পাতা:প্রবাসী (চতুর্বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৮৭১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

b е е কৰ্শ্বে তত বুঝতে পারিনে ; কিন্তু রাত্রে বিছানায় শুয়েই কিরকম গা জালা করতে আরম্ভ করে । আমার বিশ্বাস মা, এ বিলিতী কাপড় পরে’ শোবার জন্তে হয়। বিলিতী কাপড়ের চেয়ে খন্দর অনেক মোটা, কিন্তু খন্দর পরে কখন ওরকম গরম হত না। এ আমি তৈরী করে বলছিনে, মা, যা হয় उॉहे বলছি।” বলিতে-বলিতে স্থমিত্রার চক্ষু ছলছল করিয়া আসিল । ব্যথিত হইয়া জয়ন্তী বলিলেন, “তবে খদ্দর পরেই শুস্নে কেন ? আমি ত খন্দর পৰ্বতে মানা করিনি।” “তা করনি ; কিন্তু আজ-কালকার খদ্দর পরা ত’ শুধু কাপড় পরা নয় মা, এ একটা ব্রত। এর মধ্যে ছোয়াছুত চলে না।” জয়ন্তী স্মিতমুখে বলিলেন, মানিস নাকি ?” স্বমিত্ৰা বলিল, “মানি বই কি, মানবার কারণ . যেখানে থাকে সেখানে মানি । তুমি যেমন মা, পূজো করবার সময়ে দিশী গন্ধ-পুষ্প দিয়ে পূজো কর, নিষিদ্ধ ফুল দিয়ে কর না, তেমনি দেশ-পূজার পুষ্প-পাত্রে শুধু খন্দরই চলে, বিলিতী কাপড় চলে না।" বলিয়া স্বমিত্রা নিজের বাকৃপটুতায় পুলকিত হইয়া হাসিয়া উঠিল। জয়ন্তীর মনে তর্কের স্প হা জাগিয়া উঠিল। বিমান-বিহারীর সেই বহু ব্যবহৃত যুক্তি অবলম্বন করিয়া বলিলেন “তোমাদের একথাটা আমি একেবারেই বুঝতে পারিনে। ব্রাহ্মণ-চণ্ডাল যখন এক-পঙক্তিতে চালাতে চাচ্ছ, তখন দিশী-বিলিতীর ছোয়াছুত চলবে না কেন ? মামুষের জাত যদি উঠিয়ে দিতে পার, তখন দেশের জাত কেন উঠিয়ে দেবে না? জাতের সঙ্গে জাত মিশতে পাবুলে দেশের সঙ্গে বিদেশও মিশতে পারে।” এযুক্তির বিরুদ্ধে সুরেশ্বর যে যুক্তি প্রয়োগ করিয়াছিল তাহা স্থমিত্রার মনে পড়িয়া গেল। সে বলিল, “দেশের সঙ্গে বিদেশ নিশ্চয়ই মিশতে পারে, কিন্তু তার জন্তে সত্যিকার দেশ থাকা দরকার । তোমার দেশের সব জিনিসই যদি বিদেশী হয়, তা হলে’ তোমার দেশও বিদেশ হয়ে যায়। সেইজন্যে প্রথমে দেশ গড়ে তুলতে হবে, আর তার জন্তে বিদেশী মশলা ব্যবহার করলে “তোরাও ছোয়াছত প্রবাসী—আশ্বিন, ১৩৩১ - [ ২৪শ ভাগ, ১ম খণ্ড চলবে না। দেশে যখন দরকারের মত দিশী কাপড় তৈরী হবে তখন সখের মত বিলিতী কাপড় ব্যবহার করলে কোনও দোষ হবে না।” তর্ক করিবার সমস্ত আগ্রহ সহসা পরিহার করিয়া জয়ন্তী বলিলেন, “আচ্ছা দেশের পূজো যেমন করে তোমার করতে ইচ্ছে হয়, তেমনি করেই কর, আমি আর কিছু বলব না। যাও এ-সব কাপড় ছেড়ে তোমার খন্দরের কাপড় পরে’ এস । আর বিপিনকে দিয়ে খন্দরের শাড়ী সেমিজ আর জামা যদি কিছু দরকার থাকে আনিয়ে নাও।” জয়ন্তীর কথায় নিরতিশয় বিস্মিত হইয়া সুমিত্রা ক্ষণকাল নিঃশব্দে চাহিয়া রহিল, তাহার পর বলিল, “কেন মা ? আমার ওপর রাগ করে একথা বলছ ?” জয়ন্তী স্মিতমুখে বলিলেন, “যখন মা হবে, তখন বুঝবে যে সস্তানের ওপর রাগ করে মা কত কথা বলে!” “তবে বিরক্ত হয়ে বলছ বুঝি।” জয়ন্তী ভ্র-কুঞ্চিত করিয়া বলিলেন, “কি বিপদ ! বিরক্ত হব কেন ?” “তবে অভিমান করে” বল ছ!” এবার জয়ন্তী সহসা উত্তর দিতে পারিলেন না, কার; কথাটার মধ্যে কিছু সত্য ছিল। প্রবল ঝটিকায় যেমন বড়-বড় গাছ-পালা ভাঙিয়া পড়ে কিন্তু ক্ষুদ্র দূৰ্ব্বাদল বঁাচিয়া থাকে, তেমনি মাতৃ-স্নেহে কঠোর এবং প্রবল যাহা কিছু সবই ক্ষয় পাইয়াছিল, শুধু অভিমানেরই সামান্ত অবশিষ্ট ছিল । জয়ন্তীর দ্বিধাভাব লক্ষ্য করিয়া স্বমিত্ৰা বুলিল, “তোমাকে অসন্তুষ্ট করে আমি এ-সব কিছুই কব না বলে, স্থির করেছি। মনে কষ্ট পেয়ে তুমি আমাকে কিছু করতে বোলোনা মা ! কিসের জন্তে তোমার অভিমান হ’ল আমাকে বলে ?” কস্তার নিকট হইতে এ অনুরক্তির কথায় অভিমানটা বুদ্ধি পাইলেও জয়ন্তী হাসিতে হাসিতে বলিলেন, “আমি ত আর তোমার মত মেয়ে নই যে মীর ওপর অভিমান করে, মার মনে कई দেবো ।” . বিস্মিত হইয়া স্বমিত্রা বলিল, ‘কেন মা, আমি তোমার ওপর কি অভিমান করেছি ?