পাতা:প্রবাসী (চতুস্ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/১৯৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

›ፃ• সকালবেল সেজকাক ও জ্যাঠামশাই দত্তদের কাটালবাগানের ধারে পোড়ে জমিতে বাড়ির কৃষাণকে দিয়ে খেজুরপাতার একটা কুঁড়ে বাধলেন এবং লোকজন ডাকিয়ে হীরকে ধরাধরি করে সেখানে নিয়ে গেলেন। দাদা চুপি চুপি একবাটি সাবু মা’র কাছ থেকে ক’রে নিয়ে দিয়ে এল। দিন দুই এই অবস্থায় কাটলো । মুখুঙ্গে-বাড়ির বড়মেয়ে নলিনীদি রাত্রে এক বাটি বালি দিয়ে আসতে আর সকালবেলা যাবার সময় বাটিটা ফিরিয়ে নিয়ে যেত । একদিন রাতে দাদা বললে—“চল নিতু, আজ হীরুজ্যাঠার ওখানে রাতে থাকবি ? রামগতি-কাকা দেখে বলেচে অবস্থা খারাপ। চল আগুন জালাবো এপন, বডড শীত নইলে ।” রাত দশটার পর আমি ও দাদা দু-জনে গেলাম। আমরা যাওয়ার পর নলিনীদি সাবু নিয়ে এল। বললে, “কি রকম আছে রে হীরু-কাক ?” তারপর সে চলে গেল । নারকোলের মালা দু-তিনটে শিয়রের কাছে পাতা, তাতে কাশগুপ্ত ফেলেচে কনী । আমার গা কেমন বমি-বমি করতে লাগল। আর কি কনকনে ঠাণ্ড । খেজুরের পাতার ঝাপে কি মাঘ মাসের শত আটকায় ? দত্তদের কাটালবাগান থেকে শুকনে কাটালপাতা নিয়ে এসে দাদা আগুন জালুলে। একটু পরে দু-জনই ঘুমিয়ে পড়লাম। কত রাত্রে জানি না, আমার মনে হ’ল হীরুজ্যাঠা আমার সামনে দাড়িয়ে আছে । হীরুজ্যাঠা জার কাশচে না, তার রোগ যেন সেরে গিয়েচে । আমার দিকে চেয়ে হেসে বললে, “নিতু বললে, আমি বঁাশবেড়ে যাচ্ছি গঙ্গা নাইতে । আমায় বড় কষ্ট দিয়েছে হরিবল্লভ (আমার জ্যাঠামশাই ), আমি বলে যাচ্ছি, নিৰ্ব্বংশ হবে, নিৰ্ব্বংশ হবে । তোমরা বাড়ি গিয়ে শোওগে যাও।” আমার গা শিউরে উঠঙ্গো---এত স্পষ্ট কথাগুলো কানে গেল, এত স্পষ্ট হীরুজ্যাঠাকে দেখলাম যে বুঝে উঠতে পারলাম না প্রত্যক্ষ দেখেছি, না স্বপ্ন দেখছি। ঘুম কিন্তু ভেঙে গিয়েছিল, দাদা দেখি তখনও কুঁকুড়ি হয়ে শীতে খুখুচ্চে, কাটালপাতার আগুন নিবে জল হয়ে গিয়েচে, হীরুজ্যাঠাও ঘুমুচ্ছে মনে হ’ল। বাইরে দেখি ভোর হয়ে গিয়েচে । & দাদাকে উঠিয়ে নলিনীদিদির বাবা রামগতি মুখুজ্জেকে S98S ডাকিমে আনলাম। তিনি এসে দেখেই বললেন, “ও তো শেষ হয়ে গিয়েচে । কতক্ষণ হ’ল ? তোরা কি রাত্রে ছিলি না-কি এখানে ?” হীরুঠাকুরের মৃত্যুতে চোখের জল এক দাদা ছাড়া বোধ হয় আর কেউ ফেলেনি। অনেক দিন পরে গুনেছিলাম, হীরুঠাকুর পৈতৃক কি জমিজম ও দুথান আমর্কাটালের বাগান বন্ধক রেখে জ্যাঠামশায়ের কাছে কিছু টাকা ধার করে এবং শেষ পৰ্য্যস্ত হীরুঠাকুর সে টাকা শোধ না করার দরুণ জ্যাঠামশায় নালিশ ক’রে নীলামে সব বন্ধকী বিষয় নিজেই কিনে রাখেন । এর পর হীরুঠাকুর আপোষে কিছু টাকা দিয়ে সম্পত্তিটা ফিরিয়ে নিতে চেয়েছিল—জ্যাঠামশায় রাজী হননি। কেবল বলেছিলেন, ব্রাহ্মণের ভিটে আমি চাইনে—ওটা তোমায় ফিরিয়ে দিলাম ! হীরু তা নেয়নি, বলেছিল, সব যে-পথে গিয়েছে, ও ভিটেও সে-পথে যাকৃ। এর কিছুকাল পরেই তার মাথা খারাপ হয়ে যায় । বিষয় বাড়বার সঙ্গে সঙ্গে জ্যাঠামশাহ্মদের দানধ্যান ধৰ্ম্মাহুষ্ঠানও বেড়ে চলেছিল। প্রতি পূর্ণিমায় তাদের ঘরে সত্যনারায়ণ পূজা হয় যে তা নয় শুধু—একটি গরিব ছাত্রকে জ্যাঠাইম বছরে একটি টাকা দিতেন বই কেনবার জন্যে ; শ্রাবণ মাসে তাদের আবাদ থেকে নৌকো আসে নানা জিনিষপত্রে বোঝাই হয়ে—বছরের ধান, জালাভেরা কইমাছ, বাজরাভর হাসের ডিম, তিল, আকের গুড় আরও অনেক ঞ্জিনিষ । প্রতি বছরই সেই নৌকায় দুটি একটি হরিণ আসে। ধনধান্তপূর্ণ ডিঙা নিরাপদে দেশে পৌঁছেচে এবং তার জিনিষপত্র নিৰ্ব্বিঘ্নে ভাড়ার-ঘরে উঠল এই আনন্দে তারা প্রতিবার শ্রাবণ মাসে পাঠা বলি দিয়ে মনসাপুজো করতেন ও গ্রামের ব্রাহ্মণ খাওয়াতেন। বৈশাখ মাসে গৃহদেবতা মদনমোহনের পূজার পাঙ্গ পড়ল ওঁদের । জ্যাঠামশায় গরদের জোড় পরে লোকজন ও ছেলেমেয়েদের সঙ্গে নিয়ে কাসরঘণ্টা, ঢাকঢোল বাজিয়ে ঠাকুর নিয়ে এলেন ও-পাড়ার জ্ঞাতিদের বাড়ি থেকে—জ্যাঠাইমা খুড়ীমায়া বাড়ির দোরে দাড়িয়েছিলেন-প্রকাও পেতলের সিংহাসনে বসানো