পাতা:প্রবাসী (চতুর্বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৩৭৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩য় সংখ্যা ] কারিতা ও সৌন্দর্ঘ্যের বিকাশ সাধন হবে আমাদের একান্ত চেষ্টা, যেহেতু প্রচলিত প্রণালীতে কেবলমাত্র মস্তিষ্ক পরিচালনার ফলে দেহের জড়ত্ব বৃদ্ধি পায়, কায়িক ও মানসিক উভয়বিধ চৰ্চার উপাদান সংগ্রহ হবে আমাদের একান্ত যত্ন-ইত্যাদি ।” অন্ত অনেক আন্দোলনের মতন পাশ্চাত্য-শিক্ষাজগতের এই বিদ্রোহদ্যোঠক আন্দোলন আমাদের স্বপ্তনীড়ের শাস্তি ভঙ্গ করেছে। শাস্তিনিকেতন, গুরুকুল প্রভৃতি শিক্ষা-আশ্ৰম, পদ্ধতি-প্রচলিত অকেজো শিক্ষা-পদ্ধতির বিরুদ্ধে এক-একটা শক্তিশালী প্রতিবাদ, দর্পণ VIII কিন্তু সনাতনের মোহ কাটিয়ে শিক্ষক বা শিক্ষার ভারপ্রাপ্ত কর্তৃপক্ষেরা যে অচিরে সাধারণভাবে কোন experiment ("flor ) করতে রাজি আছেন এমন কোন লক্ষণই ত দেখা যায় না। চলার বেগে পায়ের তলায় রাস্তা যে জাগে নব নব শিক্ষা-পদ্ধতির অনুষ্ঠাতাদের বিবরণ-গ্রন্থে তার গৌরবময় ইতিহাস আমাদেরও প্রাণে আশার সঞ্চার করে—আজও যদি অজানার ভয়ে আমরা পথ চলা বন্ধ বলে বসে’ থাকি তবে তার বাড়া লজ্জার কথা আর কিছুই থাকবে না। প্রবোধ চট্টোপাধ্যায় ༥༤༥།། দপণ (i.e0 Lexpos) ১।পত্র ভাই “আনাই”, তোমার ইচ্ছে, আমি তোমাকে পত্র লিখি—আমি গরীব বেচারী অন্ধ : যে অন্ধকারের মধ্যে হাংড়িয়ে হাংড়িয়ে চলে, তাকে কিনা তুমি লিখতে বল্‌ছ। আমার অন্ধকারে লেখা বিষাদময় পত্র পেতে তোমার কি ভয় হবে না ? অষ্টপ্রহর অন্ধের মনে যে-সব বিষঃ চিন্তা উদয় হয়, সেই সব চিস্তা কি তোমার ভাল লাগবে ? ভাই আনাই, তুমি স্বর্থী ; তুমি দেখতে পাও। দেখতে পাওয়া ! ই। দেখতে পাওরা—নীল আকাশ, স্বৰ্য্য, আর সকলরকম রং দেখতে পাওয়া—সে কি আনন্দ ] সত্য, এক সময় আমি এই অধিকার উপভোগ করেছিলাম ; আমার যখন পুরো দশ বৎসরও বয়স হয়নি তখন আমি অন্ধ হই। ১৫ বৎসর থেকে এখন আমার চারিধারে সব জিনিসই রাত্রির মতে কালে দেখছি। প্রকৃতির আশ্চৰ্য্য শোভা-সৌন্দৰ্য্য আমার মনে আনতে কত চেষ্টা করি, কিন্তু কিছুতেই মনে আনতে পারিনে। আমি তার সমস্ত রং ভুলে গিয়েছি। আমি গোলাপের গন্ধ আস্ত্রাণ করতে পারি, হাত দিয়ে ছয়ে তার গঠনটা অনুমান করতে পারি ; কিন্তু তার গর্বের জিনিস রংটা—যার সঙ্গে প্রায়ই মেয়েদের রঙের তুলনা দেওয়া হয়—সেই রং আমি ভুলে গিয়েছি—কিংবা আমি তার বর্ণনা করতে পারিনে। কথন-কথন এই স্থল দেহ-আবরণের নীচে অদ্ভূতরকমের কিরণ আনাগোন। করে । ডাক্তাররা বলেন এটা হচ্ছে রক্তের গতি , এর থেকে আরোগ্য-লাভের একটা আশ্বাস পাওয়া যেতে পারে। বুখ। আশা । যে আলোকচ্ছটায় পৃথিবী ভূষিত, তা যখন আমি ১৫ বৎসর থেকে হারিয়েছি, সে আর কখনো পাওয়া যাবে না-খদি কখনো পাওয়া যায়, সে স্বর্গে। সেদিন আমার একটা অপূর্ব অনুভূতি হচ্ছিল। আমার ঘরে হাংড়াতে-হাংড়াতে, আমার হাত পড়ল একটা জিনিসের উপর-ওs I তুমি কিছুষ্ট আন্দাজ করতে পারবে না –একটা দর্পণের উপর । আমি দর্পণটার সাম্নে বস্লাম, এবং একজন “ভাবুকের" মতো আমার চুলটা গুছিয়ে ঠিকৃষ্ঠা করলাম। ও । আমি যদি আপনাকে আপনি দেখতে পেতাম ! আমি স্বী ব’লে যদি মানতে পারতাম—আমার চামড়াট। যেমন নরম তেমূনি সাদা কি ন!— দীর্ঘ পঙ্কবিশিষ্ট আমার চোখ দুটি সুন্দর কি না. যদি জানতে পাবৃতাম, তা হ’লে কত খুলীই হতাম !--ইস্কুলে এর প্রায়ই আমাকে বলুত, ছোট মেয়ের অনেকক্ষণ ধরে আয়নায় মুখ দেখলে সেই আয়নায় সয়তান আসে। আমি এই পার্যস্ত বলুতে পারি, সয়তান আমার আয়নায় এলে খুব নাকাল হ’ত— কেননা, আমি ত তাকে দেথতে পেতাম না ! তোমার পত্ৰখানি এইমাত্র ওরা আমাকে পড়িয়ে শোনালে, তাতে তুমি জিজ্ঞাসা করেছ, একজন কুঠা-ওয়াল দেউলে হওয়াতে আমার বাপ-মা সৰ্ব্বস্বাস্ত হয়েছেন একথা সত্য কি না। আমি ও এ-কথা কিছুই শুনিনি। না, তারা ধনী লোক। সমস্ত বিলাসের জিনিস উারা আমাকে জুগিয়ে থাকেন। যেখানেই আমার হাত পড়ে, সেখানেই আমার হাত রেশম ও মখমল স্পর্শ করে, ফুল ও বহুমূল্য কাপড় স্পর্শ করে। আমাদের থাবার টেবিলে প্রচুর খাদ্য থাকে এবং প্রতিদিন আমার রসনার তৃপ্তির জন্য কত মুখরোচক জিনিস আনা হয়। তাই বল্‌ছি, আনাই, আমার পরমায়ীয়ের বেশ লক্ষীমন্ত । ২পত্র আনাই, তোমার মাথায় আসবে না, আমি তোমাকে কি বলতে যাচ্চি। ও । তা শুনলে তুমি হেসে গড়িয়ে পড়বে। তুমি মনে করবে, আমার দৃষ্টির সঙ্গে আমার বুদ্ধিও লোপ পেয়েছে। আমার এক প্রণয়ী জুটেছে। ই ভাই ; আমি ত এই দৃষ্টহীন অন্ধ বালিকা, আমার আবার