পাতা:প্রবাসী (চতুর্বিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৩৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রুদ্র শ্ৰী জ্ঞানেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় আমাদের পুরাণু-বর্ণিত আখ্যামের কতকগুলির মূল ভিত্তি বৈদিক আখ্যান। ঋগ্বেদের আখ্যানগুলি, দেখা যায়, বেদান্তর্গত তৈত্তিরীয় সংহিতাদি গ্রন্থে বিস্তারিতভাবে বর্ণিত হইয়াছে, এবং পরবর্তী যুগে পরিবৰ্দ্ধিত ও পরিবর্তিত হইয়া পুরাণাদিতে অনেকটা বিভিন্নাকার ধারণ করিয়াছে। আখ্যানগুলির এরূপ বিভিন্নাকার ধারণ করিবার একমাত্র কারণ, মনে হয়, বেদে আখ্যানগুলি যে উদ্দেশ্য লইয়া রচিত হইয়াছিল, পুরাণাদিতে সে উদ্দেশ্য রক্ষিত হয় নাই । বৈদিক ঋষিগণ অগ্নি, বায়ু, স্বৰ্য্য, চন্দ্র, জল, আকাশ, উষা, সন্ধ্যা, দিব, রাত্রি প্রভৃতি প্রত্যেক নৈসর্গিক ব্যাপারকে এক-একটি দেবতাজ্ঞানে উপাসনা করিতেন । ক্রমে তাহারা নভোমণ্ডলস্থ গ্রহ-নক্ষত্রাদির গতিবিধি পৰ্য্যবেক্ষণ করিতে করিতে এতটা বিস্ময়াপ্লুত হন যে, প্রত্যেক নক্ষত্রাদিকে একএকটি দেবতা কল্পনা করতঃ, ইহাদের আকৃতি ও গতি-বিধির সহিত নৈসর্গিক ব্যাপারের সম্বন্ধ নির্ণয় করিয়া রূপকছলে কতকগুলি আখ্যান রচনা করেন । তৈত্তিরীয় ব্রাহ্মণ ও বেদান্তর্গত সংহিতাদি গ্রন্থে এই আখ্যানগুলি বেদের মূল উদ্দেশ্যের কোনওরূপ হানি না করিয়া বিশদভাবে বর্ণিত হইয়াছে ; কিন্তু পুরাণাদিতে এগুলি এরূপ বিভিন্নাকার ধারণ করিয়াছে যে, ইহাদের সহিত বৈদিক আখ্যানের যে কোনওরূপ সম্বন্ধ আছে, তাহা কল্পনা করাও অনেক স্থলে দুরূহ হইয় পড়ে । রুদ্র একজন বৈদিক দেবতা। ঋগ্বেদের প্রথম মণ্ডলে অনেকগুলি ঋকের মধ্যে রুদ্রের উল্লেখ পাওয়া যায়। (১) এখন দেখা যাউক, প্রকৃতির কোন বস্তুটিকে আর্য্যগণ রুদ্র-নামে অভিহিত করিতেন । ঋগ্বেদের প্রথম মণ্ডলের ২৭ সুক্তের ১০ ঋকে রুদ্রকে অগ্নির রূপ বলিয়া বর্ণনা করা হইয়াছে । অতএব (२) २१ एख, ०० शकू । 8७ रख, ১.২, ৪, ও e ঋকৃ। ৪৫ शख”, *श्रृ ॥ १२ ंख्’, s चर् । দেখা যাইতেছে যে, অগ্নির কোনও বিশেষ রূপের নাম রুদ্র। সায়ণের মতে “রুদ্রায় কুরায় অগ্রয়ে” অগ্নির ক্রর মূর্তির নাম ক্ষত্র। রুজ শৰ ক্লদ ধাতু হইতে নিম্পন্ন। রুদ ধাতুর একটি অর্থ রোদন করা, এবং অপর অর্থ গর্জন করা। রুদ ধাতুর রোদন করা অর্থ গ্রহণ করিয়া যাস্ক রুদ্র শব্দের এইরূপ অর্থ করিয়াছেন যে, শক্রগণকে রোদন করান বা দুঃখ প্রদান করেন বলিয়া ইনি রুদ্র। তৈত্তিরীয়কে কথিত আছে, দেবাক্ষর-সংগ্রামে দেৰগণ-পরিত্যক্ত ধন অগ্নি অপহরণ করিয়া পলায়ন করেন। পরে সংগ্রামাত্তে দেবগণ অগ্নির নিকট হইতে বলপূৰ্ব্বক তাহদের ধন গ্রহণ করিলে, অগ্নি রোদন করিতে থাকেন, এবং এইজন্যই তিনি রুদ্র-নামে অভিহিত হন। রুদ ধাতুর গর্জন করা অর্থ গ্রহণ করিয়াও যাস্ক বলেন, অগ্নি মেঘ-মধ্যস্থ হইয় বারম্বার গর্জন করতঃ গমন করেন বলিয়া তাহার নাম রুদ্র । অগ্নি ক্রররূপ ধারণ করিলে শব্দায়মান ঝড়ের উৎপত্তি হয়, এবং उोश হইতে বেদোক্ত বজের স্বষ্টি হইয়া থাকে। এই ক্রর অগ্নিরূপী ভয়ঙ্কর বজের নামই রুদ্র। ক্রর অগ্নি হইতে ঝড়ের উৎপত্তি হয় বলিয়া বেদে মরুৎগণ রুদ্রপুত্র বলিয়া অভিহিত । (২) পুরাণাদিতে রুত্রের যেরূপ সংহারকারী ভয়ঙ্কর মূৰ্ত্তি কল্পনা করা হইয়াছে, তাহাতে রুদ ধাতুর রোদন করা অর্থের সহিত তাহার কোনও সামঞ্জস্য পাওয়া যায় না । এ-কারণ মনে হয়, বেদে গর্জন করা অর্থেই রুদ্র শব্দ পরিকল্পিত হইয়াছে,—সংহারকারী বজ্ররূপ ঐশ শক্তিকেই প্রাচীন হিন্দুগণ রুদ্র বলিয়া স্তুতি করিতেন। (৩) (২) ১ মণ্ডলের ৩৯ হুক্তের ৪ খকে মরুৎগণকে "রুদাসঃ" বলিয়৷ বর্ণনা করা হইয়াছে। সায়ণ "রুদ্রাস: অর্থ "রাজপুত্রা মরুত:’ করিয়াছেন। (৩) এসম্বন্ধে প্রবাসী জ্যৈষ্ঠ ১৩৩৭, পৃষ্ঠা ২২৫ দ্রষ্টব্য। yরমেশচন্দ্র দত্ত মহাশয় তাহার ১ মণ্ডলের ৪৩ লুক্তের টাকায় রুদ ধাতুর গর্জন করা অর্থ গ্রহণ করিয়া রুদ্র শব্দের ব্যাখ্যা করিয়াছেন।