পাতা:প্রবাসী (চতুর্বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৪০৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

; ○Wり নিদ্রাদেবীর মুখস্পর্শ ফিরিয়া পাইবার ব্যর্থ (5೫೩ ক্লান্ত x হইয় রোদ না উঠিতেই তাহাকে উঠিয়া পড়িতে হইত। পাশের বাড়ীতে তখন কলের জল, উনানের ধোয়, বাসনের ঝঙ্কার,—সবই গৃহস্থের বৃহৎ পরিবারের সঙ্গে সঙ্গে সজীব ও সজাগ হইয়া উঠিয়াছে। দেয়াল ও রেলিঙের গায়ে বিলম্বিত ভিজা কাপড়গুলি উড়িয়া উড়িয়া ইটেকাঠে গড়া পুরাতন বাড়ীখানাকেও ধেন চঞ্চল করিয়া তুলিয়াছে। হরিহর হাই তুলিয়া বারান্দায় বাহির হইয়া আসিয়া দেখিত সাম্নের লাল বাড়ীখন নিত্যকার মত আজও তেমনি নি:শব্দ, তেমনি নিঝুম । না জানি কোন ংসারবিমুখ তপস্বীর এ আবাস ? ভৃত্য আসিয়া চায়ের পেয়ালা দিয়া যাইত ; হরিহর চটের চেয়ারে বসিয়া দেখিত লাল বাড়ীর দরজায় বেসাতি লইয়া ভৃত্য কড়া নাড়া দিল ; মুহূৰ্ত্তে ভিতর হইতে কবাট খুলিয়া যাইত, আবার নিমিষেই বন্ধ হইয়া যাইত । ভিখারী দরজায় আসিয়া হাকিত, “জয় হোক মা, রাজরাণী হও”, অম্নি অবগুষ্ঠিতা দাসী আসিয়৷ তাহার অঞ্চলে ভিক্ষ ঢালিয়া দিয়া রুদ্ধ দরজার অন্তরালে অন্তৰ্হিত হইত। প্রচণ্ড গ্রীষ্মের তাপে কাতর কাক পার্থী যখন ছাদের আলিসায় বসিয়৷ ধুকিত, তখন দেখা যাইত কবাটের আড়াল হইতে দ্বাসী হাত বাড়াইয়া জানালায় ঝোলানো টিনের কোঁটার জল ঢালিয়া দিয়া সইতেছে ; পথের ধারের রকে ক্ষুধাৰ্ত্ত কুকুর জিব মেলিয়। হাপাইত, দাসী ক্ষণিকের জন্য অর্গল খুলিয়া তাহাকেও মাথা ভাত ঢালিয়া দিয়' যাইতে ভুলিত না । তাহার পর দীর্ঘ দিন বহিয়৷ যাইত ; জগৎসংসারের গতির সঙ্গে বন্ধ দরজার আড়াল তুলিয়া লাল বাড়ীখানা যেন আপনাকে আলগা করিয়া রাখিত। আশে পাশের বাড়ীর বাবুরা কেহ আপিষে যাইত, কেহ দোকান হইতে স্নান-আহারের আশায় বাড়ী ফিরিয়া আসিত, ছেলেরা ইস্কলে ছুটিত, ছোট মেয়ের সকালের খয়রাতী পাঠশালার বিদ্যাচর্চা শেয করিয়া কেহ ফুটপাথের কলে জল ভরিতে, কেতু বেণের দোকানে মশলা কিনিতে কেহ বা পড়শীর সঙ্গে পুতুল খেলিতে গলা প্রবাসী—আষাঢ়, ১৩৩১ [ ২৪শ ভাগ, ১ম খণ্ড ধরাধরি করিয়া অনবরত যাওয়া আসা করিত ; পূজারী ব্রাহ্মণ গৃহদেবতার পূজা সারিয়া গামছায় নৈবেদ্য বাধিয়া বাড়ী ফিরিত ; এমনি শতেক যাওয়া শতেক আসার ফাকে দরজার হুড়ক কেবলি সশব্দে উঠিত পড়িত, ঘরের সঙ্গে বাহিরের যোগের কখন যে শেষ হইত বলা যায় না। অন্ধকার রাত্রেও কড়ী-নাড়া, হুড়কা-পড়া আলো-দেখানোর বিরাম ছিল না ; বাবুর কেহ তাস থেলিয়া রাত বারোটায় বাড়ী ফিরিত, কেহ থিয়েটার দেখিয়া ফিরিয়া পাড়া জাগাইয়া স্ত্রীকন্যার ঘুম ভাঙাইত। কিন্তু লাল বাড়ীখান। ধেমনকে তেমনি আপনাকে লইয়া আপনি মশগুল হইয় পড়িয়া থাকিত । বন্ধুগণের আনাগোনা সে বাড়ীতে হরিহরের চোথে কোনোদিন পড়ে নাই ; হাসিকান্নার কোনে ঝঙ্কার ও সেখানে ধ্বনিত হইতে শোনা যায় নাই ; শিশুর চঞ্চল চরণের চাপল্যও কোথাও দেখা যায় নাই। অথচ গৃহের অধিকারী যে ধ্যানমগ্ন তপস্বী ছিলেন এমন কথাও ত বেশী দিন বলা গেল না। অনিবায্য কারণে যখন অবগুষ্ঠিত দাসীকে চকিতের মত কবাট খুলিতে দেখা যাইত, তখন হঠাৎ একদিন চোথে পড়িল মৰ্ম্মরমণ্ডিত গৃহতলে মেহগনীর পালঙ্কে বকের পালকের মত শুভ্র সুন্দর শয্যা, দেয়ালের গা ঘেসিয়া চার হাত উচু আয়না, আলনার কোলে রংদার শাড়ীর চমক । কিন্তু তার বেশী আর দৃষ্টি যাইত না । শুধু গৃহরুদ্ধ বায়ু মুক্তির পথে একরাশ বকুলবেলার গন্ধ হরিহরের ঔষধের আলমারীর গায়ে দীর্ঘশ্বাসের মত ছাড়িয়া দিয়া চলিয়া ধাইত । কোন স্বন্দরীর এ অঙ্গসৌরভ, কাহার কেশবাসের এ অস্পষ্ট পরিচয়, হরিহর ভাবিয়া পাইত না । না জানি কোন স্বদূর অন্তঃপুর হইতে কোন অঙ্গরাকে হরণ করিয়া আনিয়া কে এই প্রাসাদকারাগারে বন্দী করিয়া রাখিয়াছে ? পলকের জন্য তাহার বিষাদমাথা মুখখানি দেখিয়া লইতে মন কত বার চঞ্চল হইয়া উঠিত । ইচ্ছ। করিত ইউরোপীয় মধ্যযুগের বীরদের মত প্রাণ তুচ্ছ করিয়া এই বন্দিনীর বন্ধন মোচন করিয়া অমর প্রেম ও প্রতিষ্ঠা অর্জন করিয়া লয় দুপুরের ঝাঝা রৌদ্রে যখন পথ নির্জন হইয়া আসিত, পথিকের পদ-শব্দ বিরল হইয়া আসিত, পাশের বাড়ীর