পাতা:প্রবাসী (চতুস্ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৫২৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মাঘ পরলোকগত ঈ বী হাভেল (ఫ్రె লাটিন্‌স ষে প্রকাও ভুল করছিলেন, সে-কথাও তিনি বললেন। তিনি আমায় বার বার বললেন, “তুমি তোমার দেশে গিয়ে দিল্লীতে এবং কলকাতায় শিক্ষাদানের ভার নিয়ে কাজ শিখাও, তাতে খুব বড় কাজ ও উপকার হবে।” লগুনে যে ইণ্ডিয়া অফিস হবে, তাও তিনি জানতেন, এবং তাতেও দেশী শিল্পীদের কাজ করা এবং দেশী ভাবের স্থাপত্য হওয়া উচিত সে কথাও তিনি আমাকে বলেছিলেন । তিনি এই সব ব্যাপার নিয়ে সেই সময়ে কাগজপত্রে খুব লেখালেখি করছিলেন ; সেই সব কাগজপত্রও আমায় দেখালেন। চল আসবার সময় হাভেল সাহেব তার লেখা “The Himalayas in Indian Art” (“sfärälä wifoকলীয় হিমাদ্রি” ) বইখানি আমায় উপহার দিলেন : বইখানি মাথায় চুইয়ে আমি বিদায় নিলাম। আমার সঙ্গে তার দেখাসাক্ষাৎ এই একবারই হয়েছিল, কিন্তু ভারতের দুঃখে দুঃখী এবং ভারতের চিন্তায় নিমগ্ন সেই ঋষিমুৰ্ত্তি চোখের সমূনে আমি এখনও দেখতে পাচ্ছি । ভারতবর্ষকে নানা দেশের নানা লোকে নানা ভাবে ভালবেসে এসেছেন, কিন্তু ভারতীয় শিল্পকে হাভেল সাহেবের মত এমন গভীর ও একনিষ্ঠ ভাবে জীবনের সব সময়ে কেউ ভালবেসেছেন কি না আমার জানা নেই । বিদেশীর মধ্যে তিনিই প্রথম ভারতবর্ষের শিল্পকে বিদেশীর হাত থেকে উদ্ধার ক’রে তার নিজস্ব মূৰ্ত্তিতে প্রকাশ হবার সাহায্য করেন । সেই জঙ্গ তিনি বর্তমান কালের সমস্ত শিল্পীরই আন্তরিক শ্রদ্ধার পাত্র । আর্নেষ্ট বিন্‌ফীল্ড হাভেল শ্ৰীঅৰ্দ্ধেন্দ্রকুমার গঙ্গোপাধ্যায় এক জাতির পক্ষে অস্ত জাতির বিভিন্ন প্রকৃতির সভ্যতার, কৃষ্টির ও শিল্পসাধনার বিশিষ্ট রস অস্বিাদন করা একটা ঘঃসাধ্য ব্যাপার। জগতের নানা স্থানে নানা দেশে, বিভিন্ন জাতি, বিভিন্ন পরিবেষ্টনীর মধ্যে আপন আপন বিভিন্ন শক্তি ও চিত্তাধারার আদর্শে, বিভিন্ন প্রকৃতির কষ্টি ও শিল্পসাধনার সৌধ নিৰ্ম্মাণ করিয়া চলিয়াছে। এই বিভিন্ন জাতি ও বিভিন্ন প্রকৃতির সাধনার সংস্পর্শে, বিনিময়ে ও প্রভাবে বিশ্বমানবের বিরাট সাধনার কলেবর, বিধাতার বিধানে যুগে যুগে, দেশে দেশে, পরিণতির পথে অগ্রসর হইতেছে। বাণিজ্যের স্বার্থ, রাজনৈতিক স্বার্থ, ব্যক্তিগত স্বার্থ ইত্যাদি নানা স্বার্থবাদের বিপাকে পড়িয়া মানুষের সম্মিলিত সাধনার জয়যাত্রা পদে পদে বাধা পায়, পদে পদে পথ হারায় । এই জন্ত মধ্যে মধ্যে এক জন নেতার আবগুক হয়, যিনি এই পথ-হারান সভ্যতার পথ-প্রদর্শক হইয়া, বিভিন্ন পথের বিভিন্ন যাত্রীদের মধ্যে পরিচয়ের ব্যবস্থা করিয়া দিয়া-যুথভ্রষ্ট যাত্রীদের একত্র করিয়া, সম্মিলিত করিয়া, বিশ্বমানবের কৃষ্টির পথে আবার পরিচালনা করেন। যুরোপ ও ভারতের সাধনার সম্মিলনক্ষেত্রে হাভেল সাহেব ছিলেন বিধাতার প্রেরিত এক জন বিশিষ্ট অগ্রদূত। ভারতের শাসনতন্ত্রের উপযোগী যে কয়টি ধন্থ ব্রিটিশশাসকের কারখানায় উদ্ভাবিত হইয়াছে ‘ভারতীয় শিক্ষ+ তন্ত্র তার মধ্যে সৰ্ব্বাপেক্ষ মারাত্মক ব্যাপার। হাভেল সাহেব এই শিক্ষাতন্ত্রের এক জন যন্ত্রচালক হইয়াও, এই শিক্ষাধন্ত্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করিয়া বড় কৰ্ত্তাদের বিরাগভাজন হইয়াছিলেন । অনেকের বিশ্বাস, হাভেল সাহেবের প্রদর্শিত শিক্ষানীতি অবলম্বন করিয়া যুবক ভারতের জাগ্রত জাতীয়তাকে কৃষ্টি ও সাধনার নুতন কৰ্ম্মক্ষেত্রে পরিচালিত করিলে ভারতের রাজনৈতিক আকাশে সন্ত্রাসবাদের ঘনঘটার কাল-ছায়ার আবির্ভাব হইত না । হাভেল সাহেব যে দৃষ্টিশক্তি লইয়া ভারতের সাধনা ও সভ্যতার গভীরতম অস্তদেশ অনুসন্ধান করিয়া তাহার রহস্ত উদঘাটন করিয়াছেন, সাধারণ শিক্ষিত ইংরেজের মধ্যে এই শ্রেণীর পর্য্যালোচকের একস্তি অভাব। জাপানে লফকদিয় ইয়রন ও ফেনেলোস, পারস্তে বাটন ও নিকলসন কৃষ্টির ক্ষেত্রে যে উদার দৃষ্টির পরিচয় দিয়াছেন, ভারতের প্রাচীন সাহিতা আলোচনাদির ক্ষেত্রে মোক্ষমূলার ও স্তর উলিয়মূ জোল বে অস্তদৃষ্টির পরিচয় দিয়াছেন তাহার তুলনায়, ভারতের শিল্প সাধনার ক্ষেত্রে হাভেলের গভীরতর অধ্যায় দৃষ্টি সৰ্ব্বাপেক্ষা মূল্যবান। ভারতের শিল্পের অন্তর্নিহিত রসের অনুসন্ধান দিয়া, ভারতীয় সাধনীর শ্রেষ্ঠ ফল জগতে সুপরিচিত করিয়া, হাভেল সাহেব ভারতের সভ্যতাকে নূতন গৌরবের আসনে সুপ্রতিষ্ঠিত করিয়াছেন।