পাতা:প্রবাসী (চতুস্ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৫৪১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মাম। পৌষের নানা সভা-সমিতি আমাদের শাসনকৰ্ত্তীর খ্ৰীষ্টীয় ধৰ্ম্মাবলম্বী । তাহদের প্রধান পৰ্ব্বকে ( Christmas কে ) বড়দিন বলা হয়, এবং এই বড় দিন উপলক্ষ্যে ও খ্ৰীষ্টীয় নববর্ষের প্রথম দিন উপলক্ষ্যে সমুদয় সরকারী অফিস আদালত ও স্কুল কলেজ আদির দিন-দশ ছুটি থাকে। এই সুযোগে ভারতবর্ষের নানা জায়গায় নানা সভা-সমিতির অধিযেশন হয়। সমুদয় সভা-সমিতির বিস্তারিত বিবরণ দৈনিক কাগজসমূহও ছাপিয়া উঠিতে পারেন না—মাসিক কাগজের পক্ষে ত তাহা অসম্ভব । যাহা ঘটে তাহীর বৃত্তস্তি ও সংবাদ দেওয়া দৈনিক কাগজের একটি প্রধান কাজ । ঘাহা ঘটে এবং সভাসমিতিতে যাহা বলা হয় এবং যে-সব প্রস্তাব গৃহীত হয়, তাহার উপর মন্তব্য প্রকাশ ও টিপ্পনী করা মাসিক কাগজের একটা কাজ । কিন্তু এতগুলি সভাসমিতির বক্তৃতাসমূহ ও প্রস্তাবাবলীর উপর মন্তব্য প্রকাশ করিবার জায়গা আমাদের নাই । প্রধান প্রধানগুলির উপরও কিছু বলা আমাদের সাধ্যাতীত । সভাসমিতিগুলির অধিবেশন বৎসরের ভিন্ন ভিন্ন সময়ে হইলে সৰ্ব্বসাধারণ অনেকগুলিতে কতকটা মন দিতে পারে, আমরাও পারি। কিন্তু সব মাসে ত ভারতব্যাপী অনুন আট দশ দিন ছুটি পাওয় যায় না। সুতরাং একই মাসে একই সপ্তাহে বহু সভা-সমিতির অধিবেশন হয় । ংগ্রেসের জন্ম হইতে বহু বৎসর উহার অধিবেশন হইত পৌষ মাসে । করাচীতে শেষ ষে অধিবেশন হয়, তাহ হয় চৈত্র মাসে । তাহার পর রীতিমত অধিবেশন হইয়াছে বোম্বাইয়ে গত কাৰ্ত্তিক মাসে । এবার পৌষ মাসে থাটি সমগ্রভারতীয় রাজনৈতিক সভার অধিবেশন হইয়াছিল পুনায় উদারনৈতিক সংবেৰ সভাপতি ছিলেন পণ্ডিত হৃদয়নাথ কুঞ্জব্ধ । ইনি "জনহিতকর কাজে সৰ্ব্বদা ব্যাপৃত থাকেন। গোপালকৃষ্ণ গোখলে প্রতিষ্ঠিত ভারতভূত্য সমিতির ইনি এক জন প্রধান সভ্য। ইহার বক্তৃতায় জয়েণ্ট পালেমেণ্টারী কমিটির রিপোর্টের বিশ্লেষণ ও তীব্র নিন্দ ছিল। ঐযুক্ত শ্ৰীনিবাস শাস্ত্রীও খুব ঝাঝাল বক্তৃত৷ করেন, বলেন, “আমরা জয়েন্ট পালেমেণ্টারী কমিটির বিবিধ প্রসঙ্গ—পৌষের নাম সভা-সমিতি 位なか○ রিপোর্ট অনুযায়ী আইন হইলে তদনুযায়ী কাজে গবন্মেন্টের সহিত বিন্দুমাত্রও সহযোগিতা করিব না।” এলাহাবাদের লীডারের প্রধান সম্পাদক শ্ৰীযুক্ত চিন্তামণি বলেন, “তোমাদের প্রস্তাবিত কন্সটিটিউশুনট চাই না, এখন যেটা চলছে বরং তাও ভাল ।” অন্ত দিকে কিন্তু আর এক উদারনৈতিক নেতা স্তর তেজ বাহাদুর সপ্র বলিয়াছেন, “নুতন যে শাসনবিধি হইতেছে, সেটা অনুসারে কাজ যে করা যায় না তা নয় । আর, আমরা যদি সেটাকে না চালাই, সেটা আমাদিগকে চালাইবে।” সুতরাং উদারনৈতিক কেহই গবষ্মেণ্টের সহায় হইবেন না, এমন মনে হয় না । করাচীতে সমগ্রভারতীয় মহিলা-কনফারেন্স হইয়া গিয়াছে । ইহাতে শিক্ষাবিষয়ক, সামাজিক, রাজনৈতিক প্রভৃতি নানা প্রকার বিষয়ের আলোচনা হইয়াছিল। এই কন্‌ফারেন্সেও জয়েণ্ট পালেমেন্টারী কমিটির রিপোর্ট খুব নিন্দিত হইয়াছে । তা ছাড়া নারীদের শিক্ষা, উত্তরাধিকার, প্রভৃতি বিষয়ের আলোচনা হইয়াছে। কৃত্রিম উপায়ে জন্মনিরোধের সমর্থক প্রস্তাব অনেক মহিল-কনফারেন্সে গৃহীত হইয়া গিয়ছে, করাচীতেও হইয়াছে। অনেক নারী কেন ইহার সমর্থন করেন, তাহা বুঝা কঠিন নয়। কিন্তু সমর্থনের যে সব কারণ বলা হয়, তাহ সব প্রদেশে সব পরিবারে সব সধবা নারীর পক্ষে থাটে না । ভারতবর্ষের সব প্রদেশের বসতি ঘন নয় ; সব পরিবার দরিদ্র নয় ; জন্মনিরোধ দরিদ্রা নারীদের চেয়ে সৌধীন ধনী নারীরাই বেশী করিয়া থাকে ; কোন কোন রোগে চিরকুয়া দুৰ্ব্বলদেহ মাতাদের পক্ষে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুসারে জন্মনিরোধ আবশ্বক ; কিন্তু অনেক সুস্থ সবল বিবাহিত নারী ইহা করিয়া থাকে । অবিচারিত জন্মনিরোধের প্রতিকারের জন্ত ইটালীতে ও জার্মেনীতে নানা উপায়ে বিবাহে ও বহুসস্তানপালনে উৎসাহ দিতে হইতেছে । পাটনায় ষে নিখিলভারতীয় ধনবিজ্ঞান সভার অধিবেশন হইয়াছিল, তাহীও বিশেষ উল্লেখযোগ্য । কলিকাতায় প্রবাসী-বঙ্গসাহিত্য-সম্মেলনের অধিবেশনে সৰ্ব্বসাধারণের খুৰ কৌতুহল দেখা গিয়াছিল।