পাতা:প্রবাসী (চতুস্ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/২৯৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পোষ চীনের কৃষি ও কৃষক-পরিবার Nరి:A ময়দা প্রস্তুত করে, গ্রামের কূপ হইতে কাধে বহিয়া সকালসন্ধ্যায় জল আনে, ক্ষেতের কাজে পুরুষদিগকে সাহায্য করে এবং ফলের বাগান হইতে নানাবিধ ফল তুলিয়া আনে । চীন দেশের স্ত্রীলোকেরা সেলাইয়ের কাজেও বিশেষ পটু। যতদিন পর্যন্ত সম্ভব ততদিন পর্যন্ত তাহারা পোষাক-পরিচ্ছদগুলি পুনঃ পুনঃ সেলাই করিয়া ব্যবহার করে এবং যখন এগুলি একেবারে চিড়িয়া যায় ও সেলাই করিয়া ব্যবহার করিবার সম্পূর্ণ অনুপযুক্ত হইয়া পড়ে, তখন উহাদিগকে জালানি হিসাবে কাজে লাগায় । পবিশেষে উহা হইতে যে ছাই পাওয়া বায় তাহীও নষ্ট না করিয়া জমিতে প্রয়োগ করে । কনকনে শীতেও চীনেরা তাহদের ঘরদের গরম রাখিবার জষ্ঠ সদসৰ্ব্বদা তাগুন জীলে না । তাঁহাদের শীতকালে ব্যবহারের উপযুক্ত পোষাক আছে বটে, কিন্তু উহা খুবই সাদাসিধে। উহারা মোটা ওভার-কেট ব্যবহার করে না ; উহার পরিবর্তে স্বতীর পোষাকের নীচে তুলার জামা ব্যবহার করে । এই জন্ত সকল সময়ই তাহাদের পোষাক পরিচ্ছদ সুন্দর ও হালকা দেখায় । ভারী পোষাক না থাকতে সকল কাজ অনfয়সে করিতে পারে । যদিও চীনের কৃষক-পরিবারকে জীবনধারণের জন্ত অতি কঠোর পরিশ্রম কল্পিতে হয়, তথাপি উহারা সন্তানসন্ততিগণকে যত্বের সহিত পালন করে । ছেলেমেয়েদের প্রতি উহাদের ব্যবহার অতি মধুর। প্রত্যেক গ্রামেই ইষ্টপুষ্ট, পরিশ্রমী ও প্রফুল্ল বালক-বালিকাদিগের দল দেখিতে পাওয়া যায়। ছোট ছোট মেয়ের রঙীন ফিতায় চুল বাধিয়া এবং গালে লালচে রং মাখিয়া রাস্তাঘাটে ছুটছুটি করিয়া বেড়ায় । খাবারওয়ালা দেখিলেই তাহারা আননে নাচিতে থাকে এবং ছুটিয়া গিয়া দুই এক পয়সার থাবার কেনে। ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া শিক্ষার প্রতিও চীনের কৃষকের অমনোযোগী নহে। প্রায় সকল গ্রামেই স্কুল আছে। স্কুলের বাড়ি জমকালো নয়, সাদাসিধে ধরণের, কিন্তু দেখিতে সুন্দর। গ্রীষ্মকালে সকাল ছয়টার সময় ছেলেমেয়েরা দল বাধিয়া গ্রাম্য সঙ্গীত গাহিতে গাহিতে স্কুলে যায়। স্কুলে বসিবার জন্ত বেঞ্চ বা টুল নাই ; ঘণ্টার পর ঘণ্টা ছাগলের চামড়ার আসনে বসিয়া লেখা পড়া করিতে হয় । চীন দেশের অল্পসংখ্যক কৃষকই লিখিতে ও পড়িতে পারে। তাহাদের প্রধান আমোদ প্রাণভরা হসি, আমেরিকার সিগারেট এবং লোকের মুখে মুখে সকল খবর জানা । মাটিই চীনের কৃষকদের প্রধান সঙ্গী ও শিক্ষক । মাঝে মাঝে যুদ্ধ-সম্পর্কিত দুঃখ-দুর্দশ ছাড়া রাজনীতি যে কি জিনিষ তাহারা জানে না । তাহারা যে দেশের খবর বিশেষ রাখে না, তাহা একটি কথা বলিলেই বুঝা যাইবে । চীন দেশে প্রজাতন্ত্র প্রচলিত হইবার পনের বৎসর পরেও পিকিং শহর হইতে ২০০ মাইল দূরবর্তী স্থানের কৃষকগণ চীনের সম্রাটের খবর জানিবার জন্ত কৌতুহল প্রকাশ করিত। সকল অবস্থাতেই তাহীদের মনের তৃপ্তি দেখিলে আশ্চর্য হইতে হয় । তাহদের মধ্যে দুঃখ-দারিদ্র্য যে নাই, তাহা নহে, কিন্তু তাহার মধ্যে কিছুমাত্র মলিনতা ও অবসাদ নাই । নৈতিক ক্রটির জন্তই মলিনতা আসে এবং হতাশা, দুঃখ-বিপদে হাল ছাড়িয়া দেওয়া ও যা হয় হউক এই ভাব উপস্থিত হয় । চীনের কৃষকদিগের মধ্যে এই সকল নৈতিক ক্রটির কোন লক্ষণ দেখিতে পাওয়া যায় না । তাহারা কোন বিষয়েই হাল ছাড়িয়া দেয় না, কোন কাজকেই মন হইতে মনতর অবস্থায় পৌছিতে দেয় না, প্রাণপণে উহাকে সফল করিতে চেষ্টা করে । কৃষিক্ষেত্রে কাজ করিয়া তাহার এই কঠোর সত্য ও শিক্ষা লাভ করিয়াছে এবং এই শিক্ষা সমস্ত জাতির মধ্যে বদ্ধমুল হইয়া গিয়াছে। কোন জিনিষের অপচয় তাহাদিগকে অত্যন্ত আঘাত দেয়। অদম্য পরিশ্রম, অসীম উৎসাহ, প্রকৃতির সহিত সারা জীবন যুদ্ধ এই প্রাচীন জাতিকে মানুষ করিয়া তুলিয়াছে। চীনের কৃষক-পরিবারের উপরোক্ত বিবরণ হইতে সহজেই বুঝা যাইবে যে, কৃষিকার্য্যে আধুনিক পাশ্চাত্য প্রণালী অবলম্বন না-করিয়াও তাহারা কেবল মাত্র ক:োর পরিশ্রম ও তাহীদের অভিজ্ঞতা-লব্ধ ব্যবহারিক জ্ঞানের স্বারাই ঐ দেশের চল্লিশ কোটি লোকের অন্নবস্ত্রের সংস্থান করিতেছে । আমাদের দেশের কৃষকদের মত তাহারা অদৃষ্টবাদী ও উৎসাহীন নহে। সকল কাজই তাহারা