পাতা:প্রবাসী (চতুস্ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৪৭৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

位令息 চাদ-ই ও কত দেখতে পারে ?—মনে মনে এই ভেবে সুরমা কেষ্টকে নিয়ে তাড়াতাড়ি সিড়ি বেরে উপরে উঠে গেল । অশ্বশ্ব আর বাশ বনের জটলার পর থেকে চারি দিক আলো ক’রে চাদ উঠছে। কয়েকটি ছোট ছোট পার্থী সেই সপ্তবিকশিত আলোক-পথটির উদ্দেশে কলকণ্ঠে অভ্যর্থনা জানাচ্ছে। ছাদের উপর থেকে কেষ্টকে চাদ দেখাতে হবে। সুরমা আলুসের কাছে দাড়িয়ে কেষ্টর দিকে চেয়ে বলল, "এ দেখো কেষ্ট, চাদ উঠছে ? কেষ্ট তৎক্ষণাৎ বলে উঠল, "আর, তার ! ‘আবার তারাও দেখাতে হবে —সুরমা বলে উঠল। "ই, হবে, তারাও দেখতে হবে P—কেষ্টর চেয়ে এ কণ্ঠস্বর ঢের বেশী গৰ্ত্তীর ; বীরেশ্বর ছাদে বসে বই পড়ছিল, সুরমাকে দেখে উঠে এসেছে । সুরমার আর তারা-দেখানোর ধৈর্য্য রইল না । তাড়াতাড়ি কেষ্টকে বীরেশ্বরের পায়ের কাছে নামিয়ে দিয়ে ক্রতপদে সিড়ি বেয়ে নীচে চ’লে গেল । বীরেশ্বর ছেলেকে কোলে তুলে নিল। প্রকাও ছাদের উপর তাকে কোলে নিয়ে বীরেশ্বর ঘুরতে লাগল। একটি দুটি ক’রে অনেকগুলি তারা উঠেছে আকাশে । কেষ্টকে আদর করতে করতে বীরেশ্বর বলল, “কেষ্ট, কোন তারাটি তোমার ?” কেষ্ট বিহ্বলভাবে আকাশের দিকে আঙুল দেখিয়ে বলল, ঐ যে ” - বীরেশ্বর দেখল বঁাশগাছের পিছনে খুব বড় একটা তারা দপদপ ক’রে জলছে। কেষ্টর দিকে তাকিয়ে চেয়ে সে বলল, “কেষ্ট ঐটে তোমার ?” কেষ্ট তখন আর একদিকে আঙুল দেখিয়ে বলল, “না, ঐ যে ।” বীরেশ্বরের মনে পড়ল ঠিক অমনি ক’রেই অণিমা তার ছেলেকে নিয়ে তারাদের সঙ্গে থেলা করত । বীরেশ্বর কেষ্টকে জিজ্ঞাসা করল, “কেষ্ট, তোমার মা কোথায় ?” কেষ্ট তৎক্ষণাৎ উত্তর দিল, ‘মা ? মা নীচে আছে।’ বীরেশ্বর বলল, না কেষ্ট, মা তোমার ঐখানে আছে।’ —ব’লে সে আকাশের দিকে বঁাশগাছের পিছনের সেই বড় তারাটির দিকে অঙিল দিয়ে দেখিয়ে দিল। " বাসনা ;) rవన983 কেষ্ট কিছুতেই তা স্বীকার করে না । সে ক্রমাগত বলে চলল, “মা নীচে আছে ? বীরেশ্বরের মনটা প্রসন্ন হ’ল এই ভেবে ধে, ছেলে যদি সুরমাকে এখনই মা বলে চিনে নিয়ে থাকে, তাহলে পরিণামে ভয়ের অণর কোনে কারণ থাকে না । অবশেষে সে ছেলের কাছে পরাজয় স্বীকার ক’রে বলল, ‘ধ্যা কেষ্ট, মা তোমার নীচেই আছে।’ শূন্ত স্থান ক্রমশঃ পূর্ণ হয়ে আসছে। শাশুড়ী, কেষ্ট ঝি-চাকর সকলেই সুরমার মধ্যে অণিমাকে প্রতিক্ষণে দেখতে পাচ্ছে। সেই হাসি, সেই মধুর কথাবলীর ভঙ্গী, সেই কৰ্ম্মশীলতা—আর কোনো কিছুর প্রয়োজন নেই। সংসার প্রতিদিন প্রতিনিয়ত মানুষের কাছ থেকে যা আশা করে, দাবি করে, মরমীর কাছ থেকে তা পাওয়া যাচ্ছে— আর কোনো কিছুর প্রয়োজন নেই। যেটা অণিমার প্রাপ্য, সেটা তাই সুরমার পদতলে অনায়াসে সমৰ্পিত হ’তে থাকৃল। অত শাস্তির মধ্যেও কিন্তু সুরমার মনের ক্ষোভ মেটে না । অণিমার ব্যক্তিত্বের কাছে তার হ’ল পরাজয়, তার যে একটা স্বাতন্ত্র্য ছিল, সেই রূপটির দিকে কেউ ভুলেও চাইল না । একটা মনগড়া, সান্তুনার সাদৃষ্ঠের মধ্যে সেটা লুপ্ত হ’য়ে যেতে উদ্যত। অণিমাকে তার সঙ্গে মিশিয়ে দিয়ে এরা অণিমাকে তুলতে চায়, কিন্তু যেদিন সমস্ত শান্তি আর প্রসন্নতার মধ্যে সুরমার তুচ্ছতম কোনো ক্রটি ঘটবে সেদিন অণিমা তার সমস্ত বিগত ঔজ্জ্বল্য নিয়ে জেগে উঠবে। হায়, সেদিন সুরমার স্থান কোথায় হবে ? একটা স্থান যদি কোথাও তার থাকৃত,—তার নিজের ! বীরেশ্বরকে সুরমা আজও চিনতে পারে নি—গ্রচ্ছন্ন, গম্ভীর ; নিজের চারি দিকে সে যেন একটি দুর্ভেদ্য গণ্ডী রচনা করেছে। সুরমার তৃপ্তিহীন ক্ষুব্ধ মন সেই গণ্ডী অতিক্রম করতে পারে না । অনেক সময় বীরেশ্বরকে দেখলে সুরমার কেমন যেন ভয় হয়। বীরেশ্বর যেন জীবনের বহু অভিজ্ঞতার প্রাস্তে এসে দ্বাড়িয়ে স্থির হয়ে আছে । সেই অবিচলিত প্রশাস্তি সুরমাকে যেন আঘাত করে—এই লোকটির জীবনের যে