পাতা:প্রবাসী (চতুর্বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৩৫৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

vరి:Sు কাছে ক্ষমা চাইবারও আমার অধিকার নেই। কিন্তু তবুও তোকে আজ ক্ষমা করতেই হবে এই পারের যাত্ৰী বুড়োটাকে। পাৰ্বছিনে আর সহ্য করতে— বল দুলু ক্ষমা করতে পারৰি কি ?” ক্ষমার কথায় সে একেবারে লুটিয়ে পড়ল নন্দর পায়ের তলায়—মুখ গুজড়ে। আৰ্ত্তকণ্ঠে বলে উঠল “কি বলছ আজ তুমি! আমি যে তোমার স্ত্রী—দাসী। তুমি স্বামী—আমার দেবতা—আমার সর্বস্ব। পায়ে পড়ি তোমার-অfর আমাকে অপরাধিনী কোরো না।” বিশ্বয়ে নন্দর বাক্য-স্ফূৰ্ত্তি হচ্ছিল না, খুঁজেই পাচ্ছিল না ৰে কি কথাটা বললে, এর পর ঠিক্‌ মানানসই হয়। একান্ত ক্লান্তভাবে অতৃপ্তি নিয়েই—সে ঘুমিয়ে পড়ল। তার পর দুমাস কেটে গেছে। গ্রীষ্মের তাপদগ্ধ ধরণীবক্ষে শ্রাবণের ধারায় ধারায় নেমে এসেছিল কি এক স্বর্গের স্বযম, শ্বামীতে দিকে দিকে ফুটে উঠেছিল একটা নবীন কান্তি জড়ের মাঝে জাগিয়ে দিচ্ছিল মধুর প্রেমের ম্পন্দন। কিন্তু সে কয়দিন ?—সঙ্গে সঙ্গে বাংলার পাড়াগায়ে ম্যালেরিয়া, ইনফ্লুয়েঞ্জা এসে কৃষকের হৃদয় থেকে তার তৃপ্তিটুকু কেড়ে নিলে, তার সরল স্বাস্থ্য ভেঙ্গে দি’ল । যে প্লাবনে সারা গ্রামটা তোল-পাড় হয়ে উঠেছিল তার একটা ধাক্কা দুলালীরও কুটার-মাঝে এসে আছড়ে পড়ল, নন্দ বুড়া মানুষ তার বাধা দিতে গিয়ে তার ক্ষীণ শক্তি হার মেনেই এল। জরের সঙ্গে জোর করে সে দু’চাব দিন যুঝ লে বটে কিন্তু শত্রুসহযোগী শ্লেষ্মা এসে যখন তার বুকের উপরই চেপে বস্থল তখন না রইল তার উঠবার ক্ষমতা—না রইল কথা কইবার শক্তি। প্রথমটা দুলালী যেন একটু দমে গেল। কিন্তু সেই সাত বছর বয়স হতে সে অহরহ চাবুক মেরে মেরে মনটাকে খাড়া করে রাখতে অভ্যাস করে এসেছে, তাই কোন বিপং-পাতেই একেবারে মুস্ড়ে পড়ত না। নিজের মল-মাকড়ি যা দু’চারখান সোনা-রূপার গহনা ছিল সেকরার কাছে আধা দরে বেচে কিছু অর্থ সংগ্ৰহ করে তাতেই স্বামীর পথ্যের ব্যবস্থ কলে। - প্রবাসী—আষাঢ়, ১৩৩১ [ ২৪শ ভাগ, ১ম খণ্ড ঔষধের জন্য তার বড় বেগ পেতে হয়নি, কেননা জমিদারের ছেলে ঘামিনীবাবু বাড়ীতে বসে বসে হোমিওপ্যাথির খানকয়েক বই বেশ ভাল করেই পড়েছিলেন–চিকিৎসা-শাস্ত্রে জ্ঞানও হয়েছিল তার গভীর। গায়ের লোকের অমুখ-বিমুখে তার জলপড়া নেহাত মন্দ কাজ করত না। যাই হোক তিনিই ছিলেন সারা গ্রামের একমাত্র ধন্বন্তরি ;–সুতরাং এ মহামারীর সময় তার দ্বারে এসেই হত্যা দিয়ে পড়ত দেশের যত গরীব দুঃখী দুলালীও তার করুণা হ’তে বঞ্চিত হয়নি, বরং তার উপর তার অনুকম্পা যেন একটু বেশী মাত্রাতেই বর্ষিত হয়েছিল—ত। সে তার ঘেসেড়ার ঘরণী বলেই হোক আর যাই গেক । ঔষধের তার মূল্য দিতে হ’ত না, অধিকন্তু জমিদারের ছেলে পায়ে হেঁটে দিনে দু-তিন বার মান্দর ভাঙা ঘরে এসে তার ছিন্ন মলিন শয্যা-পাশ্বে বসে রোগের লক্ষণ নিরীক্ষণ করতেন । এতে র্তার মহত্ব, আশ্রিত-বাংসল্যই প্রকাশ পেত সন্দেহ নেই। কিন্তু দুলালীর মনের মধ্যে কেমন একট পট্‌কা লেগেছিল সেই প্রথম ঔষধ আনার দিন থেকেই। উপায়হীনা সে, তাই এ বিপদের দিনে একান্ত অনিচ্ছা সত্ত্বেও তার দান তাকে হাত পেতে নিতেই হচ্ছিল ;– স্বামী যে আজ তার রোগ-শয্যায় ! দিনের পর দিন একভাবেই কেটে চলল। আহার নেই—নিদ্রা নেই—ক্লাস্তি নেই—অলিন্ত নেই, দুলালীযেন তার ব্ৰত-উদঘাপনে দৃঢ়-প্রতিজ্ঞ। সাবিত্রীর মতলুই-লি স্বামীর জন্য কালের সঙ্গেও পাল্লা দিতে প্রস্তুত নারীর শক্তি যে কোথায় তা সে ভাল করেই বুঝিয়েদিলে স্বামীর সেই রোগ-শয্যায় তার জীবন-মরণের সঙ্কট-সময় মঙ্গল দিয়েই সে ঘিরে রেখেছিল পীড়িত স্বামীকে কল্যাণ-হস্তেই সে মুছিয়ে দিত তার যত অকল্যাণ । এমন একনিষ্ঠা সেবা-ভক্তি কি বিফল হ’তে পারে ?— দুলালীর প্রাণের আহবান প্রাণের দেবতার পায় পৌছুল, দিনে দিনে নন্দ রোগ-মুক্তির দিকেই অগ্রসর হতে লাগল। মাসখানেক পরে নন্দ যেদিন সেরে উঠে তার দাওয়ায় এসে বসূল সেদিন সে ঠিক বুঝতে পারলে কতখানি