পাতা:প্রবাসী (চতুর্বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/১৯৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২য় সংখ্যা ] হয়ত বৌদি কোনও বিহিত করতেও পারতেন, ভাবতেই শিরাগুলোর রক্ত চঞ্চল হয়ে উঠল। বৌদিকে ধর দেবো কি ন ভেবে স্থির করতে পারছিনে।. 酸 প্রতিভার কথা ঠাকুরপোর স্বাস্থ্য এমন কি খারাপ হয়েছিল তা অবশু ডাক্তারদের বিবেচ্য, আমার কিন্তু স্থির ধারণ তার রোগ দেহে নয়, মনে । বায়ু পরিবর্তনের নাম করে হঠাং তিনি ঘর ছেড়ে বেরিয়েছেন, এজায়গাট। নাকি তার পক্ষে ভারি অস্বাস্থ্যকর হয়ে পড়েছে, অথচ দেখি ছুটির দিন বাংলাদেশ ভেঙে স্বাস্থ্যাম্বেষী লোকেরা এইদিকে ছুটে আসে । কারণটা আমি বেশ জানি, এবং সেজন্যই তাকে ধরে’ রাখতে তেমন পীড়াপীড়িও করিনি, থাক তব দেশশ্ৰমণে র্তার মনট। যদি চাঙ্গ| হ’য়ে ওঠে । .. নিজের বোকামির জন্যে আমার ভারি অন্ততাপ হয় । রত্নাকর-বাবুর স্ত্রী লতিকার মায়ের উত্তরখানি আমাকে পাঠিয়েছিলেন । তিনি জানিয়েছিলেন যে এক ইঞ্জিনিয়ারের সঙ্গে তার মেয়ের সম্বন্ধ অনেক আগে থেকেই স্থির হয়ে আছে, এৰং হয়ত দু-তিন মাসের ভিতর বিয়ে হবে। এমনতর একটা ভয় আমি পূৰ্ব্ববধিই করছিলেম। ঠাকু পো যে কতখানি আঘাত পাবে তা ভেবে খুবই কষ্ট হ’ল। চিঠিখনি ছিড়ে জানল গলিয়ে বাইরে ফেলে দিয়ে ভারমনে বিকেলের খাবার তৈরী কবৃতে গেলেম । যখন চা ও খাবার নিয়ে ঠাকুরপোর ঘরে গেলেম, দেখলেম তিনি চোখ বুজে ইঞ্জি-চেয়ারে পড়ে’ আছেন। আমি ডাকৃতে তিনি চোখ মেললেন, কিন্তু তখনে চোখের কোণে জলের দাগ। আমার মনট। ছাং করে উঠল । খাবার দিয়ে প্রথমেই ছুটে গেলেম আমার জানলার তলায়, দেখলেম চিঠির টুকরো সেখানে নেই। এর পরে ঠাকুরপোর চোখের জলের কারণ আর অজ্ঞাত থাকৃতে পারে না। পর দিন ঠাকুরপে স্বাস্থ্যের দোহাই দিয়ে বেরিয়ে পড়লেন। ওঁর দাদা ভিতরের খবর কিছু জানতেন না, আমিও জানাইনি, ছোট ভাইটির ব্যথার কথা শুনে’ তিনি ত আর খুলী হতে পাৰ্বতেন না। কষ্টিপাথর ১৬৭ আমার চিরদিন ধারণা ছিল কোমলতার বালাই পুরুষের ভিতর নেই, তা মেয়েদেরই একচেটিয়া ; পুরুষের ভালবাসা প্রথম যৌবনের নেশার বিপ্ৰলত বই কিছু নয়। ঠাকুরপোর জীবন দেখে আমার সে ভুল ভেঙে গেছে । পুরুষ হ’য়ে যে ব্রহ্মচৰ্য্যশীল বিধবার নৈঠিক জীবন বরণ ক’রে নেয় তার প্রেম কত কোমল, কত দৃঢ় ! আমার মনে হয় ভালমন্দ সকলকার ভিতরই আছে ; খাটি কথাটার অর্থ সব অভিধানেই এক ... কাল ঠাকুরপোর চিঠি পেয়েছি। বোধ করি ব্যপ। চেপে রাখতে না পেরে অজ্ঞাতে তিনি তা প্রকাশ করে’ ফেলেছেন। কি করুণ তার স্বর : চিঠি পড়ে’ আমার দু-চোখ ফেটে হু হু করে জল ঝরেছে। বোধ করি কখনে। অত কঁাদিনি ।...তিনি এক জায়গায় লিখেছেন– “আকাশ অত বিশাল, তবু যখন ঝড় ওঠে আর মেঘগুলো গৃহহারার মত নানাদিকে ছুটোছুটি করে আশ্রয়ের জন্তে, তথম আকাশ তাকে হাত বাড়িয়ে আশ্রয় দিতে পারে না ; তেমনি আজ তোমাদের বিপুল স্নেহও যেন আমাকে ঘিরে রাখবার পক্ষে যথেষ্ট নয়। এর জন্তে সম্পূর্ণ দায়ী আমি। ঝড়ের সঙ্গে লড়াই না করে আমি যেন ঝড়ের কোলে গা ঢেলে দিয়েছিলেম । তার ফল আমায়ু ভূগৃতে হবেই ! আমি ভেসে চলেছি, এ-চলার শেষ কোথায় জানিনে।”...এ-বয়সে তিনি বিবাগী হ’য়ে ভেসে বেড়াচ্ছেন ভাবতে ভারি কষ্ট হয়। কোনও রকমে তাকে সংসারের ভিতর এনে ফেলতে পারলে হয়ত বা তার পরিবর্তন হ’ত। একটি ভাল মেয়ে খুজে তাকে ধরে আনতে হবে . রত্নাকর-বাবু সপরিবাবে দেশের বাড়ীতে গেছেন। ইচ্ছা হয় লতিকার মনের খবর জানতে। তার প্রতি ঠাকুরপোর গভীর ভালবাসার আকর্ষণ কি তার হৃদয় স্পর্শ করেছিল ? না করে থাকৃলেই বরং ভাল । অরুণের কথা দিনের পর দিন মাসের পর মাস কি অজানা আশার পিছনে উদ্ধার মত ঘুরে বেড়াচ্ছি অনেক সময় নিজেই যেন বুঝে উঠতে পারিনে। আমার স্বাস্থ্য সম্বন্ধে ডাক্তারের এমন কোনও আশঙ্কা করেননি যে পশ্চিমের