পাতা:প্রবাসী (চতুর্বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৩৮০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩য় সংখ্যা ] মর্গ্যানের অনুসন্ধানগুলাকে ধনবিজ্ঞানের তরফ হইতে ব্যাখ্যা করিয়া প্রচার করিতে চাহিয়াছিলেন একজন যে-সে লোক নন। তিনি স্বর্গগত মহাপুরুষ কালর্স মাক্স। ইতিহাসের আর্থিক ব্যাখ্যা মার্কসের আবিষ্কৃত বৈজ্ঞানিক আলোচনা-প্রণালী। এই ব্যাখ্যা-প্রণালী ফুটাইয়া তুলিতে আমিও অনেক কাল ধরিয়া তাঁহাকে যৎকিঞ্চিং সাহায্য করিয়াছি। প্রায় চল্লিশ বৎসর পূৰ্ব্বে এই প্রণালী দার্শনিক সাহিত্যে প্রথম প্রবর্তিত হয়। “এক্ষণে মর্গ্যান আমেরিকার আদিমবাসীদিগের জীবন আলোচনা করিতে গিয়া সেই প্রণালীই পুনরায় আবিষ্কার করিয়াছেন । ‘বাৰ্বার’ সভ্যতার সঙ্গে উৎকর্যের যুগের তুলনায় মর্গ্যান প্রায় মার্কসের সিদ্ধান্তেই আসিয়া পৌঁছিয়াছেন । এই কারণেই মার্ক মর্গ্যানের তথ্যগুলা গ্রহণ করিয়া নিজ দর্শনকে পুষ্ট করিয়া তুলিতে চাহিয়াছিলেন। _ “আমার বন্ধুবর নিজের ইচ্ছা কার্য্যে পরিণত করিয়া যাইতে পারেন নাই। কিন্তু তাহার ইচ্ছান্তরূপ কাজ করিয়া আমি একটা যথাসাধ্য ঠাই পূরণেব ব্যবস্থা করিলাম। তবে মার্কস মর্গ্যানের কথা লইয়া যেখানে যেখানে টিপ্পনী বা টীকা করিয়া গিয়াছেন সেগুলা পুরাপুরি ব্যবহার করিতে ছাড়ি নাই । “কাজেই বর্তমান গ্রন্থও মার্কস এবং এঙ্গেলস দুষ্ট জনেরই সন্তান এইরূপ ধরিয়া না লইলে গ্রন্থের জন্মকথা পরিষ্কার হইবে না ।” 鶴 ( 8 ) এঙ্গেল্স্ তাহার রচনাকে “পরিবার, নিজস্ব বা ব্যক্তিগত সম্পত্তি এবং রাষ্ট্রের উৎপত্তি” নামে প্রচারিত করিয়াছেন। কিন্তু বাস্তবিক পক্ষে এই গ্রন্থে পৃথক বিবৃত হইয়াছে পরিবার বা বিবাহ-পদ্ধতি ৪ যৌন সম্বন্ধের ইতিহাস । এই গ্রন্থের দ্বিতীয় আলোচ্য বিষয় গেলস বা গোষ্ঠী-প্রথার সমাজ-শাসন। তাহার জন্য আমেরিকার ইণ্ডিয়ান ( এবং বিশেষরূপে ইরোকোয় ) জাতির প্রতিষ্ঠানগুলা আলোচনায় ঠাই পাইয়াছে। এঙ্গেলসের তৃতীয় কথা গোষ্ঠীর ভাঙন বা রাষ্ট্রের জন্ম । ইণ্ডিয়ান সমাজের লোকের গোষ্ঠী-কেন্দ্র ছাড়াইয়৷ কার্ল মার্কস ও ফ্রিডরিশ এঙ্গেলস্ vరి సి) উঠিতে পারে নাই। তাহাদের সমাজে রাষ্ট্রের চিত্ত্ব পাওয়া যায় না । বাষ্ট্রের জন্ম-কথা চুড়িয়া বাহির করিবার জন্য প্রাচীন ইয়োরোপের গ্রীক, রোমান কেন্টিক এবং জাৰ্ম্মান জাতির স্মৃতিশাস্ত্র ও সংহিতাগুলা আলোচনা করা হইয়াছে। আলোচ্য বিষয়গুলার তালিকা হইতেই বুঝা যাইতেছে যে, নিজস্ব বা ব্যক্তিগত সম্পত্তি এই গ্রন্থের মুখ্য কথা নয়। মূখ্য কথ। পরিবার, গোষ্ঠী এবং রাষ্ট্র এই তিন জীবনকেন্দ্রের ইতিহাস । এই কারণে বাংলা ভাষায় এঙ্গেলসের রচনা “পরিবার, গোষ্ঠী ৪ রাষ্ট্রের জন্ম-কথা” নামে প্রচারিত হইল । নিজস্ব বা ব্যক্তিগত সম্পত্তির উৎপত্তি গ্রন্থের মূখ্য কথা নয় বটে, কিন্তু এই বিষয়ই এঙ্গেলসের “প্রাণের কথা” । সেই প্রাণের কথাটা গ্রন্থের প্রত্যেক অধ্যায়ের যেখানে সেখানে পাঠকের কাণ স্পর্শ করে । বস্তুতঃ ধনদৌলতের আকার-প্রকার মানব-জাতির শৈশব-কালে কথন কেন ও কিরূপ ভাবে বদলাইয়াছে তাহার আলোচনা করাই এঙ্গেলসের উদ্দেশ্য ছিল। আর্থিক ইতিহাসের কোন স্তরে ব্যক্তিগত ধন-দৌলতের স্বষ্টি হইয়াছে, সে-কথা এই গ্রন্থে অতি উজ্জল অক্ষরে বিবৃত হইয়াছে। খাটি ধনবিজ্ঞান-বিদ্যা বলিলে যে সাহিত্য-নজরে আসে, এই গ্রন্থকে সেই সাহিত্যের অন্তর্গত করা চলিবে না। এই রচনা নৃতত্ত্ববিদ্যার মহলেই ঠাই পাইবার যোগ্য । মৃতত্ত্বের তথ্যগুলার উপরে আর্ণিক ব্যাখ্যা চালাইলে যে-তত্ত্ব প্রতিষ্ঠিত হইবার কথা এঙ্গেলস এখানে সেই তত্বের প্রচারক । সমাজ-দর্শন, সভ্যতার ইতিহাস ইত্যাদি বস্তু প্রাচীন মানবের জীবন-কথায় বা পুরাকাহিনীতে যতখানি পাওয়া যাইতে পারে, সেই দর্শন ও সেই ইতিহাসই বৰ্ত্তমান কেতাবের দান । ( 8 ) নৃতত্ত্ব দুই শাখায় বিভক্ত —শারীরিক ও সামাজিক । এক শাখায় পণ্ডিতেরা ভিন্ন ভিন্ন জাতির শারীরিক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ মাপিয়া-জুকিয়া তুলনা করিয়া মামুষের