পাতা:প্রবাসী (চতুর্বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৬৬৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Woo 8 এমুনি করে’ই দিন কাটুতে লাগল। কিন্তু মুকুলিকা দেবীর সঙ্গে পরিচিত হবার কোন পন্থাই আবিষ্কার করতে পারুলুম না। পরের মাসের “উৎসব ও উপাসনা” এলে দেখলুম যে আমার প্রবন্ধ থেকে মুকুলিকা দেবীর কবিতা বিচ্ছিন্ন হয়েছে। বুঝলুম সম্পাদকের সঙ্গে আমার কথোপকথনের ফল। কিন্তু এই ছোট ব্যাপারটা আমার অন্তরকে একটা মস্ত দোলা দিয়ে গেল । মনে হ’ল যেন কতদিনকার একটি অত্যস্ত পরিচিত বান্ধব, যিনি আমার অন্তরের পাশে-পাশে চির-জাগ্রত ছিলেন তিনি হঠাৎ আমার বেদন-স্বত্র থেকে বিচ্ছিন্ন হ’য়ে কোথায় স্বৰূরে ছিটকে পড়লেন। র্যার অস্তিত্বের স্পর্শ আমার মনোমন্দিরে আশা-আকাঙ্ক্ষা দিয়ে ভরে’ রাখত সে-অস্তিত্ব যেন দূরে সরে গিয়ে আমার মনেমন্দির একেবারে শূন্ত করে দিয়ে গেল। মানুষের জীবন পূর্ণ হ’য়ে থাকে স্থখ-দুঃখ দিয়ে। এই স্থখ-দুঃখের উপাদান কোথায় চলে গিয়ে যেন আমার জীবনকে মুহূৰ্ত্তে ভারাক্রাস্ত করে তুললে। আর এ কি কেবল আমার একলার জীবনকেই শূন্ত করে তুললে ? মুকুলিকা দেবীর কি এতে কিছুই হয়নি? একদিক্কার দুঃখের ঢেউ কি অন্যদিকে কোনই অনুরূপ তরঙ্গের দোলা দিয়ে যায় না ? তবে মুকুলিকা দেবীর কবিতায় আজ এম্বর ফুটুল কেন ? সহে না বঁধু সহে না কি ? তৃষিত আঁখির আকুল চাওয়া, বকুল বনের ব্যাকুল হাওয়া, * আজি এ ঘন বসন্তেতে দহে না প্রাণ দহে না কি ? সহে না বঁধু সহে না কি ? সহে না বঁধু সহে না জার। আজি যে গত সরম-ভার। স্বগত আজি বিলাপ শুধু ঘিরিয়া আছে জীবন ছার। আমার মনে হ’ল—যে আমার মৰ্ম্ম-দুয়ারের হতাশার দীর্ঘনিশ্বাস মুকুলিকা দেবীর হৃদয়-বীণায় ঝঙ্কারিত হয়ে উঠেছে, যেন তার চোখের দ্ব-ফোটা গড়িয়ে-পড়া নীরব প্রবাসী—ভাদ্র, ১৩৩১ [ ২৪শ ভাগ,১ম খণ্ড অশ্রীর সঙ্গে । একখানি কাব্য লিখিত হতে হতে অৰ্দ্ধ পথে যেন লেখনী থেমে গেল, এ-যেন তারি বেদন – একটা গান গীত হ’তে হ’তে যেন অন্তরায় এসে স্তব্ধ হ’য়ে গেল, এ যেন তারি আক্ষেপ-চিত্রের রেখাই টান৷ হ’য়ে থাকুল তাতে যেন বর্ণ-সংযোজনার আর সময় হ’য়ে উঠল না, এ-যেন তারি একটা নিবিড় ক্ৰন্দন। তাই বুঝি মুকুলিকা দেবীর এই কবিতাটিতে তারষ্ট আভাস ছত্ৰেছত্রে জেগে উঠেছে। বহে না বঁধু বহে না কি ? নীরব দুটি আঁখির পরে যে নীরটুকু গুমরি মপ্লে’ সে নীরটুকু উথলি দুখ মুছিয়া নিতে চাহে না কি ? বহে না বঁধু বহে না কি ? বহে না বঁধু বহে না আর । নয়নে নাহি নয়নাসার স্বগত আজি বিপুল স্মৃতি আনিছে শুধু দুখের ভার। মুকুলিকা দেবীর এই কবিতার সঙ্গে আমার তখনকার মানসিক অবস্থার এমন একটা মিল ছিল যে, তা সামাজিক বিধি-বন্ধন একেবারে মিথ্যা করে তুললে । সেদিন মনে হ’ল যে মানুষ বৎসরের তিন শ’ চৌষট্টি দিন সমাজের বিধি-ব্যবস্থা মেনে চলুক, কিন্তু বাকী একটা দিন যদি সে আপনার মনের স্বাধীনতা ঘোষণা না করে তবে সমাজের প্রাণরক্ষাই দুরূহ হ’য়ে উঠবে—মনে হ’ল যে সমাজের হাজার-করা ন’ শ' নিরেনবই জন সামাজিক আইনকামুনকে পূজা করে চলুক কিন্তু বাকী একজন যদি আপনার অস্তরের সত্যকে পূজা করবার সাহস না করে তবে সমাজ সেই বস্তু থেকেই বঞ্চিত থাকৃবে যে-বস্তু বন কেটে নগর বসিয়েছে, উষর ক্ষেত্রে ফসল ফলিয়েছে, প্রাচীর ভেঙে আলো-বাতাসের ব্যবস্থা করেছে—এই বস্তুই না মূককে মুখর করেছে, পদুকে উল্লঙ্ঘনের শক্তি দিয়েছে, কাপুরুষকে দুঃসাহসিক করে তুলেছে। একজনের এই অস্তর-পূজাই সমাজকে নব-নব পথে নব-নব আশীৰ্ব্বাদ লাভের জন্ত সচেতন ক’রে তুলেছে। সে যা