ব্যয়, কুমার স্বয়ং বহন করিয়া আসিতেছেন।” বিদ্যালয়ের ছাত্রসংখ্য। এক্ষণে প্রায় ১৫০ ৷ ইছাদের অনেকেই দরিদ্র ও নিরক্ষর। কতিপয় ছাত্র বিনাবেতনে শিক্ষা পাইতেছে। এই বিদ্যালয় দেখিতে গেলাম। সহরের সাধারণ মহাল্লায় এক মামুলি গৃহে বিদ্যালয় অবস্থিত। সকল ঘরে সমান ভাবে আলোক প্রবেশ করিতে পায় না। জাকজমকপূর্ণ কাইরে। নগরে এই বিদ্যালয় অতি দীনহীন মলিন ভাবে জীবন যাপন করিতেছে । কিন্তু ভিতরে প্রবেশ করিয়! দেখিলাম এই নগণ্য বহিরাকৃতির অভ্যস্তরে যথার্থ প্রাণ বিরাজ করিতেছে । বিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ একজন ফরাসী চিএকর। ইনি পূৰ্ব্বে সিংহল, খাম, চীন প্রভৃতি দেশে ফরাসী গবর্ণমেণ্টের কৰ্ম্মচারী ছিলেন। অধ্যক্ষ মহাশয় ছাত্রগণের হাতের কাজ খুব ভাল করিয়া দেখাইলেন । প্রথম ছয় মাসের ভিতরই ছাত্রেরা কত উৎকর্ষ লাভ করিতে পারে বিদ্যালয়ের প্রদর্শনী-গৃহে যাইয় তাহার একটা সুস্পষ্ট ধারণা করিয়া লইলাম । ইনি প্রত্যেক চিত্র, মৃত্তিকমূৰ্ত্তি, ডিজাইন’ ইত্যাদির সম্মুখে লইয়া যাইয়। এই সমুয়ের বিশেষত্ব বুঝাইতে লাগিলেন। ইহার শিক্ষণপ্রণালী সম্বন্ধে অনেকক্ষণ কথাবাৰ্ত্ত। হইল। ইনি বলিলেন “আমি যখন প্রথম এই কার্য্য গ্রহণ করি, তখন আমাকে নানা লোকে না । উপদেশ দিতে আসিয়া ছলে । কেহ বলিতেন, “গ্রীক-রীতি অবলম্বন কর । কেহ বলিতেন ‘মুসলমানী কায়দার নকল শিখাও । কেহ বলিতেন ‘প্রাচীন মিশর হইতে শিক্ষার উপকরণ গ্রহণ কর । আমি কাহারও পরামর্শে টলি নাই । আমি সকলকে বলিতাম, ‘না, আমি কোন রীতিরই নকল করিব না। আমার ছাত্রের কোন আদর্শ, কায়দা, ছ'চ বা রীতিই দাসের মত অমুসরণ করিবে না। তাহাদের নিজ মাথায় যাহা আসে আমি তাহাদিগকে তাহাই শিখাইব । স্বকীয় কল্পনাশক্তি, স্বকীয় উদ্ভাবনী প্রবাসী—চৈত্র, ১৩২১ শক্তি, স্বকীয় চিন্তাশক্তির পুষ্টিসাধনই আমি পছন্দ করি ।” ফুল, ফল, লতা, পাতা, অলঙ্কার, মুৰ্বি, বর্ণ-সমাবেশ, সবই তিনি এই উপায়ে ছাত্রদিগকে শিখাইয়াছেন । কোন ফন্মুলা বা বাধাগৎ তাহার ছাত্রেরা শিখে নাই । স্বয়ং প্রকৃতি এবং নিজ নিজ সৌন্দর্য্যতান তাহদের শিক্ষ করূপে বৰ্ত্তমান রহিয়াছে ; এবং মিশরের লোকজন, কৃষি, শিল্প, উড়ি (, ব্যবসায় ইত্যাদি তাহীদের আলোচ্য বিষয় দেথিতে পাইলাম । প্যারিস-মৃত্তিক-নিৰ্ম্মিত কতকগুলি মূৰ্ত্তি দেখা গেল । এই-সমুদ্বয়ের মুখমণ্ডলে হৃদয়ের ভাব বেশ প্রকাশিত হইয়াছে। মূৰ্ত্তিগঠনে মুসলমান যুবকের সত্যই কৃতিত্ব অর্জন করিয়াছে বুঝিতে পারিলাম । ফরাসী অধ্যক্ষ মহাশয়কে অত্যন্ত উৎসাহশীল এবং কৰ্ম্মঠ বোধ হইল। তিনি শিল্পজগতে মিশরীয় মুসলমানযুবকগণের ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে বড়ই আশান্বিত। আক্ষেপের সহিত বলিলেন “আমি যদি ভারতবর্ষের এইরূপ কোন বিদ্যালয়ে অধ্যাপক হইতাম, তাহা হইলে এই কয়দিনে কত বেশী ফল দেখাইতে পারিতাম। এখানে গধ৷ পিটাইয়া মানুষ করিতে হইতেছে। ছাত্রের অনেকেই সাধারণ নিম্নশিক্ষাও পায় নাই। সামান্ত গণিতও কেহ কেহ জানে না। তাহার উপর, তিন চারি বৎসর পূর্ণ হইবার পূর্বেই ইহারা অন্নসংস্থানের উপায় বাহির করিতে বাধ্য হয়। এই-সকল উপকরণ লইয়া আমাকে কাজ করিতে হইতেছে । এ দিকে, মিশরবাসীর উৎসাহ বা সাহায্য ত বিন্দুমাত্র পাই না । কেহই বিদ্যালয়ে অর্থদান করিতে চাহেন না । নিজ নিজ বিলাসভোগে প্রায় সকল ধনীই ডুবিয়া আছে । কিন্তু ভারতবর্ষে এই বিদ্যালয় থাকিলে আমার কাজের আদর হইত। বিদ্যালয় অল্পকালেই জনসাধারণের সহানুভূতি আকর্ষণ করিতে পারিত।” আমি শুনিয়। হাসিলাম। পরে তিনি আবার বলি লেন "এইমাত্র সম্বল লইয়াও আমরা অসাধ্যসাধন করিয়াছি । আমাদের একটি ২২ বৎসর বয়স্ক ছাত্রকে প্যারিসের সৰ্ব্বোচ্চ শিল্পবিদ্যালয়ে পাঠাইয়াছি। গতবৎসর