পাতা:প্রবাসী (চতুস্ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/১২৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কাৰ্ত্তিক প্রভৃতি অনেক রকমের হার ছিল ; মেয়েদের কটিভূষণ ছিল—কিঙ্কিণি, গোট, কোমরপাটী, মেখলা, চন্দ্রহার । শিশুদের কটিভূষণ ছিল নিমফলের মত দানাওয়ালা নিমফল, কুলের তাটির মত দানাগাথা সোনা-রূপার বোর, বোরপাটি, বেরিপাটা—এগুলি বের ও তাবিজের মত সেনা-রূপীর পাতা গাঁথা ; তেঁতুলে বিচার অনুকরণে বিছ । তেঁতুলে বিছার আরুতি হারও ছিল, তার নামও বিছা—নিমফুলের অনুকরণেই হার নিমফুল । শিশুদের কোমরে বেঙও দেওয়া হইত। আবার গোপ-হারও ছিল । গোপহারের কল্পনা কিছু উদ্ভট বা উৎকটও মনে হইতে পারে ; গেীপের সঙ্গে এ হীরের কোন সম্বন্ধ নাই—পশ্চিমবঙ্গের অন্থনসিকর পাল্লায় পড়িয়া হিন্দুস্থানী পুরুষদের গোপ নামক হার আমাদের মেয়েদের গোপহার হইয়াছে । নাহা হউক, রমণীদের করতলপৃষ্ঠের শোভা বদ্ধন করিত তাহার হাতে পরিত পলার্কাট, ঘবদানা, মরদ না, মুড়কী আকারে গড়া মুড়কী মাজুলী, মটরীকঙ্কণ, থৈ য় কঙ্কণ, থৈয়ে নেয়া : কঙ্কণ, খাড়, নারিকেল ফুল, রতনচুড়, ব’লা, শাখা, লবঙ্গফুল ; পৈছা, বাউট : উপর হাতে পরিত তড়ি, তাগী, বাজু, ১ জসম, ইত্যাদি । কুলুপা শঙ্খ অনেক দিন আগে বাঙ্গালায় চলিত। এটি নাচি-করা শাখা । সাধারণতঃ দু-সেট হইত। এক সেট হলদে, এক সেট সবুজ । হলুদে সেটকে লক্ষ্মণ বলিত, সবুজ সেটের নাম রাম। রামেশ্বরী সত্যনারায়ণে আছে —“কুলুপা ছু-বাই শস্থ শ্রীরাম লক্ষ্মণ” । বাই মানে সেট । মাথার অলঙ্কার ছিল, সাথি, বীপ, ঝাপটা, শিরোমণি ; ধোপার শোভা ছিল—প্রজাপতি, ফুল, চিরুণী, কাটা । রমণীদের নাসাশোভা ছিল নোলক, নথ, বেশর,*৩ লবঙ্গ, ৮ কটিতে কিঙ্কিমিধ্বনি শুনি মনোহর। ঘনরাম ৯ শঙ্খের উপর সাজে সোনীর কঙ্কণ ॥-কৃত্তিবাসী রামায়ণ “হাতে বাল, পায়ে মল, কাকালেতে গোট ৷’--হেমচন্দ্র ১• ভূজে বিরাজিত তাড় ভুবন উজর –মনরাম ১১ নানা ছন্দে বাজুবন্দ হেম বৰ্ণপাকুরি । পরিয়া পাইল শোভ পরম সুন্দরী । শিবায়ন ১১ মাথায় ঝাপটা সিথী কটিতট বেড়ি চন্দ্রহার। --মাইকেল ১৩ নাকেতে বেশর দিল মুক্ত সহকারে —কৃত্তিৰাসী রামায়ণ 'ৰেশর খচিত—শতেশ্বরী পরিল।’-ভুগতিনাথের পদ লবঙ্গবেসরে কারে মুখ করে আলে।’-গাভক্তিতরঙ্গিণ অলঙ্কণর SC'శ్రీ শতেশ্বরী ইত্যাদি । পায়ের গয়না ছিল মল, বেঁকি, বাকমল,* ঘুমুরগাথা মল, ঘুঙ্গর পাতামল, হীরাকাটা মল, নুপুর,* নেউর, কেয়ূর, পাগুলি, আনট বিছা, এ গুজরিপঞ্চম, পঞ্চম, পাজর, মঞ্জীর, তোড়া, খলখলি, ছর, ঝুমুর চরণচাপ প্রভৃতি ! পায়ের বড়ো আঙুলের গহনা আঙ্গট, কড়া, চষ্টুকি । হাতের অঙিলের আংটি, মুদরি । আমি দিগদর্শন হিসাবে অলঙ্কার সম্বন্ধে দুইটা কথা বলিলাম। এইবার প্রাচীনতম যুগ হইতে আমাদের দেশে অলঙ্কারের পরিকল্পনা সম্বন্ধে আরও দুইটা কপী বলিব । চারিখানি বেদের কোনো বেদে * অলঙ্কার’ বলিয়া কোনো শব পাওয়া যায় না । বেদে কিন্তু ‘অরংকত’, ‘অরংকুতি’ শব্দ পাওয়া যায়–অর্থ অলঙ্কার। বৈদিক “অরম্ শব্দ হইতে অলমূ’ শব্দ নিম্পন্ন হইয়াছে । ঋ হইতে আর নিপন্ন হইয়াছে । ইহার দ্বিতীয়ার একবচনে অরম্ | অবায় adv. Acc. ] অরম্ হইতে ‘অলমৃ’=ঠিক, যথেষ্ট (fit, fitly, jusuy) । ‘অলঙ্কার’ শব্দ বেদে নহি বলিয়া তখন নরনারীর ক্ষগু*ে; ভ’রূপ অলঙ্কার অথবা কাব্যশোভারপ অলঙ্কার ছিল না, একথা বলা যাইতে পারে না । কেহ কেহ বলিয়াছেন, ভূষণ, আভরণ প্রভৃতি অলঙ্কার-পর্যামের কোন শব্দই বেদে নাই । বেদে অনেক অলঙ্কার বা গহনার নাম পাওয়া দায় । অলঙ্কারবাচক শব্দও বেদে নাই তাহাও নয় । ঋকুসংহিতায় দেখা যায় মরুদৃগণ অলঙ্কারের বিশেষ প্রিয় ছিল । ১.৬৪ ; ৮, ২০ ; ১০.৭৮ তাহার সুন্দর সুন্দর অলঙ্কার পরিয়া শরীরের শোভা বদ্ধন করিত । রুদ্রকে ঋগ্বেদে উজ্জ্বল স্বর্ণালঙ্কারমণ্ডিত ও কণ্ঠহারশোভিত বলিয়। বর্ণনা করা হইয়াছে। মরুদগণ ও অশ্বিদ্বয়েরও অনুরূপ বর্ণনা আছে । দেবপ্রতিদ্বন্দ্বী অসুরদেরও স্বর্ণ ও মণিমুক্তাখচিত অলঙ্কার ছিল। ঋষি কক্ষিবান্‌ স্বর্ণকুণ্ডল ও রত্নহার-শোভিত পুত্রের জন্য প্রার্থনা করিতেছেন। ব্ৰাহ্মণ ও পুরোহিতদের স্বর্ণ ও স্বর্ণালঙ্কারাদির কথা আছে ।

  • দুবাহুতে দিব্যশস্ব রজতের মলবন্ধ স্বর্ণমুদ্র নানা হারগণ – চৈতন্যচরিতামৃত, আদি । “দুবাই শঙ্খেতে শোভিল বিলক্ষণ ।” --কৃত্তিবাসী রামায়ণ

১৪ দুই পায়ে দিল তার রজত নুপুর —কৃত্তিবাসী রামায়ণ ১৫ পীতামল, পাগুলি আনষ্ট বিছ পায় । গুজরিপঞ্চম আর শোড়া কিবা তায় -গঙ্গাতক্তিতরঙ্গিণী