পাতা:প্রবাসী (চতুর্বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৮৬৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রাজপথ ঐ উপেন্দ্রনাথ গঙ্গোপাধ্যায়। [ ৩১ ] কয়েকদিন পবে একদিন বারে জয়ন্তীর নিদ্রাভঙ্গ ইয়া মনে হইল পাশের ঘরে কেহ জাগ্ৰত বহিয়াছে । সমিষ্ট্রা এবং বিমল তথায় একত্রে শয়ন কবিত। কিছু পূৰ্ণে ঘড়িতে দুইট। বাজিয়াছে, জয়ন্তী তাঙ্গ শুনিয়াছিলেন । শয্যা-জাগ কবিয়া মাঝেব গোল দ্বার দিয়া অপর কক্ষে শয্যা প্রান্তে উপস্থিত হইয়। জয়ন্তী দেখিলেন মুমিত্রা কাগিযা রহিষ্কাছে । “এত বাত্রে জেগে রয়েছিস সুমিত্রা ? কোনো অসুখ কবেনি ত ?” সুমিত্ৰা বলিল, “না, অসুখ কিছু করেনি।” “তবে জেগে রয়েছিস যে ?” “কেমন যেন গবম হচ্ছে ; ঘুম হচ্ছে না ।” “এপর্যন্ত একবাব ৭ ঘুমোসনি ?” একট ইতস্তত করিয়া মৃদু হাসিয়া সুমিত্রা বলিল, יין וזכ" ব্যস্ত হইয়া জয়ী স্বলিলেন, “সে কি রে ; রাত দুটাে বেজে গেল, আর এপর্যন্ত একটুও ঘুমোসনি! এই মাঘ মাসে এত গবম হচ্চে কেন ?” স্বমিত্র তেমনি মৃদু হাসিয়া বলিল, “ও কিছু নয় মা । আব একট পরেই ঘুম হবে অখন । তুমি ব্যস্ত হোয়োন, শোওগে।” . এ প্রবোধ-বাক্যে নিরস্ত না হইয়া জয়ন্তী স্থমিত্রার ললাট স্পর্শ করিয়া দেখিলেন বিন্দু-বিন্দু ঘৰ্ম্মে ললাট ভরিয়া গিয়াছে। মাঘ মাসের শেষ ; শীত তখনও কিছু ছিল বলিয়া বিজলী পাখাগুলা বস্ত্রাবৃত রহিয়াছে। নিজের ঘর তটতে একটা হাত-পাখা খুজিয়া আনিয়া কুমিত্রার নিকটে বসিয়া জয়ন্তী ধীরে ধীরে হাওয়া করিতে লাগিলেন । " স্বমিত্রা ব্যস্ত হইয়া মাথা তুলিয়া বলিল, “না মা, ও করলে আরো আমার ঘুম হবে না ! তুমি শোওগে ; পাচ মিনিটের মধ্যে আমি ঘুমিয়ে পড়ব ।” স্বমিত্রার মাথা হাত দিয়া ধীরে ধীরে নামাইয়া দিয়া জয়ন্তী স্নেহার্ড কণ্ঠে বলিলেন, “যুমো স্বমিত্র, ঘুমো ! পাচ মিনিট জেগে বসে হাওয়া করলে আমি মারা যাব না। আট বছর বয়সে তোমার যখন টাইফয়েড হয়েছিল তখন যে হাওয়া করতে করতে সমস্ত রাত শেষ হ’য়ে যেত । তখন ত’ আর তুমি আমাকে শুতে পাঠাতে না ।” মৃদু হাসিয়া সুমিত্র বলিল, “আচ্ছা, তবে একটু হাওয়া কর, কিন্তু বেশীক্ষণ বসে থেকে না মা, আমি ঘুমিয়ে পড়লেই উঠে যেয়ো ।” তাহার পর সে পাশ ফিরিয়া নিবিষ্টমনে শয়ন করিল। হাওয়া করিতে-করিতে জয়ন্তী স্থমিত্রার মুখের দিকে একদৃষ্টে চাহিয়া রহিলেন । সমস্ত মুখটা দেখা যাইতেছিল না, যে-টুকু দেখা যাইতেছিল তাহাও স্তিমিত আলোকে স্পষ্ট দেখা যাইতেছিল না, কিন্তু জয়ন্তী তাহারই মধ্যে সুগভীর বেদনার সুস্পষ্ট চিহ্ন দেখিতে পাইলেন । কুশ-করুণ মুখের নি:শব্দ আৰ্ত্ততার দিকে চাহিয়া চাহিয়া জয়ন্তীর চক্ষে জল আসিল ! মনে হইল যেন সরস ক্ষেত্রের লতা, উৎপাটিত হইয়া শুষ্ক ভূমিতে রোপিত হওয়ার পর, অবসয় হইয়া পড়িয়াছে। এখন নিঃশেষ করিয়া স্নেহরস সিঞ্চন করিলেও যদি সঞ্জীবিত না হয় এই আশঙ্কা সহসা মনে উদয় হইবামাত্র জয়ন্ত্রীর নিঃশ্বাস রুদ্ধ হইয়া আসিল ! সুমিত্রা নিদ্রিত হইবার পরও জয়ন্তী বহুক্ষণ চিন্তাবিষ্ট হইয়া তাহার পাশে বসিয়া রছিলেন। তিনটা বাজিবর পর শয্যায় গিয়া শয়ন করিলেন কিন্তু বাকি রাতটুকু আর ভাল নিদ্রা হইল না, চিস্তায়-চিস্তায় কাটিয়া গেল । পরদিন প্রাতে জয়ন্তী সুমিত্রার বিষয়ে বিমলার নিকট নানাপ্রকার অনুসন্ধান করিলেন ।