পাতা:প্রবাসী (চতুস্ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/১০৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বৈশাখ মুক্তি كميا রাখা তাহার পক্ষে এত কঠিন হইয় উঠে, একটা কথা বলিতে বলিতে সে এমন অন্যমনস্ক হইয়া যায়, হঠাৎ সমস্ত মন এত উতল হইয় উঠে যে, প্রাণপণ বলে আপনাকে সংবরণ করিতে হয়, এ-সকল কথার উত্তর দেওয়া কঠিন । & সেদিন সকাল হইতে বাদল করিয়াছিল । মেঘলা খোলাটে আকাশ, শীতের তীক্ষ্ণ বায়ু। মাঝে মাঝে টিপি টিপি বৃষ্টি পড়িতেছে । বাহিরের আবহাওয়ার জন্য ভিতরটাও ভারাক্রাস্ত হইয়াছিল। পাচটা বাজিতে না বাজিতেই ইলেকটিক আলো সালাইয়া কাচের শাসি বন্ধ করিয়া চন্দ্রকান্ত বিকালবেলাকার দ্বিতীয় পেয়ালা চ খাইতে খাইতে কহিলেন, "নিৰ্ম্মল, একট। গান কর তো, মা ।” বাজনার ডাল খুলিয়া নিৰ্ম্মলা গান করিতেছিল, এমন সময় বন্ধ দরজার শাসিতে কে টোক মারিল । এমন বাদলায় কলিকাতার কদমাক্ত পথ বাহিয়া যে কেহ আসিতে পারে, চন্দ্রকাস্ত কল্পনাও করেন নাই। তাই যামিনীকে দেখিয় অতিমাত্রায় খুশী হইয়া বলিলেন, “আরে এই যে ! এস দামিনী ভাল কথা—কাল সকালে যে বইটা নিয়ে তর্ক করছিলে, সেইটে তুমি চলে যাবার পরেই থ্যাকারের দোকান থেকে কিনে আনলুম। অনেক দিন আগে এক বন্ধুর কাছে চেয়ে নিয়ে পড়েছিলাম কি-না, ঠিক মনে ছিল না । আর একবার আগাগোড়। মন দিয়ে পড়লুম। অনেক জিনিষ নতুন করে চোখে পড়লে । সে-সব আমি দাগ দিয়ে রেখেচি । দাড়াও, বার করে নিয়ে আসি পাশের ঘরের আলমারী থেকে ” চন্দ্রকান্ত ব্যস্তসমস্ত হইয়। লাইব্রেরী ঘাটিতে চলিয়া গেলেন । কিন্তু যামিনীর বইয়ের প্রতি আদেী মনোযোগ ছিল না। বাজনার উপর নিৰ্ম্মলার স্বকুমার আঙুলের গতিলীলার দিকে সে নিৰ্ণিমেষ দৃষ্টিতে চাহিয়াছিল। বৃষ্টি পড়িতেছে,আজ আর চন্দ্রকান্ত বাবুর বাড়িতে যাইবে না এমনই স্থির করিয়া যামিনী আইনের একখানা মোটা কেতাব খুলিম তাহাতে মনঃসংযোগ করিতে পারে নাই, কিন্তু দৃষ্টি সংযোগ করিয়াছিল। অথচ যতই সময় বহিম। যাইতে লাগিল, ততই চেয়ার টেবিল এবং আইনের বইসমেত এই শুষ্ক শুন্য ঘরটা একটা বিরাট ভারের মত তাহার মনের উপর চাপিয়া বসিতে লাগিল । অবশেষে নিজের সঙ্কল্প এবং নিজের কামনার সহিত বিবাদ করিতে করিতে সে আলনা হইতে বর্ষাতি কোট টানিয়া লইয়া গায়ে দিয়া চন্দ্রকাস্তের বাড়ি অভিমুখেই দ্রুতপদে আসিতে মুরু করিল। বর্ষার দিনে পিচ্ছিল কর্দমাক্ত পথে বর্ষাতি গায়ে দিয়াও একজন যে আর এক জনের বাড়িতে কেবল মাত্র তর্ক করিতেই যায়, একথাটা আর যাহারই কাছে অবিশ্বাস্য হউক, চন্দ্রকাস্তের কাছে ছিল না ; কারণ র্তাহার ও-সকল কথা থেয়ালেও আসিত না । তিনি ত পাশের ঘরে বই খুঞ্জিতে গেলেন, বাহিরে চাপিয়া বৃষ্টি আসিল এবং গানের স্বরের মধ্যে নিৰ্ম্মল তন্ময় হইয় গেল । কেবল যামিনী নিজের মনের মধ্যে সাগরের মত আবেগ চাপিয়া ধরিয়া সেই সঙ্গীতবিষ্ট তরুণীর পানে চাহিয়া থাকিল। তাহার ইচ্ছা হইতে লাগিল, বাজনার পর্দার উপর স্বন্দর রক্তাভ যে আঙুলগুল সঞ্চরণ করিয়া ফিরিতেছে তাহাদের চাপিয়ু ধরে । এমন সময়ে চন্দ্রকাস্ত বাবু পাশের ঘর হইতে ডাকিলেন, " নিৰ্ম্মল, নতুন বইখান কোথায় রেখেছি খুজে পাচ্ছিনে যে ম৷ ” তাহার আহবানে নিৰ্ম্মল বাজনা ছাড়িয়া উঠিয় দাড়াইল । সুর কাটিম গেল । গান থামিম্বা গেল এবং যামিনী স্বপ্নলোক হইতে প্রত্যাবৰ্ত্তন করিয়া দেখিল, তাহার মানসী শুভ্র সুন্দর হাত দুইখানি একত্র করিয়া তাহাকে নমস্কার করিতেছে । 웃 - -3 সুশীল। তাহার বড় বৌমাকে কিছুদিনের জন্য এ-বাড়ি আনিয়াছেন । এ তাহার বহুদিনের সখ । সুধাংশুর স্ত্রী প্রতিমাহুন্দরীর রং উজ্জ্বল শু্যামবর্ণ, গড়ন মোটাসোট। বয়স বছর পনের মেলি । বয়সে নিৰ্ম্মলার চেয়ে বছরথানেকের ছোটই বোধ করি । কিন্তু ইহারই মধ্যে একটি ছেলে হইয়াছে । মেয়েমানুষের জীবনে স্বামীকে হাতের মুঠোয় রাখা ছাড়া আর যে কোন লক্ষ্য থাকিতে পারে, প্রতিমা তাহা ভাবিতেও পারে না । সকালবেলাম্ব সামান্য দুই-একটা কাজের পর স্নান সারিয়া মাথার ভিজ এলো চুলে একটা গেরো দিয়া লইয়া জলযোগের পরে প্রতিমাসুন্দরী আমুনার সামনে দাড়াইয় তাহার টিপের কেীট বাহির করিয়া