পাতা:প্রবাসী (চতুস্ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৬৩১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ফাগুন পদ্ধতি আবার দুইটি শ্রেণীভুক্ত। একটি জয়পুর-শিল্পের সংমিশ্রণ এ কথা পূর্বেই উল্লেখ করিয়াছি, অন্তটি উড়িষ্যা-পদ্ধতি । বোধ হয় পঞ্চদশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে যখন গঙ্গা-বংশীয় হিন্দু রাজারা এই সব অঞ্চল জয় করেন তখন হইতেই উড়িষ্যা-পদ্ধতি এখানে স্থানলাভ করে এবং ঐ সময়েই প্রীচৈতন্তদেবের নীলাচল-ভ্রমণে বঙ্গ ও উড়িষ্যার মধ্যে যোগসূত্র স্থাপিত হয় । অবশু সৰ্ব্বত্রই যে এ-কথা সত্য তাহ বলা চলে না । অধুনা আবিষ্কৃত বীরভূমের পটগুলি বিচার করিলে দেখা যায় যে ইহাতে থাস বাংলার প্রভাব যথেষ্ট পরিমাণে বিস্তৃতি লাভ করিয়াছে । ইহার কারণ হয়ত এই পটশিল্পীরা খাস বাংলার প্রভাবে পরবর্তী কালে আসিয়াছিলেন, নতুবা খাস বাংলা হইতে যে-কোন কারণে বিতাড়িত হইয়া পশ্চিম-বাংলায় গিয়া বসবাস করিতে থাকেন। যদিও বর্তমানে ইকাদের অনেকে মুসলমান, কিন্তু তাহদের প্রত্যেকের নাম যাদব, কাত্তিক, গণেশ প্রভৃতি এবং ইহার যে দুই এক পুরুষ পূৰ্ব্বেও হিন্দু ছিলেন ইহা প্রমাণিত হইয়াছে। ( প্ৰযুক্ত গুরুসদয় দত্ত প্রণীত ‘পটুয়া” ) এই অঞ্চলের পটুয়াগণ প্রায় পচিশ-ত্রিশ হাত লম্বা কাপড়ে পাতলা মুক্তিকা লেপনের উপর কাগজ আঁটিয়া রামলীল ও কৃষ্ণলীলার পধান প্রধান ঘটনাগুলি চিত্রিত করিয়া থাকেন এবং রামায়ণ ও কৃষ্ণলীলার পট পরিবর্তন সময়ে স্বরচিত গান করিয়া চিত্রিত বিষয় জনসাধারণের সম্মুখে ফুটাইয়া তোলেন। সুদূর বাংলায় এখনও এইরূপ ধরণের চিত্রিত পটের প্রচলন দেখিতে পাওয়া যায়, কিন্তু খাস বাংলায় এইরূপ জড়ানো পটের দুই-এক জায়গায় সামান্ত প্রচলন থাকিলেও ইহার চলন বহু পূৰ্ব্বেই উঠিয়া গিয়াছে । ইহার কারণ বোধ হয় থাস বাংলার মুসলমানাধিক্য। তাহাদের সন্মুখে রামায়ণ মহাতারতের গান গাহিয়া চিত্রপট দেখাইয়া রোজগার করায় বিপদ আদিতে পারে বলিয়াই ধীরে ধীরে জড়ানো পটের প্রচলন থাস বাংলায় থামিয়া যায় । এই জড়ানো পটের অনুরূপ গাজির পটের প্রচলন আজিকাল খাস বাংলায় দেখিতে পাই। পশ্চিম-বাংলার পটশিল্পে অনেক পটুয়া আবার আজকাল পটের শেষভাগে সামাজিক لا لاس-۹ با বঙ্গের পট-চিত্র Նեան: রহস্তমুলক চিত্র এবং যমালয়ের দৃশু অঙ্কিত করিয়া থাকেন । পুথির পটির উপর চিন্ত্রাঙ্কনের সময় হইতেই আমাদের মনে হয় বঙ্গদেশে প্রতিকৃতি-অঙ্কনের প্রবর্তন হয়। এই সময় শুধু রাধাকৃষ্ণের নয় নিমাই ও র্তাহীর শিষ্যমগুলী প্রভৃতিরও প্রতিকৃতি পাটার উপর অঙ্কিত দেখিতে পাওয়া যায়। এই বিষয়ে শ্রযুক্ত দীনেশচন্দ্র সেন লিথিয়াছেন – হরিবংশের চিত্ৰলেখা আদি যুগের চিত্রকরী। প্রাগ-জ্যোতিষপুরের বাণ-রাজার কম উষা স্বপ্নে স্ত্রীকৃষ্ণের পৌত্র কামদেবের পুত্র অমুরুদ্ধকে দেখিয়া প্রেমে পতিত হন । এই স্বল্প-সৃষ্ট তরুশ স্বদর্শন রাজকুমার কে তাহা তিনি কিছুতেই জানিতে না পারিয়া আহার নিদ্রা ত্যাগ করেন। উহায় সখি চিত্ৰলেখা তখন ভারতীয় তৎকাল প্রসিদ্ধ যাবতীয় তরুণ রাজকুমারের চিত্র অঙ্কন করিয়া কুমারী উষার নিকটে উপস্থিত করেন। তন্মধ্য হইতে উষা সহজেই অনুরুদ্ধকে চিনিয়া লইয়াছিলেন। হরিবংশের পূর্বে মনুষ্যমূৰ্ত্তিয় অবিকল প্রতিকৃতি অঙ্কনের কথা বোধ হয় আর কেহ বলেন নাই। চিত্ৰলেখার সময়ে এবং উহার পূর্ব হইতে যে এদেশে চিত্র-বিদ্যায় বিশেষ উৎকৰ্ষ সাধিত হইয়াছিল এই বিষয়ণ হইতে তাহা অনুমিত হয় । এইরূপ বল্প-কনের চিত্র আঁকিয় দেশ-বিদেশে ঘটক বিবাহ স্থির করিতেন । এতৎ, সম্বন্ধে বাঙ্গালার বঙ্গ দিনের কিংবদন্তী আছে । প্রাচীন পল্লী-গীতিকায় দৃষ্ট হয় বহু পল্লী-সুন্দরীর চিত্র লইয়া ঘটকের দেশ-বিদেশে আনাগোনা করিতেন। কথিত আছে, রাধা-কৃষ্ণের প্রেমও এই নিদর্শন হইতেই প্রথম উদ্ভূত হইয়াছিল । স্বাধীর পূর্বরাগ বর্ণনায় এই কথা পাওয়া যায় । পূববরাগের প্রথমাংশের নামই *क्लिश्यमलन' ! কি চিত্র বিচিত্র মরি দেখাইল চিত্রকর, প্রাণ মম নিল যে হরি। বিশাখ। যখন দেথায় চিত্রপট, মোর বলেছিলাম সে বড় লম্পট ॥ প্রভৃতি বহুবিধ গান বৈষ্ণব কবিগণ রচনা করিয়াছেন । ঐতিহাসিক যুগেও ঐরূপ চিত্রাঙ্কনের দ্বার পাত্র-পত্রিীর মন আকর্ষণ করার রীতির অস্তিত্বের প্রমাণ পাওয়া যায়। জঙ্গলবাড়ীর দেওয়ান ফিরোজ । বানিয়াচনের দেওয়ান-কুমারী সখিনার চিত্র দেখিয়া মুগ্ধ হইর কুমারব্রত অবলম্বনের সঙ্কল্প ত্যাগ করিয়াছিলেন, ‘ফিরোজ খা’ নামক পল্লী-গীতিতে তাহা দৃষ্ট হয় । চণ্ডীদাসের, হাম সে অন্ধলা, সরলা অথলী, ভালমন্দ নাহি জামি । বিরলে বসিয়া, পাটতে লিখিয়া বিশাখা দেখাল আনি ॥ ( বৃহৎ বঙ্গ, পৃ. ২৩৮) ইহা ছাড়া বাংলা দেশে আর একটি শিল্পধারা দেখিতে পাওয়া যায়। ইহা সাধারণতঃ ঘরে ঘরে সময়-অসময়ে জাক হইয় থাকে, ইহার কোন একটি সুনির্দিষ্ট পথ নাই । চাউলের গুড় অথবা সিন্মুর দিয়া আঙুলের ডগায় অথবা নেকড় দিয়া এই সব চিত্রাঙ্কন কল্প হইয়া থাকে। পাঙ্গীতে কনে বউ স্বামীর সহিত শ্বশুরবাড়ি ৰাইতেছে এই ছবি