পাতা:প্রবাসী (চতুর্বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৮১১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

१8२ গহনা । সেটাও তাহার কাছে বেশী কিছু নয়, শুনিয়া হিমানীর হাসি পাইল । অবশু মৃণাল ঠিক এই কথাই শুনিবার জন্য যে উক্ত মন্তব্যটি করিয়াছে সে-বিষয়ে হিমানীর সন্দেহ ছিল না। কিন্তু মৃণালের ধনগৰ্ব্বকে তুষ্ট করিবার ইচ্ছা তখন তাহার মোটেই ছিল না, সে কথা ঘুরাইয়া বলিল, “ওমা! কি সুন্দর কাজ তোর নেকৃলেস্টার, দেখি একটু ভাল করে’।” মৃণাল অগ্রসর হইয়া আসিয়া তাহার সম্মুখে দাড়াইল। এমন সময়, “এই মিনি, তোর কি আজ আর সাজ করা শেষ হবে না ?” বলিয়া তিন-চারটি মেয়ে হুড়মুড় করিয়া ঘরের ভিতর ঢুকিয়া পড়িল। হিমানীদের সমপাঠিনী মুকুল তাহাদের মধ্যে একজন, অন্যগুলিও তাহার অপরিচিত নয়। সবাই নূতন নেকুলেসের প্রশংসায় উচ্ছসিত হইয়া ং উঠিল। মৃণালের গলা হইতে সেটা ফস করিয়া টানিয়া লইয়া মুকুল সেটা হিমাণীর গলার কাছে ধরিয়া বলিল, “বাঃ! কি স্বন্দর দেখায় তোকে! তোর বরকে বলিস্ এইরকম নেকৃলেস্ কিনে, দিতে।” হিমানী বিদ্রুপ করিয়া বলিল, “বরের কি দরকার ? আমি নিজেই একটা গড়াব ভাবছি, মোটে ছ’ শ টাকা দাম ত ?” মুকুল বলিল-“তা হ’লে ত ভালই।” মৃণাল তাহাদের আলোচনায় বাধা দিয়া ব্যস্ত হইয়া বলিয়া উঠিল, “দে ভাই, দেরি হয়ে যাচ্ছে। বেশী দেরি করলে উনি রাগ করবেন, ওঁর সব বন্ধু-বান্ধবের এসে বসে আছে ।” মুকুল বলিল, “ইস্! ভারি এক উনি হয়েছে তোমার, আর কারো কখনো হয়নি! আমাদের সঙ্গে দু’টো কথা বলবারও মেয়ের সময় নেই!" মৃণাল অপ্রস্তুত হইয়া বলিল, “আহা, তোদের যেন আমি এখানে বসিয়ে রেখে বরের কাছে দৌড়চ্ছি আর কি ? আমার শোবার ঘরে ত এখন সভা করবার কথা नग्न ?” “সেজ দি, জামাই-বাৰু ডাকছেন তোমায়,” বলিয়া মৃণালের ছোট ভাই মাসিয়া হাজির হইল। প্রবাসী—আশ্বিন,.১৩৩১ [ ২৪শ ভাগ, ১ম খণ্ড

  • ঐ রে! তলব এসেছে!’ বলিয়া তরুণীর দল পরম্পরকে ঠেলাঠেলি করিয়া ঘর হইতে বাহির হইয়া পড়িল ।

চারিদিক তখন লোকে একেবারে ভরিয়া উঠিয়াছে । এধরণের ব্যাপার এবাড়ীতে নূতন বলিয়, বাড়ীর ছেলেমেয়ের দল, যাহার যত বন্ধু ছিল সকলকে নিমন্ত্ৰণ করিয়া আনিয়াছে। হিমানীর চোখ দুটি যেন এই তরুণ তরণীর মেলায় উংস্থক হইয়া কাহার সন্ধান করিতেছিল। হয়ত তাহাকে দেখা যাইবে, এই আশায় তাহার শুভ্র গও মাঝেমাঝে রুক্তিম হইয়া উঠিতেছিল। যখন তাঙ্গারা বসিবার ঘরের কাছাকাছি আসিয়া পড়িয়াছে, তখন “এই যে, আপনি কখন এলেন ?" এই কথাটা শুনিয়া সে দাড়াইয়া পড়িল ; তাহার সঙ্গিনীর দল অগ্রসর হইয়া গেল। যে যুবকটি হিমানীর সাম্নে আসিয়া দাড়াইল তাহার বয়স আন্দাজ পচিশ-ছাব্বিশ হইবে, শু্যামবর্ণ দোহারা চেহারা। মুখের ভাবটা কেমন যেন বিষন্ন ও চিন্তাকুল । হিমানীর বুকের ভিতর একটা পুলকের শিহরণ খেলিয়া গেল । এই একটি মানুষ কোথা হইতে উড়িয়া আসিয়া যে কখন তাহার জগতে সৰ্ব্বোচ্চ স্থান অধিকার করিয়া বসিয়াছিল, তাহা সে নিজেও জানিতে পারে নাই । বিনয়ের সঙ্গে পরিচয় তাহার বেশীদিনের নয়, বড় জোর এক বৎসর হইবে। মুকুলদের বাড়ীর এক নিমন্ত্রণে তাহার সহিত হিমানীর আলাপ হয়, তাহার পর এখানে-ওখানে মাঝে-মাঝে দেখা হইয়াছে। অক্ষয়কুমারের সহিত পরিচয় না থাকায় সে নিজে কখনও হিমানীদের বাড়ী আসে নাই । বিনয়কুমার দরিদ্রের সস্তান । অত্যন্ত কষ্ট করিয়া তাহাকে পড়াশুনা চালাইতে হইয়াছে। পড়ার সময়ও ভাহাকে গ্রামবাসিনী বিধবা মাতা, ও ছোট ভাই-বোনের সাহায্যার্থে নিজের কষ্টলব্ধ টাকা হইতে অৰ্দ্ধেকই পাঠাইয়া দিতে হইত। তরুণ জীবনের আশঙ্কু যেন তাহাকে সযত্বে এড়াইয়া চলিত, হাড়ভাঙ্গা খাটুনি আর শুষ্ক কৰ্ত্তব্য, পালন ছাড়া তাহার জীবনে জার কিছুরই খোজ পাওয়া যাইত না। কিছুদিন হইল সে পড়াশুনা সারিয়া চাকরীর