পাতা:প্রবাসী (চতুস্ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৪২৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8ግ8 টাক এনেছিলুম, সাধুজীর হাতে তুলে দিয়েছি—নিতে চান নি—আমি পীড়াপীড়ি ক’রে দিয়েছি। একবেল খাই মকাইয়ের ছাতু, একবেলা রুটি আর ঢেড়সের তরকারী । অল্প কিছু এখানে মেলে না । কেওলিন খনির ম্যানেজার মাঝে মাঝে কহলগাও থেকে মাছ আনয়, সেদিন ওর বাংলো-ত আমায় খেতে বলে—কারণ সাধুর এখানে ওসব করিবার হবার যে নেই । মালতীর সঙ্গে আবার দেখা হবে না ? কিন্তু কি ক’রে হবে তা ত বুঝি নে। আমি আবার সেখানে কোন ছুতোয় যাবে ? উদ্ধবদাস বাবাজী অমায় ভাল চোখে দেখতে না । দু-একবার অসন্তোষ প্রকাশও করেছিল, মালতীর সঙ্গে যখন বড় মিশছি—তখন । দু-একবার আমায় এমন অভিাসও দিয়েছিল যে এথানে বেশী দিন আর থাকলে ভাল হবে না । ও সবে আমি ভয় করি নে। সপ্তসিন্ধুপারের দেশ থেকে, মালতীকে আমি ছিনিয়ে আনতে পারি, যদি আমি জানতাম যে মালতীও আমায় চায়। কিন্তু তাতে আমার সন্দেহ আছে । সেই সন্দেহের জন্তেই ত বেদনা, ঘাঁ-কিছু যন্ত্রণা। কি জানি, বুঝতে পারি নে সবখানি । রহস্যময়ী মালতীর মনের খবর পূরে এক বছরেও পাই নি। এক-একবার কিন্তু মনে কোন সন্দেহ থাকে না । মনে হয় তা নয়, আমি তাঁকে পেয়েছিলাম। আমার মনের গভীর গোপন তল থেকে কে বল, আত সন্দেহ কেন তোমার মন ? তোমর চোখ ছিল কোথায় ? মালতীকে বোঝ নি এক বছরেও ? মালতী—কি মধুর্যের রূপ ধরেই সে মনে আসে ! তার কথা যখনই ভাবি, অস্ত-আকাশের অপরূপ শোভায়, পাহf:ড়র ধুসর ছায়ায়, গঙ্গার কলতানের মধ্যে, ওপারের খাসমহলের চরে কলাইওয়:লীরা মাথায় কলায়ের বোঝা নিয়ে ঘরে যখন ফেরে, যখন শীদ পাল তুলে বড় বড় কিস্তি কহলীয়ের ঘাট থেকে বাংলা দেশের দিকে যায়---কিংবা যখন গঙ্গীর জলে রঙীন মেঘের ছায় পড়ে, থেয়ার মাঝিরা নিজেদের নৌকাতে বসে বিকট চীৎকার ক’রে ঠেটু হিন্দীত ভজন গায়—সমস্ত পৃথিবী, আকাশ পাহাড় একটা নতুন রঙে রঙীন হয়ে ওঠে আমার মনে—ওই দূর বাংলা দেশের এক নিতৃত গ্রামের ఏరిeS. কোণে মালতী আছে, যখন আবার বর্ষ নামে, খুব ঝড় ওঠে, কিংবা পুকুরের ঘাটে এক গা ধুতে খায়, কি বিষ্ণুমন্দিরে প্রদীপ দেখায় সন্ধ্যায়—আমার কথা তার মনে পড়ে না ? আমার ত পড়ে—সব সময়ই পড়ে, তার কি পড়ে না ? মালতীকে নিয়ে মনে কত ভাঙা-গড়া করি, কত অবস্থায় দু-জনকে ফেলি মন মনে, কত বিপদ থেকে তাকে উদ্ধার করি, আমার অসুখ হয়, লে আমার পাশে ব’সে না ঘুমিয়ে সারারাত কাটায়—কত অর্থকষ্টের মধ্যে দিয়ে দু-জনে সংসার করি—সে বলে—ভেবে না লক্ষ্মীটি, মদনমোহন আবার সব ঠিক ক’রে দেবেন । তার ছোটখাটো সুখদুঃখ, আখড়ার বিগ্রহের ওপর গভীর ভক্তি ও বিশ্বাস, তার সেবা— আমার ভাল লাগে। মনে হয় কত মেয়ে দেখেছি, সবারই খুৎ আছে, মালতীর খুৎ নেই। আবার মেয়েরা যেখানে বেশ রূপসী, সেখানে মনে হয়েছে এত রূপ কি ভাল ? মালতীর স্নিগ্ধ খামল সুকুমার মুখর তুলনায় এ-দর এত নিখুৎ রূপ কি উগ্র ঠেকে ! মোটের ওপর বেদিক দিয়েই যাই—সেই মালতী ! এক-এক বীর মনকে বোঝাই মালতীর জন্তে অত ব্যস্ত হওয়া দুঃখ বাড়ানো ছাড়া আর কি ? তাকে আর দেখতেই পাব না । তাদের আখড়াতে আর যাওয়া ঘটবে না । স্বপ্নক আঁকড়ে থাকি কেন ? কিন্তু মন যদি অত সহজে বুঝতো ! মালতী একটা মধুর স্বপ্নের মত, বেদনার মত, কত দিন কানে-শোনা গানের মুরের মত মনে উদয় হয় । তখন সবই সুন্দর হয়ে যায়, সবাইকে ভালবাসত ইচ্ছ করে, সাধুর বকুনি, পাণ্ডা-ঠাকু রর জ্ঞাতি-বিরোধের কাহিনী—অর্থাৎ কি ক'রে ওর জ্যাঠতুতো ভাই ওকে ঠকিয়ে এতদিন বটেশ্বর শিবের পাগুগিরি থেকে ওকে বঞ্চিত রেখেছিল তার সুদীর্ঘ ইতিহাস—সব ভাল লাগে । কিন্তু কোন কথা বলতে ইচ্ছে করে না তখন, ইচ্ছে হয় শুধু বসে ভাবি, ভাবিসর দীর্ঘ দিনমান ওরই কথা ভাবি । ు) বটেশ্বরনাথ পাহাড়ের দিনগুলো মনে অক্ষয় হয়ে থাকবে। রূপে, বেদনায়, স্মৃতিতে, অনুভূতিতে কানায় কানায়