পাতা:প্রবাসী (চতুর্বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৭৫৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বারাণসীর প্রাচীন পরিচয় শ্রীরাধাকুমুদ মুখোপাধ্যায় আমাদের জাতীয় জীবনের প্রথম উন্মেষ সপ্তসিন্ধুপ্রদেশে, তৎপরে ব্রহ্মধি দেশে, মধাদেশে ও আর্য্যাবৰ্বে ; কিন্তু উহার পূর্ণ প্রকাশ হইল কুরু-পঞ্চাল প্রদেশে, কৌশলে, কাশীক্ষেত্রে এবং বিদেহ রাজ্যে । বারাণসীর আমার প্রথম পরিচয় পাই অথৰ্ব্ববেদে ( ৮-৭-১ ) সেইথনে বরণবতী নদীর নাম উল্লেখ আছে । সেই নদী অtঞ্জও বহতা । তাহার উপকূলে আজও বারাণসী নগরী বিদ্যমান। তৎপরে ব্রাহ্মণ ও উপনিষদের যুগে, আনুমানিক খৃঃ পুঃ ১ • • • অব্দে, কাশী ভারতের মধ্যে একটি প্রধান সভ্যভার কেন্দ্র হইয় উঠে । তথন কাশীধামের ক্ষত্রিয় রাজগণ অবধি সৰ্ব্বোচ্চ পরীবিদ্যার, ব্রহ্মবিদ্যার অধিকারী হইয়াছিলেন । আমরা শতপথ-ব্রাহ্মণে (৫।৬৭ ), বৃহদারণ্যক্ ( ২০১১ ) ও কৌষীতকি উপনিষদে (৪১ ) কাশীরাজ অজাতশত্রুর বিদ্যাবৃত্তার বিশেষ পরিচয় পাই । ভারতের ইতিহাসের প্রারম্ভ বেদিক যুগ হইতেই কাণীক্ষেত্র আযjধৰ্ম্ম ও বিদার এক প্রধান কেন্দ্রস্থান হইয়াছিল । বেদপ্রস্থত ধারাণসীর ইতিহাস আবহমানকাল গঙ্গাপ্রবাহের হ্য{য় চলিয়৷ আসিতেছে এবং যুগে যুগে নান! স্তরে ঐ ইতিহাস গঠিত হইয়া রহিয়াছে । এই ইতিহাসের ভিন্ন ভিন্ন স্তরগুলি ভিন্ন ভিন্ন ভাল ও ধৰ্ম্মের আন্দোলনের পরিচায়ক । বাস্তবিক ভাবরাজ্যে ভারতে বতগুলি প্রধানত প্রধাণ আন্দোলনের আবির্ভাব হইয়ছে, তাহার প্রত্যেকটিই এই পুণাক্ষেত্রকে স্পর্শ করিয় তাহার নিদর্শন রাখিয়া গিয়াছে । সেইসকল নিদর্শন কখনও গ্রন্থে ও সাহিত্যে নিবদ্ধ, কখনও বা প্রকৃতিক জগতে, প্রস্তরে, মন্দিরগাত্রে, শিলাস্তস্তে, বিহারের ভগ্নাবশেষে প্রকটিত । - এই বারাণসী অঞ্চলে ভারতের কেন, জগতের সাহিত্য-সম্মিলন প্রথম অধিষ্ঠিত হয় । পৰ্য্যটক বিদ্যার্থিগণকে শাস্ত্রে চারক নামে অভিহিত করা হইয়াছে। বিদ্যালোচনায় ইহঁীর দেশের নানা জায়গায় পরস্পর মিলিত হইতেন এবং সেই মিলন-স্থানগুলি দেশের উচ্চশিক্ষার কেন্দ্রস্থল হইয়া উঠিয়াছিল। দেশের নাম স্থানে এবং বিশেষতঃ রাজসভায় দার্শনিক ও ধৰ্ম্মতত্ত্বের আলোচনার জন্য তখনকার বিদ্বন্মণ্ডলী প্রায়ই এইরূপ সাহিত্যসম্মিলনে সমবেত হইতেন । বাস্তবিক আমাদের জাতির শ্রেষ্ঠ সম্পৎ ও গৌরবের বস্তু যে উপনিষদ ইহা একপ্রকার এই প্রাচীন সাহিত্যসম্মিলনের আলোচনা অবলম্বন করিয়াষ্ট্র গঠিত হইয়াছে। বিদেহরাজ জনক তুম্বমেধযজ্ঞের আয়োজন করিয়া সমগ্র কুরুপঞ্চালদেশের বিদ্বৎসমাঞ্জকে নিমন্ত্রণের দ্বারা এক মহাসম্মিলনের আহবান করেন। তখীয় জটিল দার্শনিক তত্ত্ব লইয়া যে বহুবিধ আলোচনা হয়, তাহাতে আট জন প্রধান ঋষির পরিচয় পাওয়া যায়। র্যাহারা বিদ্যা ও তর্কে সভায় অগ্রণা হইয়াছিলেন, তাহাদিগের মধ্যে একজন ব্রহ্মবাদিনী স্ত্রীলোকও ছিলেন, তাহার নাম গাগীবাচক্লবী । ッ“ー)● এই সভায় সৰ্ব্ববাদিসম্মতিক্ৰমে ঋষি যাজ্ঞবন্ধের বিদ্য ও ব্রহ্মগুনেব প্রাধান্ত স্বীকৃত হয় এবং সেই প্রধান্তে নিদশনস্বরূপ রঞ্জ জম্বুল, র্তাস্থাকে স্বর্ণশুঙ্গশোভিত সহস্ৰ সলৎসা গাখী পঠাব প্রধান করেন । বিদ্বৎসম্ভার আলোচনা দ্বারা শিক্ষাবিস্তাবের এই চিৰস্থল প্রণালী ধে আবঙ্গমনকাল চলিয়া আসিতেছে, তাহীর পমাণ এই বারাণসীক্ষেত্রে অদ্যপি প্রত্যক্ষ রহিয়াছে । স্ববিখ্যাত গ্ৰীক লেখক ষ্ট্র্যাবে পর্যন্ত ভারতের এই প্রাচীন সাহিত্য-সন্মিলন ও দার্শনিক আলোচনার কথা বলিয়া গিয়াছেন । গ্ৰীক্ রাজদূত মেগাস্থিনিস মৌর্য্য রাজসভায় কিয়ংকাল অবস্থিতি করিয়৷ ভারতের আচার ব্যবহার প্রভৃতি লইয়। যে বিবরণী সংকলন করিয়৷ গিয়াছিলেন, তাহ হইতে স্ট্র্যাবে দেখাইয়াছেন যে, ভারতবর্ষে প্রতি বৎসর রাজ এক বিরাট স্বধী-সম্মিলন প্রচলিত প্রথানুসারে আহ্বান করিতেন । সেই সম্মিলনের উদ্দেগু তর্কের দ্বার। বৎসরের মধ্যে আবিষ্কৃত তৎসমুহের মীমাংস কর । সেই-সমস্ত তথ্য শুধু যে ধৰ্ম্ম ও দর্শনবিলয়ক তাহী নহে। হা কৃশি কিংবা পাশুপাল বিযয় লইয়াও উপস্থাপিত হইত। রাজার কৰ্ত্তব্য ছিল, ঐ-সকল বেঞ্চলিক তপোর যাপার্থ বৈজ্ঞানিকগণের পরীক্ষণ দ্বার নিরূপণ করা । যিনি এই মহাসভায় নিজের মত প্রতিষ্ঠা করিতে পারিতেন. তিনি বাজার নিকট যথেষ্ট পুরস্কার পাছতেন । ষ্ট্রাবের মতে এইরূপ জয়ী বিদ্বানুকে রাষ্ট্রীয় সকলপ্রকারের দাবি হইতে মুক্ত করির দেওয়া হইত। রাঙ্ককে কোনওরূপ কর দিতে উtহাকে হই হ না । কিন্তু মাহীর মত ভ্রস্তু বলিয়া প্রমাণিত হইত, তাহাকে শঠঙ্গাচরণের গfগুপোগে দণ্ডিত করা হইত। মিথ্যা-প্রচারককে চিরকাল মেমরত গ্রহণ করিতে বাধা করা হইত। প্ল্যাবেীর এই প্রমাণ হইতে দেখা যায় যে. পঞ্জাব প্রদেশে প্রাচীনকালে খৃঃ পূঃ ৩•• শতাব্দী পর্যন্ত કૈનનિમ-મૂળ প্রবর্হিত শিক্ষাবিস্তার-প্রণালীগুলি বিশেষভাবে পচলিত ছিল । আপ সেই প্রণালীর আবির্ভাবের স্থান এষ্ট ভারতে পূৰ্ব্বeাগ বারাণসী অঞ্চল। বারাণসীর বিদা ভারতের সর্বত্র ব্যাপ্ত হইয়া পড়িয়ছিল। বৌদ্ধধর্শের আবির্ভাবকালে আমরা দেখিতে পাই যে, বারাণীই তখন ব্রাহ্মণ্য ধর্মের প্রধান ক্ষেত্র । কারণ বুদ্ধদেব গয়ায় সিদ্ধি লাভ করিয়া নিজের ধর্ম ও মত প্রচার করিবার জঙ্ক প্রথমেই ধারাণসী অভিমুথে যাত্রা করেন। তাহার অভিপ্রায় তপন এই ছিল যে, ব্রাহ্মণ্য ধর্শ্বের যেখানে সৰ্ব্বাপেক্ষ প্রতিপত্তি ও প্রসার, দেইখানে T সৰ্ব্বপ্রথমে তাহার নূতন মতের প্রতিষ্ঠা না করিতে পারলে সমগ্র দেশে উচ্ছ। কখনই গ্রাহ ও প্রচারিত হইতে পরিবে না । পুরাতন সমরনীতিতে আছে, কোনও দেশ জয় করিতে হইলে, যে স্থানে তাহার সমস্ত বল ও শক্তি রক্ষিত থাকে, সেই দুর্গের জয় অর্থে কৰ্ত্তব্য। বুদ্ধদেবের সময়ে বৈদিক ধর্থেরও প্রধান আশ্রয় ও রক্ষার স্থান ছিল বারাণসী ৷ বারাণসী নগরীর অনতিদূরে ঋষিপত্তন বোধ হয় একটি প্রসিদ্ধ ঋষিকুল ছিল। তাই সেইখানেই বুদ্ধদেব সৰ্ব্বাগ্রে তাহার ধৰ্ম্মচক্র প্রবর্তন ぐ。bや