১ম সংখ্যা ] পয়লা আষাঢ় wర్సి “রেব, জানো রেব, আমিও অকবি নই, অন্তত চিরদিন ছিলাম না ।” “জানি–কিন্তু কাকে ভালোবেসেছিলে সেইটে শুধু জানিনে ৷” রেবা হাসে । স্বকান্ত রেবাকে কাছে টানিয়া বলিল,“দুষ্ট কোথাকার! এই বুঝি !” “মিথ্যা বলেছি নাকি ?” স্বকাস্ত গভীর হইয়া বলিল, “না মিথ্যা বলনি বটে।” “কে সে শুনি না ।” ‘কেউ বটে। কিন্তু সে-কেউ কেউ-না !” রেবা স্বকাস্তের মুখের দিকে তাকাইয়া বলিল,“মানে ?” “আমি স্বীকার করি মনে-মনে একজনকে খুব ভালোবাস্তাম অন্তত ভালো-বাসতে চাইতাম। কিন্তু সে একজন কোন জীবস্ত মেয়ে নয়। চার বছর মনে মনে ভালোবাসতে শিখেছি তার পর পেয়েছি তোমাকে—” "ও, তুমি এমন-সব গল্প বানিয়ে বলতে পার। আমি ভাবছিলাম কি না কি বলবে।” “সত্যি বলিনি ?” রেবা স্বকাস্তের মুখের দিকে আড়চোখে চাহিয়া বলিল, “হবে, কে জানে। কিন্তু দোহাই তোমার, আর ভাতের কথা বলে’ আজকের স্বন্দর বর্ষাটা মাটি কোরো না ।” স্বকাস্তু হাসিল। বাস্তবিক স্বন্দর বর্ষাটাকে মাটি করিতে স্বকান্তও চায় না। জীবন কৰ্ম্মময়–অবসর বেশী ঘটে না । আর সব অবসরকে নিবিড় করিয়া পাওয়াও সম্ভব হয় না। আজ প্রিয়ার কালো চোখ আর মেঘের কালো ছায়া দুইই যদি অবসরের দিনে জুটিয়া থাকে তবে মুকাস্ত কি তাহা প্রাণ দিয়া উপভোগ করিবে না ? বিশেষ এই ত বিবাহের পর প্রথম বর্ষা ! স্বকান্ত মুখ উজ্জল করিয়া বলিল, “রেবা আমার মাথায় একটা খেয়াল এসেছে। রেব উৎসাহের সহিত বলিল, “কি ?” “আজ বাংলা দেশে আমাদের অখ্যাত-অজ্ঞাত ছোট্ট এই ঘরে কালিদাসকে নিমন্ত্রণ করে এনে আমরা সম্মান করব। আমাদের এই দোতলা ঘরখানা হবে উজ্জয়িনী আর পাশের ঐ নালাটা শিপ্ৰা ।” রেবা হাসিয়া গলিয়া বলিল, “মানে ?” “মানে অত্যন্ত সহজ ।” “শুনি ।” “মনে আছে ত মেঘদূত ? 'আষাঢ়স্ত প্রথম-দিবসে’ —আজ আষাঢ়ের প্রথম দিনে—” “আজ ত আষাঢ়ের প্রথম দিন নয় ।” “আঃ ! নাই হ’ল প্রথম দিন । পঞ্জিকা দেখেই ষে প্রথম দিন করতে হবে তার কি মানে আছে ?” রেবা ক্ষুন্নভাবে বলিল, “আজ ৩রা আযাঢ় ।” “ত হোকু ৩রা আষাঢ় । মনে করে দেখ ত ১লা আষাঢ় কিরকম দিন ছিল। সে দিন আজকের মত এমন স্নিগ্ধ মেঘ-ঢাকা আকাশ ছিল ? এমন বৃষ্টি ঝরছিল ? কখনই না। সেদিন রীতিমত কাঠফাট রোদ ছিল। না, সেদিন আজকের মত রবিবার ছিল আর আমার ছুটি ছিল ?” “তা বটে ।” “বোকা মেয়ে ! পঞ্জিকায় ৩রা লেখা থাকৃলেও আজ আমরা ১লা আষাঢ় করব। মনে কবৃব যেন আজই ১লা আষাঢ় ।” “তার পর ? “তার পর সারাদিন ধরে, আমোদ করব।” “এক-এক ?” “তুমি আর আমি।” স্বকাস্তের মনে হইল যে আমোদটাকে পাইতে চাহিতেছে তার সম্ভাবনায় বিশ্বাস সে রেবার মনে জাগাইতে পারিতেছে না । নারী যদি সচেতন হয় তবেই তার কল্যাণ-হস্তে একটা সম্পূর্ণতা আশা করা যায়। রেবা কিন্তু জিনিষটাকে মনের মধ্যে আরো বড় করিয়া ধরিতে পারিল। আগের দিন যদি প্ল্যান ঠিক করা হইত, তবে হয়ত স্থকাস্ত অনেক-কিছু করিতে পারিত । কিন্তু এতখানি বেলা হওয়ার পর সুকান্ত মনেমনে নিরুৎসাহ-ভাব অনুভব করিল। শুধু নূতন প্রেম তাকে উদ্দীপিত করিয়া রাখিল, কিন্তু আমোদটা কি করিলে সব
পাতা:প্রবাসী (চতুর্বিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৪০
অবয়ব