পাতা:প্রবাসী (চতুস্ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/২০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সাহিত্যতত্ত্ব রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আমি আছি এবং আর সমস্ত আছে আমার অস্তিত্বের মধ্যে এই যুগল মিলন । আমার বাইরে কিছুই যদি অনুভব না করি তবে নিজেকেও অনুভব করিনে । বাইরের অন্তৰ্ভূতি যত প্রবল হয় অস্তরের সত্তাবোধও তত জোর পায় । আমি আছি এই সত্যটি আমার কাছে চরম মূল্যবান । সেই জন্তু যাতে আমার সেই বোধকে বাড়িয়ে তোলে তাতে আমার আনন্দ । বাইরের যে-কোনো জিনিষের পরে আমি উদাসীন থাকতে পারিনে, যাতে আমার ঔৎসুক্য, অর্থাৎ যা আমার চেতনাকে জাগিয়ে রাখে সে যতই তুচ্ছ হোক তাতেই মন হয় খুশী, তা সে হোক না ঘুড়ি-ওড়ানো হোক না লাটিমঘোরানে! । কেন-লা, সেই আগ্রহের আঘাতে আপনাকেই অত্যন্ত অনুভব করি । আমি আছি এক, বাইরে আছে বহু ৷ এই বহু আমার চেতনাকে বিচিত্র করে তুলছে, আপনাকে নানা কিছুর মধ্যে জানছি নান ভাবে । এষ্ট বৈচিত্র্যের দ্বারা আমার আত্মবোধ সৰ্ব্বদা উৎসুক হয়ে থাকে। বাইরের অবস্থা একঘেয়ে হ’লে মাতুষকে মন-মর করে । শাস্থে আছে, এক বললেন, বহু হব, নানার মধ্যে এক আপন ঐক্য উপলব্ধি করতে চাইলেন । একেই বলে স্থষ্টি । আমাতে যে এক আছে সেও নিজেকে বছর মধ্যে পেতে চায়, উপলব্ধির ঐশ্বৰ্য্য সেই তার বহুলত্বে । আমাদের চৈতন্তে নিরস্তর প্রবাহিত হচ্চে বছর ধারা, রূপে রসে নানা ঘটনার তরঙ্গে , তারি প্রতিঘাতে স্পষ্ট করে তুলছে ‘আমি আছি’— এই বোধ। আপনার কাছে আপনার প্রকাশের এই স্পষ্টতাতেই আনন্দ । অস্পষ্টতাতেই অবসাদ । একল কারাগারের বন্দীর আর কোনো পীড়ন যদি নাও থাকে তবু আবছায়া হয়ে আসে তার আপনার বোধ, সে যেন নেই-হওয়ার কাছাকাছি আসে । আমি আছি এবং ন-আমি আছে এই দুই নিরস্তর ধারা আমার মধ্যে ক্রমাগতই একীভূত হয়ে আমাকে স্বষ্টি করে চলেছে ; অস্তুর বাহিরের এই সম্মিলনের বাধায় আমার আপন-স্মৃষ্টিকে কুশ বা বিরুত করে দিলে নিরানন্দ ঘটায় । এইখানে তর্ক উঠতে পারে যে, আমির সঙ্গে ন-আমির মিলনে দুঃখেরও তো উদ্ভব হয়। তা হতে পারে। কিন্তু এটা মনে রাখা চাই যে, মুখেরই বিপরীত দুঃখ, কিন্তু আনন্দের বিপরীত নয় ; বস্তুত দুঃখ আনন্দেরই অন্তভূতি । কথাট শুনতে স্বতে বিরুদ্ধ কিন্তু সত্য । যা হোক এ আপাতত থাকৃ, পরে হবে । আলোচনাট: আমাদের জান দু-রকমের, জ্ঞানে জানা আর অতু ভবে জান । অনুভব শব্দের ধাতুগত অথের মধ্যে আছে অন্য কিছুর অনুসারে হয়ে ওঠা ; শুধু বাইবে থেকে সংবাদ পাওয়া নয় অস্তরে নিজেরই মধ্যে একটা পরিণতি ঘট বাইরের পদার্থের ধোগে কোলে বিশেষ রঙে বিশেষ রসে বিশ্বেধ রূপে আপনাকেই বোধ করাকে বলে অস্তুভব কর। সেই জন্তে উপনিষদ বলেছেন, পুত্রকে কামনা করি বলেই যে পুত্র আমাদের প্রিয় তা নয়, আপনাকেই কামল! কবি বলেই পুত্র আমাদের প্রিয় ! করে, সেই উপলব্ধিতেই আনন্দ । আমরা যাকে বলি সাহিত্য, বলি ললিতকলা, তার লক্ষ্য এই উপলব্ধির আনন্দ, বিষয়ের সঙ্গে বিষয়ী এক হয়ে যাওয়াতে যে আনন্দ । অনুভূতির গভীরতা দ্বারা বাহিরের সঙ্গে অস্তরের একাত্মবোধ যতটা সত্য হয় সেই পরিমাণে জীবনে আনন্দের সীমানা বেড়ে চলতে থাকে, অর্থাং নিজেরই সম্ভার সীমানা। প্রতিদিনের ব্যাবহারিক ব্যাপারে ছোট ছোট ভাগের মধ্যে আমাদের আত্মপ্রসারণকে অবরুদ্ধ করে, মনকে বেঁধে রাখে বৈষয়িক সঙ্কীর্ণতায়, প্রয়োজনের সংসারটা আমাদের আপনকে ঘিরে রাখে কড়া পাহারায় ; অবরোধের নিত্য অভ্যাসের জড়ডায় ভুলে যাই যে, নিছক বিষয়ী মাতুষ অত্যন্তই কম মানুষ,—সে প্রয়োজনের র্কাচি-ছটা মাতুয। প্রয়োজনের দাবি প্রবল এবং তা অসংখ্য । কেন-ন} পুত্রের মধ্যে পিতা নিজেকেই উপলব্ধি