পাতা:প্রবাসী (চতুর্বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৩৯২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩য় সংখ্যা ] . খাম্বাজের একটা টান দিয়ে ৰাণী বাজ ছিল, তখন আমার মনে একথাটি উদয় হ’ল যে—জামি যেসব বিষয় নিয়ে তর্ক করছি,বোঝাতে চেষ্টা করছি, অনেক করে চেষ্টা করে নিজের সঙ্গে লড়াই করে বেন এই যে বলবার চেষ্টা করছি, সে-কথাটি সহজেই বলছে এই বাণী. যদি আমার সাধ্য থাকৃত তেমন করে বলবার, তা হলে আমার কথাটি সরল হ’ত। এই যে উৎসব উপলক্ষে বাণী বাজছে খাম্বাজ রাগিণীর ভিতরকার করুণ টানগুলি সমস্ত অপরাহু আকাশকে একটা বিষাদময় আনলে নিমগ্ন করেছে, সেটা কি, তার কাজ কি ? কেন, উৎসবে এই ৰাণী এমন করে কি বলছে, আরো কি কথা বলতে চাচ্ছে ? আমার যেটা মনে হ’ল এই যে টুমি যাতায়াত করছে, কলিকাতা সহরে যে কেন বেচা চলছে, চতুর্দিকে প্রতাহের যেসমস্ত ধূলিজাল উঠছে, জীবনযাত্রার জন্ত প্রত্যেকে যে আনাগোনা করছে সমস্ত গলিতে রাস্তা দিয়ে বঁাশী এইসব চাপা দিতে চাচ্ছে, এই যে বাজনা বাজছে, বাণী সমস্তটাকে আচ্ছন্ন করে দিতে চায় । যেন টুমি চলছে না, যেন সমস্ত কেনাবেচা হচ্ছে না, যেন এর প্রয়োজন নেই, এসমস্ত ছায়া, একথা স্বন্দরভাবে বলছে ঐ রাগিণী । আমি বলছি চাপ দিচ্ছে, তা না বলে’ বলা উচিত ছিল কি ? না এই যে পর্দা, এই পর্দা তুলে দিচ্ছে, এই ট্রাম চলাচল এই প্রতিদিনের তুচ্ছতা এই যে অনিত্য চলাচল হচ্ছে এটা একটা পর্দার মতো আচ্ছন্ন করেছে নিতাকালের স্বরূপকে । এই রাগিণী সে পর্দা তুলে দিয়েছে এটা বলবার জঙ্ক যে-আজকার দিনে এই উৎসবের যারা প্রধান নায়ক-নায়িকা, বর-বধু তাদের সেই লোকে নিয়ে যেতে চায় যে লোক হচ্ছে রসের নিত্যলোক, প্রতিদিনের তুচ্ছতার ভিতর তার অতি অকিঞ্চিৎকর, অখ্যাতনামা কিন্তু তাদের অস্তরে যদি সুখের বেদন বেজে থাকে, কোন একটা পরম আশা প্রত্যাশায় তারা যদি পথ চেয়ে থাকে, এ যদি হয় তাদের ভিতর, তবে সে রসের উপলব্ধিতে তাঁরা এমন একটা স্থানে অধিকার পায় যেখানে নিত্যকালের সমস্ত বরবধুর মিলিত হচ্ছে, মিলিত হবার ইচ্ছা করছে কোন অনাদিকাল হ’তে কে জানে, যেখানে এই প্রেমের বেদনা, যেখানে এই আনন্দের প্রকাশ নানা উপলক্ষ্য অবলম্বন করে আন্দোলিত হিল্লোলিত হচ্ছে সে রসের নিত্য লোকে তারা সীমান্ত নয় অকিঞ্চিৎকর নয় । তথ্যের সঙ্গে সত্যের প্রভেদ আছে, তথ্য হিসাবে তাঁরা অতি সামান্ত, তাদের মূল্য অল্প, আমি জানিনে তারা কে, কিন্তু অধিকাংশ স্থলে একথা বলা যেতে পারে তথ্য-হিসাবে এই বিবাহ প্রভৃতি উৎসবে যারা প্রধান নায়ক-নায়িক তারা বড় কেহ নয়। ইতিহাসে তাদের কোন নাম থাকৃবে না এবং আজকার দিনে তাদের আসন অত্যন্ত সংকীর্ণ। কিন্তু বাণী বলছে—ভুলে যাও। এ মিথ্যা কথা ভুলে যাও–এ মারা ভুলে যাও যে তুমি কেহ নও। বাইরের বিশ্বের যে বিপুল ব্যাপার এ বড় নয়, আজ আছে কাল না থাকৃতে পারে, এসমস্ত মেঘের মতো ছায়ার মতো চলে যেতে পারে, কিন্তু বেদনা-সরোবরে যে চিত্তা-কমল বিকশিত হয়েছে সে রসের অসীম সমুদ্র সেই অকাল সমুদ্র চিরন্তনের বাণীতে মুখরিত হচ্ছে, সেই সমুজের মধ্যে যে-সব স্থাৎপদ্ম ফুটছে তার পিছনে সত্যের স্বৰ্য্যালোক আপনার আশীৰ্ব্বাদ বর্ষণ করছে, এমন কেহ বরবধু নেই পৃথিবীতে যার আসন অতীত কালের প্রেমিক-প্রেমিকার চেয়ে অল্প । জানি তথ্যের কারাগার থেকে, সংকীর্ণতা থেকে, মানুষ যেমন রসের অসীমতার ভিতর প্রবেশ করে, অম্নি তার মূল্যের কত বড় পরিবর্তন হয়ে যায় তা কি আমরা দেখিনে ? কত নাটক রচনা হয়েছে, সাহিত্যে, কাব্যে তাদের নায়ক-নায়িকাদের যে মূল্য সে মূল্য কিসের ? তারা কি ধনী বলে মূল্যবান ? তার কি মানী বলে মুল্যবান ? তারা কি রাষ্ট্রীয়-সংগ্রামে অসাধ্য সাধন করেছে বলে মূল্যবান ? রোমিও ওজুলিয়েটে এইসমস্ত নায়ক-নায়িকাদের ইতিহাস রচনা হয়েছে, এর ভিতরকার মূল্য কোন খানে ? তার তথ্যের কষ্টিপাথর—সাহিত্য vరి8సి কোন মূল্যই নেই। এ-কথা কোন পাঠক জিজ্ঞাসা করবেন না—তার হিসাবের খাতায় তার দেনা-পাওনা কিরকম, তার Bunkএ কতদিনের জমা আছে, Credit আছে, তার অসাধারণ বিদ্যাবুদ্ধি আছে কি নেই, একথা কেহ জিজ্ঞাসা করে না একমুহূৰ্ত্তে তাকে রস-সমুত্রের অনিৰ্ব্বচনীয় মহিমায় দেখতে পাই। সমস্ত সাহিত্যের ভিতর, শিল্পকলার ভিতর, সমস্ত প্রকাশের ভিতর আমরা যা দেখতে পাচ্ছি তাকে কি দেখছি ? তাকে বন্ধন-মুক্ত করে দেখছি, তথ্যের বন্ধন থেকে তাকে মুক্ত করে তার ভিতরকার যে অসীম মূল্য, রসের মূল্য এক মুহূৰ্ত্তে প্রকাশিত হচ্ছে সেটা দেখবার জন্ত কবির ও অন্ত গুণীদের প্রয়োজন, সেইজস্ব কেবলমাত্র মামুষের দিক থেকে নয়, এই প্রকৃতির মধ্যে যে-সমস্ত জিনিষ নানা-রকমে প্রকাশিত হয় তাকে প্রাত্যহিক ব্যাপারের মধ্য দিয়ে নিজের প্রয়োজনের সংকীর্ণ সীমার মধ্য দিয়ে যখন দেখি, তখন তার এক মূল্য, যখন তাকে কাব্যের ভিতর দিয়ে চিত্তের ভিতর দিয়ে দেখি, সম্পূর্ণ অন্ত মূল্য দেখতে পাই। কলিকাতাতে আমার এককাঠা জমির কত দাম জানি নে, কোথাও ৪৫.১° হাজার হতে পারে। সে দাম একেবারে তুচ্ছ, যেমূনি রসলোকে আমরা প্রবেশ করি, যেমূনি সেখানকার মূল্যের আদর্শ মনের ভিতর নিই ; অমুনি অন্ত যে মূল্য, বৈষয়িক মূল্য, তথ্যগত মূল্য তা দূর হয়ে যায়। এ কি বন্ধন-মুক্তি নয় ? এ বন্ধনের মধ্যে মানুষ কি বন্ধ হয় না ? এই তথ্যকারাগারের বিষম দেীরাত্মোর মধ্যে মানুষ কি পীড়িত হয় না ? এই তথ্য-কারাগার থেকে মুক্তি দেবার জন্ত মানুষ আপনাকে আপনি স্মরণ করিয়ে দেবার জন্ত মাঝে মাঝে গান গেয়েছে, চিত্র একেছে, বলেছে—ঐ রসের লোক আনন্দের লোক, তুমিই সে আনন্দের প্রকাশ। এই উৎসবের বঁাশী বলেছে পৃথিবীতে গুণী মানী অনেক আছে। জগতের ভিতর যাদের জঙ্ক বঁাশী বাজছে রসমাধুর্য্যে আজকার দিনে তার কারো চেয়ে কম নয়। আজকার দিনে এক হিসাবে বলতে হবে যে তাদের চিত্ত-কমলে রসের আলোক যদি বিকশিত হয়ে থাকে তবে তারা অনেক অরসিক ধনী,মানী, গুণী জ্ঞানীর চেয়ে বড় সত্যকে পেয়েছে একথা তাদের বুঝিয়ে দেবার জন্তে সেই অসীম রসের মূল্য দেবার জন্ত বাঁশী বাজছে । আমি কি বোঝাব আপনাদের ? কাকে বলে সাহিত্য, কাকে বলে চিত্রকলা, এসকল বিশ্লেষণ করে করে কি বোঝাব ? এক মুহূৰ্ত্তে বোঝা যায়, যেমন এক মুহূর্তে আলো জ্বল বামাত্র অন্ধকার সরে যায় তেমূনি করে” বোঝা যায়। ক্রমাগত ধ্বনিত হচ্ছে এই বাণী । আকাশের নীলিমা থেকে, ধরণীর নীল হ্যামলিকা থেকে, মানুষের অস্তরে যে-রসের বেদন আছে তার থেকে এই বাণী নিয়ত আমাদের আঘাত করছে, বলছে— এই আনন্দধামের মাঝখানে তোমাদের প্রত্যেকের নিমন্ত্রণ অাছে এস, বড় বজ্যের ভিতরে প্রত্যেকের নিমন্ত্রণ আছে এস। একথা বলছে চিরদিনের বিরহের মরমিয় কবি। সকাল বেল প্রভাত-কিরণের দুত্ত এসে ধাক্কা দিলে—কি ? না, নিমন্ত্রণ আছে ; দুপুর বেলা সে দূত এসে ধাক্কা দিলে, নিমন্ত্রণ আছে ; সন্ধ্যার রক্তিম ছটায় অাশা ও উৎসাহ নিয়ে সে দূত আবার বললে—নিমন্ত্রণ আছে, কোথায় তোমার নিমন্ত্রণ-লিপি ? আকাশের এক প্রাস্ত থেকে অপর প্রাস্তু পৰ্য্যস্ত সমস্ত তারা উজ্জ্বল অক্ষরে জেগে উঠে সে লিপি নিয়ে এল। যজ্ঞের অধীশ্বর সে দূতলিপি নিয়ে এসে বললে—তোমার নিমন্ত্রণ। এই দূত প্রতিদিনের সকাল-বেলার অরুণালোকের ভিতর সন্ধ্যাবেলার স্বৰ্য্যাস্তের ছটায় এই বাণী প্রচার করছে—অসীম তুমি, তোমাকে ডাকৃছি, এত সাজ-সজ্জা এই দূতের, তার তকমা জ্বলজ্বল করছে, এত ফুলের মালা পরে এসেছে, এভ cजोब्रप्वद्र भूकूछे ऊांब्र भांथांब्र, कांद्र छना ? चानांब्र छना, श्रांभि ब्राछ नई, জ্ঞানী-গুণী নই, আমি কেহ নই, আমার জন্য সমস্ত আকাশের রং নীল করে সমস্ত বসুধার অঞ্চল হামল করে সমস্ত নক্ষত্রেয় জ্যোত্তি স্নিগ্ধ করে সে বাণী মুখরিত হচ্ছে। সে বাণীর সে নিয়ন্ত্রণের উত্তর লিখতে