পাতা:প্রবাসী (চতুর্বিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৩৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

W98 প্রবাসী—কাৰ্ত্তিক, ১৩৩১ [ ২৪শ ভাগ, ২য় খণ্ড বেদে স্বষ্টিধ্বংসকারী কোনও দেবতার উল্লেখ পাওয়া যায় না। ভয়ঙ্কর বঞ্জ-নিনাদ শুনিলে স্বভাবতঃ মনে হয় যে উহা স্বষ্টি সংহার করিতে উদ্যত। এই কারণেই বোধ হয়, পুরাণে রুদ্র একজন সংহারকারী দেবতা । পুরাণে ভগবতী আদ্যাশক্তি রুদ্রপত্নী,—কালী করালী প্রভূতি নামে খ্যাত। বেদে এসকল দেবীর কোনও উল্লেখ নাই বটে, তবে মণ্ডুকোপনিষদে দেখা যায়, অগ্নির সাতটি জিহাকে কালী, করালী, মনোজবা, স্বলোহিতা, ধূম্ৰবৰ্ণ, স্ফুলিঙ্গিনী, ও বিশ্বরূপী নামে অভিহিত করা হইয়াছে। দুর্গাও অগ্নির অপর একটি নাম । সুতরাং মনে হয়, সংহারকারী অগ্নির নাম যেমন রুদ্র, এই অগ্নির দাহিকা বা সংহারকারী শক্তিই তেমনি আমাদের পুরাণের আদ্যাশক্তি বা রুদ্রপত্নী । ঋগ্বেদের পর বেদান্তর্গত ব্ৰাহ্মণ ও সংহিতাদি গ্রন্থে যে-সকল উপাখ্যান রচিত হইয়াছে, তাহাতে দেখা যায়, নভোমণ্ডলস্থ কোনও নক্ষত্রবিশেষকে রুদ্ররূপে পরিকল্পনা করা হইয়াছে। শ্ৰীযুক্ত যোগেশচন্দ্র রায় •হোশয় তাহার “আমাদের জ্যোতিষ ও জ্যোতিষী” গ্রন্থে বিশেষ প্রমাণ-সহকারে দেখাইয়াছেন যে, আর্ধ্যঋষিগণ আকাশের জ্যোতিষতত্ব বিশদরূপে বুঝাইবার জন্ত রূপকছলে কয়েকটি উপাখ্যান রচনা করিয়াছিলেন, এবং সেইসকল উপাখ্যান রূপান্তরিত হইয়া পরবর্তীঘুগে পুরাণ-মধ্যে সন্নিবেশিত হইয়াছে। ঐতরেয় ও শতপথ ব্রাহ্মণে কথিত আছে, কোনও সময়ে প্রজাপতি স্বীয় কঙ্কা উষার প্রতি আসক্ত হইলে দেবগণ প্রজাপতির এই অন্যায় আচরণে ক্রোধাম্বিত হন, এবং তাহাদের ঘোরতম অংশ একত্রিত করিয়া ভূতবানের স্বষ্টি করেন। ভূতবান প্রজাপতির অকৃতকে শরবিদ্ধ করিয়া আকাশে গমন করেন। প্রজাপতির অকৃত মৃগ নামে, এবং যিনি হনন করেন তিনি মৃগব্যাধ নামে খ্যাত হন। যে শরদ্বারা অকৃত বিদ্ধ হইয়াছিল তাহা ত্রিকাও অর্থাৎ তিনটি অংশযুক্ত ছিল। এখন দেখা যাউক, এই আখ্যানের সহিত আকাশের গ্রহনক্ষত্রাদির কি সম্বন্ধ আছে । wবালগঙ্গধর তিলক মহাশয় তাহার ওরায়ণ (Orion) গ্রন্থে প্রমাণ করিয়াছেন যে, যখন মৃগশিরা নক্ষত্রে বিষুব-সংক্রমণ হইত, সে-সময় এই নক্ষত্রকে প্রজাপতি নামে অভিহিত করিত। তৈত্তিরীয় ব্রাহ্মণে পুনঃ পুনঃ কথিত হইয়াছে—“যজ্ঞো বৈ প্রজাপতিঃ", "সম্বৎসর প্রজাপতিঃ” অর্থাৎ যজ্ঞ ও সম্বৎসর উভয়েই প্রজাপতি নামে অভিহিত । মৃগশিরা নক্ষত্রে স্বর্ধ্যের অবস্থানকালীন দিবা ও রাত্রি সমান হইতে দেখিয়া তদনুসারে যজ্ঞাদি সম্পাদনের জন্য সম্বৎসরাদি গণনা করা হইত। যজ্ঞের জন্ত সম্বৎসরাদি গণনা এবং এই মৃগশিরায় বিষুব-সংক্রমণ অনুসারে যজ্ঞাদি সম্পাদনের কাল নিরূপণ করা হইত বলিয়াই এই মৃগশিরা একজন প্রজাপতি। কিছুকাল পরে বৈদিক ঋষিগণ যখন দেখিলেন যে, মৃগশিরা নক্ষত্রে সুৰ্য্যের অবস্থানকালীন দিবা ও রাত্রি সমান না হইয়া, পরবর্তী রোহিণী নক্ষত্রে স্বধ্য যখন গমন করিতেছেন, তখন দিবা ও রাত্রি সমান হইতেছে, তখন র্তাহারা বাস্তবিকই আশ্চৰ্য্যাম্বিত হইলেন। ইহার বহু পূৰ্ব্ব হইতেই ঋষিগণ ঋতু বৎসরাদির পরিবর্তন লক্ষ্য করিয়া আসিতেছিলেন বটে, কিন্তু কেন যে এরূপ ঘটিতেছে,—জগতের স্বাভাবিক নিয়মানুসারে অয়নবিন্দু যে ক্রমশঃ পশ্চিম দিকে সরিয়া আসিতেছে, এ-তথ্য তখন র্তাহারা সবিশেষ অবগত হইতে পারেন নাই। কাজেই তাহারা রোহিণী নক্ষত্রে বিষুব সংক্রমণ হইতে দেখিয়া আশ্চর্যাম্বিত হন। বিষুববিন্দুর পরিবর্তনে ঋতুর পরিবর্তন ঘটে, এবং সে-কারণ যজ্ঞের জন্ত সম্বৎসর গণনারও বিশেষ অন্ধবিধা হয়। কাজেই আৰ্য্যগণ বিরক্ত হন। এই বিষয়টাই রূপকছলে বলিবার জন্য ব্রাহ্মণ-গ্রন্থে কথিত হইয়াছে— প্রজাপতি স্বীয় দুহিতার প্রতি আসক্ত হন, অর্থাৎ বিষুব-বিন্দু মৃগশিরাকে পরিত্যাগ করিয়া রোহিণী নক্ষত্রে উপগত হয়। যে-সময়ের কথা বলা হইতেছে, সে-সময়ে মৃগশিরা হইতে নক্ষত্র গণনা আরম্ভ করা হইত বলিয়া, মৃগশিরা বা প্রজাপতি হইতে অন্যান্য নক্ষত্র উদ্ভূত বলিয়া মনে করা হইত। এই হিসাবে রোহিণী প্রজাপতি-কন্যা । পুরাণে সাতাশটি নক্ষত্রই প্রজাপতি দক্ষতনয়। বিষুব-বিন্দুর পরিবর্তনে কালগণনার অস্ববিধা হয়, কাজেই আখ্যানে দেবগণ প্রজা