পাতা:প্রবাসী (চতুস্ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৪২২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8" 。 হয়ে গেল, গঙ্গার বুকে নোঙর-করা বড় বড় কিস্তীর মাঝিরা হনুমানঞ্জীর ভজন গাইতে সুরু ক’রে দিলে, পাহাড়ের পূব দিকে ছোট কেওলিন খনিটাতে মজুরদের ছুটির ঘণ্টা পড়ল-আমি তখনও অবাক হয়ে দাড়িয়েই আছি।--রাঢ় দেশের মাঠে সেই খালের ধারের তালবনে সেদিন যে অদ্ভুত ধরণের শাস্তি ও আনন্দ পেয়েছিলুম, সেটা আবার পাবার আশায় কত ক্ষণ অপেক্ষ করলুম–কিন্তু পেলাম কই ? তার বদলে একটা ছবি মনে এল । আমি জানি এ-সব কথা বলে কি কিছু বোঝানো যায় ? যায় না হয়েছে, সে কি ঘরের লেখা পড়ে কিছু বুঝতে পারবে, না আমিই বোঝাতে পারবো ? মনে হ’ল কোথায় যেন এক জন পথিক আছেন ঐ নীল আকাশ, ঐ রঙীন মেঘমালা, এই কলরবপূর্ণ জীবনধারার পেছনে তিনি চলেছেন•••চলেছেন•••কোথায় চলেছেন নিজেই হয়ত জানেন না । তার কোন সঙ্গী নেই, তাকে কেউ বোঝে না, তাকে কেউ ভালবাসে না । অনাদি অনন্তকাল ধরে তিনি এক এক পথ চলেছেন। এই দৃশুমান বিশ্ব, এদের সমস্ত সৌন্দৰ্য্য—তিনি আছেন বলেই আছে। আমি তাকে ছোট ক’রে দেখতে চাইনে। তাকে নিয়ে পুতুলখেলার বিরুদ্ধে ছোটবেলা থেকে আমি বিদ্রোহ ক’রে আসছি। তিনি বিরাট, মানুষে দশ হাজার বছর র্তাকে যত বুঝে এসেছে আগামী দশ হাজার বছরে তাকে আরও ভাল ক’রে বুঝবে। এক-আধ জন মানুষে কি করবে ? সমগ্র মানব জাতি যুগে যুগে তাকে উপলব্ধির পথে চলেছে । আমি তাকে হঠাৎ বুঝে শেষ করতে চাই নে-কোট যোজন দুরের তারার আলো যেমন লক্ষ বৎসর ধরে পৃথিবীতে আসছে...আসছে-তেমনি র্তার আলোও আমার প্রাণে আসছে--"হয়ত সিকি পথও এখনও পৌছয় নি—কত যুগ, কত শতাব্দী, এখনও দেরি আছে পৌছবার । এই ত আমার মনের আসল স্ল্যাডভেনচার (adventure), এ যেন আমার হঠাৎ ফুরিয়ে না যায়। আমি খুজে বেড়াবো---এই খোজাই আমার প্রাণ, বুদ্ধি, হৃদয়কে সঞ্জীবিত রাখবে, আমার দৃষ্টিকে চিরনবীন রাখবে। , আমি হয়ত এজন্মে তাকে বুঝবো না, হয়ত বহু জন্মেও এসে ৯৫ প্রবাসীষ্টৰ ১OBN বুঝবো না—এতেই আনন্দ পাব আমি, যদি তিনি আমার মনের বেদীতে হোমের আগুন কখনও নিবে যেতে ন-দেন, শাশ্বত যুগসমূহের মধ্যে, সুদীর্ঘ অনাগত কাল বোপে । আমি চাই ওই নীল আকাশ, ওই সবুজ চর, কলনদিনী গঙ্গা, দূরের নীহারিক পুঞ্জ, মানুষের মনোরাজ্য, ওই হলদে-ডানা প্রজাপতি, এই শোভা, এই আনন্দের মধ্যে দিয়ে তাকে পেতে । লোচনদাসের আখড়াতে সবাই বললে, আমি নাস্তিক, কারণ আমি বলতাম নাম-জপ করা কেন ? ঈশ্বরের নাম দিতে পেরেছে কে ? শেষ-পর্যন্ত উদ্ধব বাবাজী আমাকে আথড্রা ছাড়িয়ে দিল এই জন্তে বোধ হয়। এক দিন বৈকালে গঙ্গায় নাইতে নেমেছি—কাটারিয়ার ওপারের যহুদূর দিকচক্রবলের প্রাস্ত থেকে কালো মেঘ ক’রে ঝড় এল, গঙ্গার বুকে বড় বড় ঢেউ উঠুল, আমার মুখে কপালে মাথায় বুকে ঢেউ ভেঙে পড়ছে, ওপারের চরের উপর বিদ্যুৎ চমূকাচ্ছে, জলের মুম্বাণ পাচ্ছি-এরকম কত ঝটিকময় অপরাহ্ল ও কত নীরন্ধ, অন্ধকারময়ী রাত্রির কথা মনে এল—আমারই জীব নর কত সুখদুঃখময় মুহুর্তের কথা মনে এল— মনে কেমন একটা অপূৰ্ব্ব ভাবের উদয় হ’ল, তাকে আনন্দও বলতে পারি, প্রেমও বলতে পারি, ভক্তিও বলতে পারি। তার মধ্যে ও তিনটেই আছে। বটেশ্বরনাথের পাহাড়টার ঠিক ধূসর শু,পের দিকে চেয়ে, দূর, দূর, দিগন্তের দিকে চেয়ে যেখানে বাংলা দেশ, যেখানে মালতী আছে, যেখানে এমন কত মুন্দর বর্ষার সন্ধ্যা মধুর আনন্দে কাটিয়েছি, কত জ্যোৎস্নারাত্রে শুকনো মকাই-ঝোলানো চালাঘরের দাওয়ার তলায় বসে দু-জনে কত গল্প করেছি, তার মুখে জ্যোৎস্নার আলো এসে পড়েছে--- কতবার অপ্রত্যাশিত মুহূৰ্ত্তে সে এসেছে—আবার কতবার ডাকলেও আসে নি, কতবার চোখোচোধি হলেই হেসে ফেলেছে—এ কথ, মনে হয়ে আমার মনে কেমন একটা উন্মদিন, আনন্দ, প্রেম, ভক্তি আরও কত কি ভাবের উদয় হ’ল একটা বড় ভাবের মধ্য দিয়ে। ওই একটার মধ্যে সবটা ছিল। তাদের আলাদা আলাদা করা যায় না—কিন্তু তারই প্রেরণায় আমার আঙুল আপনা-আপনি বেঁকে গেল, গঙ্গার জলে