পাতা:প্রবাসী (চতুর্বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৮০৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Գ8 o প্রবাসী—আশ্বিন ১৩৩১ [ ২৪শ ভাগ, ১ম খণ্ড হ’লে না জানি কি করবে তুমি!” সে ঘর ছাড়িয়া মায়ের সন্ধানে চলিয়া গেল । অল্পক্ষণ পরেই মুণালের বড় ভাই আসিয়া তাহাকে বৈঠকখানা-ঘরে ডাকিয়া লইয়া গেল । পিছন-পিছন কৌতুহলে ফাটিয়া পড়িতে পড়িতে চলিল হিমানী এবং কমল। পাশের একটা ছোট ঘর হইতে দরজার খড়খড়ি তুলিয়া তাহারা উকি মারিয়া দেখিতে লাগিল। বর নিতাস্ত আধুনিক ছেলে, সে নিজেই ক’নে দেখিতে আদিয়াছে। তবে প্রাচীনপন্থী বাপ-খুড়োর দলকে একেবারে বাদ দিবার মত সাহস তাহার হয় নাই, র্তাহারাও দুই চারিজন সঙ্গে আসিয়াছেন। হিমানী ফিসফিস্ করিয়া বলিল, “বরটি বেশ দেখতে ত ভাই । কমল বলিল, “অতখানি বেশ না হ’লেও হ’ত । মিছটাকে পছন্দ হ’লে হয়, অত ফর্শ বর, ফর্শ ক’নে চাইবে ত ?” হিমানী বলিল, “কি জালাতন বাপু হিন্দুসমাজের মেয়ে হওয়া ! আমার গায়ের রং যা আছে, আমারই আছে, তাই নিয়ে কে কোথাকার সব এসে নাক সি টুকতে বস্বে, এ মনে করলেই রাগ ধরে।" সমাজের নিন্দায় ঈষৎ ক্রুদ্ধ হইয়া কমল বলিল, “তোদের সমাজে বুঝি আর লোকে ফর্শা মেয়ে চায় না, সবাই কালো বউ করতে ছুটে যায় ?” “ত চাইবে না কেন ? তবে আমাদের ত আর বাসন কি আস্বাবের মত পছন্দ করবার জন্তে হাটের মাঝে টেনে নিয়ে বেড়ানো হয় না ?” এমন সময় বরের এক বৃদ্ধ আত্মীয় মৃণাল ক’খানা ইংরেজী বই পড়িয়াছে এবং সে কার্পেটের সেলাই জানে কি না জিজ্ঞাসা করিয়া ক’নের বাড়ীর সকলকে চমক্‌ লাগাইয়া দিলেন । মৃণালের মুখখানা কেমন যেন হইয়া গেল। তাহার এক ছোট ভাই ফিকু করিয়া হাসিয়া ঘর ছাড়িয়া ছটিয়া পলাইল। বর অন্যদিকে মুখ ফিরাইয়া লইল । অল্পক্ষণ পরেই মৃণাল পরীক্ষা দেওয়া শেষ করিয়া বাড়ীর ভিতরে চলিয়া আদিল। কমল কর্তৃপক্ষের কাছে খবরাখবর শুনিতে দৌড়িল। হিমানী মৃণালকে জিজ্ঞাসা করিল, “হারে, বর পছন্দ হ’ল ? বেশ দেখতে ত?” মৃণাল বলিল, “তোরই দেখছি তাকে বেশী পছন্দ, তুইই বিয়ে করে” নে না ?” হিমানী তাহার পিঠে সজোরে এক চড় বসাইয়া দিল । বরের কনেকে খুব বেশী পছন্দ হয় নাই, কিন্তু তাহার উপরওয়ালার মেয়ের বাপুের টাকার গুণে মুগ্ধ হইয়া এইখানেই বিবাহ দেওয়া স্থির করিয়া ফেলিলেন । মহাধুমধাম-সহকারে বিবাহ হইয় গেল। বিবাহের দিন হিমানীর জর আসাতে তাহার আর বিবাহে যাওয়া ঘটিয়া উঠিল না । অমিয় নিমন্ত্রণ খাইয়া আসিয়া বিবাহের ঘটার বর্ণনা করিয়া করিয়া দিদির দুই কান বোঝাই করিয়া দিল। মৃণাল বিবাহ করিয়া বেশী দূরে গেল না, তাহার *ទុច្សុទ្ធំ কাছেই । সে প্রায়ই বাপের বাড়ী বেড়াইতে আiদত, কাজেই পুরাতন বন্ধু-বান্ধবদের সহিত দেখা-সাক্ষাৎ তাহার বন্ধ হইল না । আজ মৃণালের জন্মদিন, তাহার বাপের বাড়ীতেই উৎসবট হইতেছে। তাহার স্বামীর উদ্যোগেই অবস্থা এডট ঘটা হইতেছে ; তাহা না হইলে মেয়ের জন্মদিনে এত আড়ম্বর এ-বাড়ীতে বিশেষ কখনো দেখা যায় নাই । নিজের বাড়ী অতিরিক্ত সেকেলে বলিয়া মৃণালের স্বামীর সেখানে নিজের মনের মত করিয়া কিছু করা শক্ত, তাই তিনি অপেক্ষাকৃত আধুনিক শ্বশুরবাড়ীটাই পছন্দ করেন বেশী। শ্বশুরবাড়ীতেও ইংরেজী ধরণে স্ত্রী-পুরুষ একত্রে বসিয়া খাওয়া-দাওয়া, আলাপাদি করা খুব যে চলিত ছিল তাহা নয়, তবে নূতন জামাইয়ের সখ, তাহারা বিশেষ কোনে। আপত্তি তুলেন নাই । z* মান বর্ষার সন্ধ্যায় অন্ধকারপ্রায় ঘরে বসিয়া হিমানীর মনে বিগত জীবনের কত কথাই একের পর এক ভাস্ট্রি। যাইতে লাগিল । দিনগুলা কি দ্রুতবেগেই কাটিয়া চলিয়াছে। এই যেন সে-ছিন্ন সে স্কুলে পড়িত, আর আজ আটট ক্লাশ পড়াইবার ভার তাংশ কাধে পাপিষ্ঠী চাপিয়াছে। তাহার সঙ্গিনীর দল এখন কে কোথায় ছিটুকাইয় পড়িয়াছে তাহার ঠিকান নাই, সেই কেবল পুরাণে স্কুলের চে-সীমানার মধ্যে আটক হইয়া আছে।