পাতা:প্রবাসী (চতুর্বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৯৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১ম সংখ্যা ] চাকার, শব্দ এসে থামূল।" পুর্ণিমা তাড়াতাড়ি নিজের হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বললে, “বোধ হয় বাবা এলেন।” ব’লেই ঘর থেকে বেরিয়ে গেল । তারপরে সে যখন আবার ফিরে এল, তখনু তার মুখ দেখে রতনের মনে হ’ল, সে মুখ যেন মড়ার মুখ । রতন কি বলতে যাচ্ছিল, কিন্তু তার জাগেই, পূর্ণিমার পিছনে পিছনে ঘরের ভিতরে এসে দাঁড়াল সুমিত্ৰ ! স্তম্ভিতু-দৃষ্টিতে রতন অবাক হ’য়ে সুমিত্রার দিকে তাকিয়ে রইল, তার ভাব দেখে মনে হ’ল, সে যেন নিজের চোখকেও বিশ্বাস করতে পারছে না।. . স্থমিত্রা সকৌতুকে হেসে উঠে বললে, “অমন ক’রে আমার পানে চেয়ে আছেন কেন রতন-বাব ? আমি কি প্রেতাত্ম ?” —“তুমি,—তুমি—তুমি—" —“রতন-বাৰু কি হঠাৎ তোংলা হ’য়ে গেলেন ?” —“তুমি এখানে কেন ?" —“কেন, এধানে আমার প্রবেশ নিষেপ নাকি ? তা হ’লে সে নিষেধ আমি মানব না।” রতন গম্ভীর-মুখে স্তন্ধ হ’য়ে রইল । সুমিত্রা এগিয়ে এসে বললে, “আপনার সঙ্গে আমার গাপন কথা আছে ।" শুনেই পূর্ণিমা আস্তে আস্তে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল। স্থমিত্ৰ হাসি-ভরা-মুখে বললে, “রতন-বাবু, আমার ওপরে রাগ করেছেন ?” •-“কিছু না! কোন অধিকারে তোমার ওপরে রাগ করব ? • "—যে অধিকারে আগে করতেন।" 峨 —“তখন আমি তোমার শিক্ষক ছিলুম।" —“বেশ ত, আবার আপনি আমার মাষ্টার-মশাই হোন। কাল থেকে আবার আমি ছবি-আঁকা শিখৃব ।” —“আমি আর তোমাকে শেপাতে পারব না।” —“পারবেন না! কেন ?” রতন শ্লেষ-কটু-স্বরে বললে, “কারণ, এখন যে আমি ধনী ! পরের দাসত্ব করব কেন ?” . স্থমিত্র বুঝলে, এই শ্লেষের আসল উদেশ্ব কি । 3 * বেনোজল ৭৩ কিছুক্ষণ সে স্তব্ধ হয়ে রইল। তার পরেই আচম্বিতে রতনের সামনে হাটু গেড়ে বসে পড়ে বললে, ”কিন্তু আমি যদি আপনার দাসীত্ব করি, তা হ’লে ?” তার স্বরে আর কৌতুক বা তরলতার লেশমাত্র ছিল না। রতনের নত-নেত্র সুমিত্রার মুখের দিকে ৰিস্মিত-ভাবে স্থির হয়ে রইল। এই সুমিত্র কি সত্য-সত্যই একটি মূৰ্ত্তিমন্ত হেঁয়ালি ? সে কি পাগল ? না তার সঙ্গে আবার সে ছেলে-খেলার অভিনয় কবৃছে ? রতন কিছুই বুঝতে পারলে না। স্থমিত্রা কাতর-কণ্ঠে বললে,“রতন-বার, আমার কথার উত্তর দিন ।” - বতন বললে, “তুমি কি জানতে চাও?" —“আপনি আবার আমাদের বাড়ীতে যাবেন ?” —“আজকের অপমানের পরেও ? না সুমিত্রা, আমি তা পারব না।” —“আমাকে ক্ষমা করুন রতন-বাৰু, আমাকে ক্ষমা ! করুন। অভিমানে আর রাগের বশে আমি যা বলেছি, তা আপনি ভুলে যান। আমার মুখের কথা আমার মনের কথা নয়। আমি নিজের ভ্রম বুঝতে পেরেছি। এতদিন পরেও আপনি কি আমাকে চিনতে পারলেম না ?” —“তোমাকে চেন অসম্ভব, মুমিত্ৰা ।” —“ত হ’লে আপনি আমাকে ক্ষমা করবেন না ?” —“তইতেই যদি তুষ্ট হও, তবে আমি তোমাকে নহয় ক্ষমাই করছি। কিন্তু তোমাদের বাড়ীতে আর আমি যেতে পারব না।” স্বমিত্র বিদ্যুতের মতন দাড়িয়ে উঠে যম,লে, “রতনবাবু! পুরীতে একদিন আপনাকে বলেছিলুম, আর আজও বলছি,--আপনাকে আমি কিছুতেই ছেড়ে দেব ন। সেবারে আপনি আমার কাছ থেকে পালিয়ে এসেছিলেন, কিন্তু এবারে আর সে স্বযোগও পাবেন না । আজ থেকে আমি ছায়ার মতন আপনার সঙ্গে সঙ্গে থাকৃব—এই আমার পণ । মিনতিতে আপনার মন গলবে ন!—আমি জোর ক’রে আবার আপনাকে ফিরিয়ে নিয়ে যাব—দেখি, কে আমাকে বাধা দেয়।” এই ব’লেই সে জুই হাতে রভনের দুই হাত ধৰ্ব্বলে ।.