পাতা:প্রবাসী (চতুস্ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৪৭২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

w o գՀՋ so

    • SSBS

করতে বোধ হয় তোমার কষ্ট হচ্ছে । তা ছাড়া, রান্নাও ত আগের মত আর সুস্বাদ হয় না মা ! বীরেশ্বরের ওষ্ঠের এক প্রাস্তে একটু হাসির বিদ্যুৎ খেলে গেল। মা ঈষৎ অহিত হলেন । বললেন, "আর পারিনে বাপু বুড়ো হয়েছি, তোমাকে সংসারী দেখে যেতে পারলে আমি নিষ্কৃতি পাই।’ ক্রমশঃ বীরেশ্বর তার অবহেলিত সংসারধৰ্ম্মের প্রতি আস্থাবান হয়ে উঠতে লাগল। কেষ্টর সম্বন্ধে অকস্মাৎ সে অতি সচেতন হয়ে উঠতে লাগল। তাকে এখন থেকে পড়াগুনার দিকে আকৃষ্ট করা দরকার নইলে তার ভবিষ্যতের কি হবে ? পুত্রের ভবিষ্যৎ বীরেশ্বরের মনকে বিচলিত ক’রে তুলল। বীরেশ্বর এত বেশী বিচলিত হয়ে উঠল যে, তার মা’র কোনো কাজই আর তার পছন্দ হয় না। কেষ্টকে যদি তার মা কিছু বলেন, অমনি সে রেগে অগ্নিশৰ্ম্ম হয়ে ওঠে। অবশেষে এক শুভদিনে দীর্ঘশিথী-সমন্বিত এক ঘটকের শুভাগমন হ’ল বাড়িতে। তার যাতায়াত চলতে থাকৃল । একদা শ্রাবণের মেঘাচ্ছন্ন সন্ধ্যায় বীরেশ্বর বড় আশা ক’রে সংসারী হয়েছিল ! আবার এক ফাল্গুনের প্রসন্ন সন্ধ্যায় বীরেশ্বর সংসারে পুনঃ প্রবেশ করল। সংসার যাকে ডাকে, তাকে এমনি ক’রেই ডাকে। সকলেই বলল, আহা বীরেশ্বরের বরাত খুব ভাল, সেবারও একটি লক্ষ্মী মেয়েকে বিয়ে করে এনেছিল, এবারেও বৌটি এসেছে খাস ! বীরেশ্বরের মা বেশী ধুমধাম করতে দেন নি বিয়েতে । বেশী খরচপত্র করে জাকজমক দেখিয়ে কোনো লাভ নেই। ছেলের যে বরাত, তাতে কোনো কিছুই ভরসা হয় না । একদল ব্যাগপাই ওয়াল বাইরের বাড়ির সম্মুখে আশ্রয় নিয়ে সারাক্ষণ বাজিয়ে চলেছে। সন্ধ্যা হয়ে এসেছে, এমন সময় চারিদিকে হুলুধ্বনি পড়ে গেল। বৌ এসেছে, নতুন বোঁ ! বীরেশ্বরের মা তাড়াতাড়ি বাইরে বেরিয়ে এলেন । তার কোলে রয়েছে কেষ্ট, সে ব্যাগ পাইপের সঙ্গে সঙ্গে কান্নার বাজনা আরম্ভ করেছে। তাকে একটি মেয়ের কোলে ছেড়ে দিয়ে তিনি বাইরে বেরিয়ে এলেন । নতুন বৌ-কে তখন সব এয়োরা বরণ করছে। বরণ করার সময়ে তিনি স্থির হয়ে ছান্‌লাতলার পাশে দাড়িয়ে রইলেন। তার আর এক দিনের দৃশু মনে পড়ে গেল। এমুনি ক’রেই আর একটি বধু এসেছিল, যাবার সময় সে বড় দাগ দিয়ে গেছে, তার কথা সহজে ভোলা যায় না। বরণ শেষ হ’য়ে গেছে, গাঁটছড়া-বাধা অবস্থায় বীরেশ্বর ও বধূর এখন ঘরে ওঠার কথা । সহসা বীরেশ্বরের মা বলে উঠলেন, “ওগো, তোমরা গ্যাসের আলোটা একবার তুলে ধরে, মা’র মুখখানি আমি একবার দেখব।” গ্যাসের আলো তুলে ধরা হ’ল। বধূয় মাথার চেলির গুণ্ঠনের চারিদিকে কষ্ঠাপত্রিকা। সেটিকে একটু সরিয়ে গুণ্ঠন তুলে ধরা হ’ল । বন্ধু নতনেত্রে শাশুড়ীর পদপ্রাস্তে চেয়ে রইল। মা’র বুকটি একবার ধক ক’রে উঠল। ধীরে ধীরে তিনি বধুর চিবুকে হাত দিয়ে বললেন, ‘মুখটি একবার তোলো ত মা, তাকাও, তাকাও আমার দিকে, ভয় কি তোমার ? টানা টানা সুন্দর দুটি চোখ ! ভুরুঙ্গুটি যেন কোনো শিল্পীর হাতে রূপ নিয়েছে ! সি'থির প্রান্ত থেকে চূর্ণ চুর্ণ কালো চুল নেমে এসেছে মাথার দু-পাশ দিয়ে—সেইদিকে একবার চেয়ে বীরেশ্বরের মা’র চোখে জল এল ! এমন সাদৃশ্ব ত স্বপ্নেও ভাবা যায় না—এ যেন অণিমাই আবার ঘুরে এল! বধুকে কোলে টেনে নিয়ে কান্না তার যেন আর থামৃতেই চায় না । বধুর নাম স্বরম । প্রকাও বড় দালানের ভিতর দিয়ে স্বরম হেঁটে যাচ্ছে, হঠাৎ পিছন থেকে কে ডাক্ল, ‘অণিমা । সুরমা তাকিয়ে দেখল, তার শাশুড়ী। তিনি ঈষৎ হেসে বললেন, ‘ওমা, এমন ভুলও মানুষের হয় ! হঠাৎ কেমন যেন মনে হ’ল— কিছু মনে ক’রে নামা !" সুরমা লজ্জায় আড়ষ্ট হ’য়ে দাড়িয়ে রইল ! সে যে সুরমা, এ-কথাটি মেনে নিতে এ-বাড়ির লোকদের বোধ হয় কিছু দেরি হবে। সুরমার কেমন যেন অস্বস্তি বোধ হ’ল । কে অণিমা ? তার ব্যক্তিত্বের সঙ্গে সুরমার কি যোগ ठttझ ? মৃদুকণ্ঠে সুরমা জানাল যে, সে কিছু মনে করে নি ।