পাতা:প্রবাসী (চতুস্ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৪২৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মাঘ দৃষ্টি-প্রদীপ 8ግvg মা, বাবা, হীরু-জ্যাঠার নামে তৰ্পণ করলুম, ভগবানের নামে সমস্ত দেহ-মন সুয়ে এল, জলের ওপরই মাথা নত ক’রে তার উদ্দেশে প্রণাম করলুম। সীতার জন্ত করুণ সহানুভূতিতে চোখে জল এল । হঠাৎ ঘোর বৈষয়িকতার জন্ত জ্যাঠামশায়ের প্রতি অনুকম্প হ’ল—আবার সেই স্বষ্টিছাড়া অপরূপ মুহূর্তেই দেখলুম মালতীকে কি ভালই বাসি, মালতীর সহায়হীন, সম্পদহীন, ছন্নছাড়া মূৰ্ত্তি মনে ক’রে একটা মধুর স্নেহে, তাকে সংসারের দুঃখকষ্ট থেকে বাচাবার আগ্রহে তাকে রক্ষা করবার, আশ্রয় দেবার, ভালবাস্বর, ভাল করবার, তার মনে আনন্দ দেবার, তার সঙ্গে কথা বলবার আকুল আগ্রহে সমস্ত মন ভরে উঠল—কি জানি সে মুহূর্ত কি ক’রে এল সেই মেবান্ধকার বর্ষণমুখর সন্ধাটিতে, সমস্ত বিশ্বপ্রকৃতি যেন সেই মহামুহুর্তে আমার মধা দিয়ে তার সমস্ত পুলকের, গৌরবের, অনুভূতির সঞ্চয়হীন বিপুল দানে আত্মপ্রকাশ করলে । সেদিন দেখুলুম ঈশ্বরের প্রতি সত্যিকার ভক্তির প্রকৃতি মালতীর প্রতি আমার ভালবাসার চেয়ে পৃথক নয়। ও একই ধরণের, একই জাতীয়। যেখানে হৃদয়ের অমৃভূতি নেই, ভালবাসা নেই, সেখানে ঈশ্বরও নেই । ভগবানের প্রতি সেদিন যে ভক্তি আমার এল—তী এল একটা অপূৰ্ব্ব আনন্দের রূপে—সত্যিকার ভক্তি একটা Joy of life."আত্মা, দেহ, মন সেখানে আনন্দে, মাধুর্য্যে আপুত হয়ে যায় । ঠিক মালতী আমাকে ভালবেসেছে বা আমি মালতীকে ভালবেসেছি এই ভেবে যেমন হয় তেমনি । কোন পার্থক্য নেই। একই অনুভূতি—দুটো আলাদা আলাদা নাম মাত্র । এতেও মন অবশ হয়ে যায় আনলো— \8USS I উপলব্ধি ক’রে বুঝলুম যদি কেউ আমাকে আগে এ-সব কথা বলত, আমার কথনই বিশ্বাস হ’ত না । হওয়া সম্ভবও নয় । সাধুজী সন্ধ্যাবেল রোজ ধৰ্ম্মকথা পড়েন। আমি মনে মনে বলি সাধুজী আপনি জীবন দেখেন নি । ভালবেসেছেন কখনও জীবনে ? প্রাণ ঢেলে ভালবেসেছেন ? যে কখনও নরুণ হাতে নিতে সাহস করে নি, সে যাবে তলোয়ার খেলুতে ? শুকনো বেদাস্তের কথার মধ্যে ঈশ্বর নেই—যেখানে ভাব নেই, ভালবাসা নেই, হৃদয়ের দেওয়ানেওয়া নেই, আপনাকে হারিয়ে ফেলা, বিলিয়ে দেওয়া নেই—সেখানে ভগবান নেই, নেই, নেই। হৃদয়ের খেলা যে আস্বাদ করেছে, ও রস কি জিনিষ যে বোঝে—ভগবানকে ভালবাসার প্রথম সোপানে সে উঠেছে। আমি মালতীর কথা এত ভাবি কেন ? সে আমাকে এত অভিভূত ক’রে রেখেছে কেন দিন, রাত, সকাল, সন্ধ্যা ?---এই বিক্রমশিলা বিহারের পাহাড়মাল, বনশ্রেণী, পাদমূলে প্রবাহিত পুণ্যস্রোতা নদী, সন্ধ্যার পটে রাঙা সূৰ্য্যাস্ত, বনচমেলীর উগ্র উদাস গন্ধ—এসবের মধ্যে সে আছে, তার হাসি নিয়ে, তার মুখভঙ্গি নিয়ে, তার গলার সুর নিয়ে, তার শতসহস্র টুকরো কথা নিয়ে, তার ছেলেমানুষী ভঙ্গি নিয়ে । কেন তাঁকে ভুলি নি, কেন তার জন্তে আমার মন সৰ্ব্বদাই উদাস, উন্মুখ, ব্যাকুল,বেদনায় ভর, স্মৃতির মাধুর্যে আপ্লুত, নিরাশীর যন্ত্রণাময়—হঠাৎ তাকে এত ভালবাস্লুম কেন ? তার কথা মনে যখন আসে, তখন কেওলিন খনির উপরকার পাহাড়চূড়াটায় একটা বকাইন গাছের গুড়ি চেস দিয়ে সারাদিন তার কথা ভাবি—খাওয়াদাওয়ার কথা মনে থাকে না, ভলিও লাগে না—তার মুখের হাসির স্মৃতিতেই যেন আমার শান্তিময়, নিভৃত, গৃহকোণ, তার কথার সুর দূরের ব্যবধান ঘুচিয়ে, মাঠ নদী বন পাহাড় পার হয়ে ভেসে এসে আমায় প্রদীপজালানো, শান্ত আঙিনায় ছোট্ট খড়ের রান্নাঘরের এক পাশে উপবিষ্ট নিরীহ গৃহস্থ সাজায়—জীবনে তাই যেন চেয়ে এসেছি, সব রাশা, সবকিছু ভুলিয়ে দেয়, অতীত বৰ্ত্তমান ও ভবিষ্যৎ একাকার হয়ে যায়---এদিকে রোদ চড়ে ওঠে কিংবা সূৰ্য্য চলে পড়ে, বটেশ্বরনাথের পাহাড় রঙে রঙে রাঙা হয়, পার্থীর গান হঠাৎ যায় থেমে—সাধুঞ্জীর চেলা বৰ্ম্মানারায়ণ আমাকে খুঁজতে আসে চা খাবার জন্তে--তখন অনিচ্ছা সত্ত্বে উঠতে হয়---গাজার ধোঁয়ায় অন্ধকার সাধুবাবাজীর গুহার সামৃনে ব’সে দুধবিহীন কড়া চ খেতে থেতে হনুমানচরিত শুনতে হয় । সাধুঞ্জী আমাকে ভালবাসে । এই জন্তেই ওর এখানে আছি। এখানে পয়সার খরচ নেই বললেই হয়। বাবোটা