পাতা:প্রবাসী (চতুস্ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৫০৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

&&\, জাগিয়া পড়িয়ছে, স্কুলের বই নয়, ডেভিড কপারফিল্ড নামে এক গল্পের বই, তাহার কাকার লাইব্রেরী হইতে আনিয়াছিল ; কাকা কিন্তু রাত বারোটfর মধ্যেও ফেরেন নাই। বড় করুণ ডেভিডের জীবন, কিন্তু সে বড় বোকা, ফ্ল্যাগনেস যে তাঁহাকে ভালবাসে, তাহা সে বুঝিতে পারিতেছে না, ডোরাকে বিবাহ করিয়া সে কি সুখী হইবে ? বেীকার জীবনে ত অসুধীই হইবে । আচ্ছ, র্যাগনেস কাহীকে বিবাহ করিবে ? সে বড় ভাল মেয়ে । চার্লস ডিকেন্স লেখেন ভাল । ঘড়ির শব্দ ধীরে অন্ধকার মিলাইয়া গেল। বাড়ির পূব দিকের বাগান পাখীর গানে ভরিয়া উঠিল । অরুণের আর ঘুম আসিল না । চোখ মেলিয়া সে গুইয়া রহিল । নানা কারুকার্যময় বৃহৎ খাট, ঘরের এক-তৃতীয়াংশ জুড়িয়া তাহার মায়ের বিবাহের খাট, মেহগনী পালিশ প্রায় কালো হইয়া গিয়াছে । থাটের মাথায় দক্ষিণ দেওয়ালে অরুণের মাতার বৃহৎ অয়েল-পেন্টিং ; মায়ের মৃত্যুর পর তাহার পিতা এক ফরাসী চিত্রকর দিয়া ফটো হইতে এই ছবি আঁকাইয়াছিলেন । এ ঘরে পিতার বৃহৎ ব্রোমাইড এন লাজমেণ্ট রাখিবার আর স্থান নাই, আর তাহার ছোটবেন পতিম! তাহার ঘরে একটি ফটো রাখিতে চায় ; স্বর্গগত জনকজননীর ছবি আসবাবপত্র জিনিষ দুই ভাইবোনে ভাগ করিয়া লইয়াছে । ভেlরবেলায় ঘুম ভাঙিয়া গেলে অন্ধকরময় স্নিগ্ধ স্তব্ধতায় অরুণের ছেলেবেলার কথা ভাবিতে ইচ্ছা করে, —স্বপ্নছবির পর স্বপ্নছবি । সোনালী শস্ত্যভরা অবারিত মাঠের মধ্য দিয়া নদীর রজতধারা আঁকিয়া-বাকিয়া সুনীল প্রাস্তরে গিয়া মিশিয়াছে, তাহার তীরে তাহদের বাংলোবাড়ি ছবির মত ; সেখানে বাবা ও মায়ের সঙ্গে সে ও টুলি কি সুখে আননো দিন কটাইয়াছে,-নদীতে সীতারকাটা, বাগানে ফলপাড়া, বাবার সঙ্গে বজরাতে টুরে’ যাওয়া, আমগাছে পাপ দেলিনাতে দোলা, সেই বুড়ো বটগাছের তলায় চড় ইভাতি, সন্ধায় মায়ের গল্প বলা—তখন তাহারা ডেপুটি সাহেবের ছেলেমেয়ে, কত যত্ন, কত আদির | &প্রবাসী; • ఏరి8ు মা কি সুন্দরী দেখিতে ছিলেন, তেমনি সুন্দর রাধিতে পারিতেন । ফরাসী fচত্রকর অরুণের করমর্দন করিয়া জিজ্ঞাসা করিয়াছিল,—কি হে, ঠিক হয়েছে, তোমার মা’র ছবি ? সে উত্তর দিয়াছিল আমার মা এর চেয়ে অনেক হুন্দরী ছিলেন, সে তুমি আঁকতে পারবে না । সে স্নিগ্ধ সৌন্দর্য্য অয়েল-পেন্টিঙে কেমন করিয়া আসিবে ! এ দৃষ্টিতে সে স্নেহ-মমতা কই ? দরজায় করাঘাত হইল। অরু, উঠেছিল—ওঠ, অরু— উঠেছিস অরু । ঠাকুমার গল । ঠাকুমীকে সে বলিয়াছিল, ভোরে জাগাইয়া দিতে। দরজা ধাক্কা দিয়া খুলিয়া জলছড়া দিয়া ঠাকুম চলিয়া গেলেন। অরুণকে এবার উঠতেই হইল । সিঁড়ির উত্তরে প্রতিমার ও দক্ষিণে অরুণের ঘর, মধ্যে ঘোরান-সিড়ি পূজার দালানের পাশ দিয়া দুই মঙ্গল বিভাগ করিয়া ছাদ পর্যন্ত উঠিয়া গিয়াছে ; দুই মহলওয়ালা বৃহৎ বাড়ি প্ল্যান করিয়া তৈরি নয়, গত নব্বই বৎসর ধরিয়া ঘোৰ্য-বংশের নানা কক্টর পুশমিত গড়িয়া উঠিয়াছে— ছোট-বড় ঘর, নানা বরানা, আঁকাবাকা অন্ধকার করিডর, অন্ধ কুঠুরী, বাড়িটি বিচিত্র গোলকধাপ । হাত-মুখ ধুইয়। অরুণ সিড়ির ঘরে আসিয়া দাড়াইল । প্রতিমার ঘরের দরজা বন্ধ, কোন সাড়াশব্দ নাই । প্রতিমা ভোরে উঠিয়া গান গায়, গলা সাধে । আজি কোন অসুখ করিল কি ? কাল রাতে সে ভাল করিয়া খায় নাই । মাঝে মাঝে প্রতিমার জষ্ঠ তাহীর বড় ভাবনা হয়, বড় ( ( | তেতলার ছাদে সিড়ির পাশে এক ছোট ঘর ভাঙা চেয়ার ঝাড়লণ্ঠন দেড় সতরঞ্চি কাপেট ইত্যাদি সভা সাজাইবার নানা বহুব্যবহৃত দ্রব্যে পূর্ণ ছিল, সেই ঘর সাফ করিয়া অরুণ তাহার পড়িবার ঘর করিয়াছে । এ-বৎসর তাহার মাটিক পরীক্ষা, এখন তাহীর সকল প্রকার সুবিধা করিয়া দিবীর জন্ত সকলে উদ্যোগী । অরুণ পড়ার ঘরে গেল না, এক তলায় নামিল। বড় লাইব্রেরী-ঘরের পাশ দিয়া পূর্ব দিকের বাগানে বহির হইয়া গেল। ক্লাসের কোন পড়া ভাল করিয়া হয় নাই, তবু পড়িতে বসিতে তাহার মন লাগিতেছিল না। আপন