পাতা:প্রবাসী (চতুস্ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৪৭৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মাঘ রূপাত্তর む、な অধ্যায়টি সুরমার কাছে অজ্ঞাত, সেই অধ্যায়টির সমস্ত খুটিনাটি সুরমার জানতে বড় ইচ্ছা করে ; কিন্তু বীরেশ্বর তার মনের সমস্ত স্বার বন্ধ ক’রে সেখানে অতি সতর্ক পাহারা বসিয়েছে। ভুলে যেতেই চায় বীরেশ্বর, ভুলে গিয়ে তার নূতন জীবনেয় আনন্দ সে পেতে চায়—বীরেশ্বরের এই অভিলাষ সুরমার কাছে অজ্ঞাত। কিন্তু বীরেশ্বরের সমস্ত উৎসাহ এই সতর্ক পাহারায় নিঃশেধিত হয়ে যায়— মনের যে নুতন শাখাটিতে পল্লব মুঞ্জরিত হবে, মুকুল ধরবে, সেদিন বীরেশ্বরের কেমন যেন একটা সঙ্কোচ । সংসারের এক দিকে এই সঙ্কোচ, সাবধীনতা আর গাম্ভীৰ্য্য আর একদিকে শুধু ‘অণিমা’ ‘অণিমা’ রব—সুরমার জীবনে অবিমিশ্র শান্তি আনতে দিল না । “দেখ, সুরমা, কেষ্টকে একটু-আধটু পড়িও, মা’র কাছ থেকেই ছেলেরা শিক্ষা পায় প্রথম’—বীরেশ্বর একদিন বলল সুরমাকে । সুরমা তখন অতি যত্নে কাপড়গুলি কু’চিয়ে রাখছিল। তার মনের সেই মধুর নিষ্ঠীর ভাবটি যেন আহত হ’ল বীরেশ্বরের কথায় । সুরমা অতি ধীরভাবে বলল, এত অল্পবয়সেই কি পড়বে, আরও কিছুদিন যাক, তবে ত ”ি "দেখ ঠিক ঐ কথাই অণিমা বলুত, বলুত—” বীরেশ্বরের মুখের কথা অদ্ধ পথে থেমে গেল, কারণ, এর আগে দু-এক বার অণিমা-সম্বন্ধে সুরমার অসহিষ্ণুতার পরিচয় সে পেয়েছিল । অণিমার নাম শুনেই সুরমা তাড়াতাড়ি কাপড়-ক্টোচানো শেষ ক’রে ধর থেকে বেরিয়ে গেল । উভয়ের মধ্যে কেষ্টকে কেন্দ্ৰ ক’রে কথাবাৰ্ত্তা আর তেমন জমৃতে পেল না । নদীর স্রোতের মাঝখানে কে যেন বাধ বেঁধে দিয়েছে । উপচীয়মান জলভার বাধের প্রাস্তদেশে এসে কলরোল তুলেছে। প্রবাহের বাধাহীনতার ভাবটা যেন আর আসে না কিছুতেই । মা এসে সম্মুখে বসেছেন, বীরেশ্বর খেতে বসেছে। বীরেশ্বরেয় থfওয়া প্রায় অৰ্দ্ধেক হয়েছে, এমন সময় মা বললেন, ‘একটা কথা বলি বীরু তোমাকে ! বোমার আমার শরীর গুকিয়ে যে আধখানা হয়ে গেল, অথচ তুমি స్క్రిస్త్రి ఆస్టి কোনো ব্যবস্থাই করলেন, না ডাক্তার, নারদি, কিছুr —তার পর কণ্ঠস্বর ঈষৎ নামিয়ে বললেন, ‘অণিমাও ঐ রকম শুকিয়ে যাচ্ছিল, তার পর এক দিন কঠিন রোগ দেখা দিল ; পত্নীঘাতী-যোগ আছে তোমার—আমি যা বলি শোন, ভাল ডাক্তার নিয়ে এসে সুরমাকে দেখাও, এই বয়সে আর রোগ-তাপ ভাল লাগে না বাপু ।” বীরেশ্বর কোনো কথা না ব’লে একমনে খেয়ে যেতে লাগল। তার মনে হচ্ছিল সমস্তই ব্যর্থ হবে, স্বয়মাও একদিন হয়ত এ বাড়ি থেকে বিদায় নেবে। কিছুক্ষণ পরে মুখ তুলে সে বলল, “কি আর হবে ডাক্তার দেখিয়ে মা ? সারবার হ’লে ও আপনিই সেরে যাবে, তোমরা অণিমার নামটি ওর কাছে বেশীবার ক’রে না । তাকে ভুলে ষাও মা, তাকে ভুলে যাও।” মা ঈষৎ আদ্র কণ্ঠে বললেন, ‘ভোলা কি সহজ কথা পাগল ? তবে সুরমও তার কাছে কোনো অংশে খাটো নয় । তাকে হয়ত ভুলে যেতে পারি, কিন্তু একে ভুলতে পারব না, আমি বলি, তুমি শীগীর ডাক্তার আনবার ব্যবস্থা করে ।” বীরেশ্বর শুধু সংক্ষেপে বললে, “আচ্ছা তাই হবে সেদিন সন্ধ্যায় বীরেশ্বর আর বাড়ির বার হ’ল না । নির্জস ঘরের মধা ধুপের একটা চমৎকার গন্ধ আসছে ; কেউ কোথাও নেই ! এই অবকাশে সে হরমার একটু সত্যিকার সন্নিধ্য অনুভব করতে চায় ।” সুরমা ঘরে ধুপ দিয়ে জানালার বাইরে চেয়ে আছে। মনটা তার নিরুদ্দেশের দিকে ভেসে যেতে চায়। কোথায় তার ঘর ? ঘরের অস্তিত্ব তার কাছে নিরর্থক--আর এক জনের শুষ্ঠ আসনের উপর সে প্রাণপণে নিজের অধিকার দাবি করবার চেষ্টা করছে, কিন্তু সে চেষ্টা বৃথা, সে আসনের কিছুমাত্র মর্যাদা তার কাছে নেই। তার একটা নিজের স্থান কি কোথাও নেই ?—আজিও তার মনের মধ্যে সেই একই চিন্ত বারে বারে জেগে উঠছে। এই রকম ভাৰছে সুরমা, এমন সময়ে বীরেশ্বর নিঃশব্দে ঘরে এসে দাড়াল। ঘরে আলো নেই, শুধু ধুপের একটা মৃত্ন সৌরভ আসছে এক জানাল দিয়ে বাইরের সন্ধ্যাকাশেৰু ,