পাতা:প্রবাসী (চতুর্বিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৩৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পয়লা আষাঢ় শ্ৰী সুধানলিনীকান্ত দে, এম-এ বিবাহের পর প্রথম আষাঢ় মাস। কয়েক দিন বেশ রোদের পর মেঘে-মেঘে আকাশ স্নিগ্ধ হইয়া আসিয়াছে। ক্ষণে আকাশ অন্ধকার হইয়া যাইতেছে, ক্ষণে জোরে অথবা আস্তে বৃষ্টি নামিতেছে। রেবা এবং স্বকান্ত সারাদিন বর্ষার রূপ মুগ্ধচিত্তে উপভোগ করিতেছে। "বাঃ বাঃ, সমস্ত আকাশ কালো মেঘে ছেয়ে গেল দেখ ।” “একটু আগে জোরে বাতাস দিচ্ছিল, এখন আর নেই।” "বৃষ্টি এল!” “ৰড় বড় ফোটা ?” “জান্‌লা ৰন্ধ করে দাও, দাও।” “না।” “ভিজে, গেলে যে ।” “ভিজতে বেশ লাগছে। ঐ দেখ না, কাকগুলি কী ভিজছে ?” “এখন কেন বন্ধ করছ ?” “বড় জোরে এল।” দুইজনে ঘরের মধ্যে পাশাপাশি বসিল । এক পশলা বৃষ্টির পর রেব আসিয়া সব জানালা খুলিয়া দিল এবং ঝুঁকিয়া পড়িয়া আকাশের দিকে চাহিয়া বলিল, “আকাশ পরিষ্কার হ’য়ে গেছে।” স্বকান্ত উত্তর দিল না দেখিয়া রেব বলিয়া চলিল, “কি চমৎকার! বৃষ্টির পর একটা ভিজে মিষ্টি গন্ধ ভেসে আসে, এমন ভালো লাগে ! পৃথিবীর যেন নিজের গায়ের গন্ধ p" স্বকান্ত নাক উচাইয়া বলিল, “কবিত্ব !” রেৰা রাগিয়া বলিল, “কবিত্ব ত কবিত্ব । বর্ধার দিনে কবিত্ব করলে এমন কি দোষ হয় ? যত বড় বড় কবিতা বর্ষার কবিতা লিখেই অমর হয়েছেন।" “কেউ-কেউ হয়েছেন হয়ত। কিন্তু কবিত্ব করে আমাদের বিশেষ কিছু হয় না—শুধু ভাত জোটে না এ যা দোষ ।” ব্যথাটা কোথায় রেবার অজানা রহিল না, এক অন্তরকম স্বরে বলিল, “ভাত ? ভাতই কি সব ? সংসাে ভাতের চেয়ে বড় কি কিছুই নাই ?” “আছে। কিন্তু তা বলে’ ভাতের চিন্তা ত দূর করতে পাবুছ না। ভাত হয়ত সবচেয়ে ছোট জিনিষ । তা ভাতের কথা আগে না ভেবে অন্য-কিছুর কথা ভাব যায় না । এ ত তুমি জান ।” বলিতে বলিতে স্বকাস্তের চোখ জলিয়া উঠিল, “ভাত চাহ ভাত। এত হাহাকার, এত দৈন্য এত হীনতা সৰ শক্তির অভাবে । সে-শক্তি ভাতের শক্তি । হাজার হাজার লোককে ভাত এনে দাও, পৃথিবী আরও বড় হ'য়ে উঠবে।” রেবা মাথা নীচু করিয়া বলিল, “শক্তি কি টাকার নয় ?” “টাকা মানেই ভাত, ভাত মানেই টাকা ।” বেচার। রেবা ! স্বামীর এই অর্থতত্ত্বের কাছে সে এতটুকু হইয়া গেল। স্বকাস্তের আকাঙ্ক্ষা অফুরন্ত — রেবাকে লইয়া কতরকম স্বপ্নের না সে স্বষ্টিকর্তা ! কিন্তু সে-সকল স্বপ্নমাত্র । সত্য যা তা এই যে তারা গরীব । .কিন্তু স্বকাস্তের ভিতর কোমল কোন দিক্‌ নাই বলিলে মিথ্যা বলা হুইবে । এই ধরে আজকের বর্ষার দিনটা । দিনের মধ্যে থাকিয়া-থাকিয় বার বার আকাশের জল ঝরিয়া পড়িতেছে, ইহা মনকে অকারণে উদাস করিয়া দেয় । সে রেবাকে লইয়া আকাশের দিকে আত্মহারার মত তাকাইয়া থাকে, রেবার দীপ্ত অথচ স্নিগ্ধ স্বন্দর মুখের দিকে চাহিয়া কি পড়িতে চায়। বাস্তবিক কবিতাও করে ।