পাতা:প্রবাসী (চতুস্ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৪০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8 ఏ38షి বাবার মাথা গিয়েচে বিগড়ে। অবিশ্যি এ-সব কারণ অকুমান করেছিলুম বড় হ’লে অনেক পরে । বেলা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে লোকের ভিড় বাড়তে লাগল, যারা কোনো দিন এর আগে বাবার সঙ্গে মৌখিক ভদ্র আলাপট করতেও আসেনি তারা মজা দেখতে আসতে লাগল দলে দলে | বাবার মূৰ্ত্তি হয়েচে দেখতে অদ্ভূত। রাত্রে না ঘুমিয়ে চোখ বসে গিয়েচে –চোথের কোনে কালি মেড়ে দিয়েচে যেন । সৰ্ব্বাঙ্গে তুলে মেথে বাব৷ সেই রাতের বিছানার ওপরই বসে আপন মনে কত কি বকচেন । ছেলেপিলের দল এপাড়াওপাড়া থেকে এসেছে । তার ঘরের দোরে ভিড় ক’রে দাড়িয়ে । কেউ বা উকি মেরে দেখচে – হাসাঙ্গসি করচে । আমাদের সঙ্গে পড়ে এই পাড়ার নবীন বঁড়িয্যের চেলে শান্ট –সে একবার উকি মেরে দেখতেই বাব তাকে কি একটা ধমক দিয়ে উঠলেন । সে ভাণ করা ভয়ের স্বরে ব’লে উঠল—ও বাবা ! মারবে না কি ?—বলেই পিছিয়ে এল। ছেলের দলের মধ্যে একটা হাসির ঢেউ পড়ে গেল । এক জন বললে- আবার কি রকম ইংরিঞ্জি বলচে দাখ — আমি ও সীতা কাঠের পুতুলের মত দাড়িয়ে আছি । আমরা কেউ কোনো কথা বলুচি নে । আর একটু বেলা হ’লে জ্যাঠামশায় কি পরামর্শ করলেন সব লোকজনের সঙ্গে—আমার মাকে উদ্দেশ করে বললেন— বেীমা সবই তো দেখতে পাচ্চ—তোমাদের কপাল ছাড়া আর কি বলব । ভূষণকে এখন বেঁধে রাখতে হবে- সেই মতই সবাই করেচেন। ছেলেপিলের বাড়ি-–পাড়ার ভেতরকার কা গু-ওরকম অবস্থায় কখন কি ক’রে বসে, তা বলা যায় না--ত তোমায় একবার বলাটা দরকার তাইআমার মনে বড় কষ্ট হ’ল---বাবাকে বাধবে কেন ? বাবা তে এক বকুনি ছাড়া আর কারুর কিছু অনিষ্ট করতে যাচ্ছেন না ? কেন তবে— আমার মনের ভাষা বাক্য খুজে পেলে না প্রকাশের— মনেই রয়ে গেল । বাবাকে সবাই মিলে বাধলে । আহা, কি কসে কসেই বাধলে । অন্য দড়ি কোথাও পাওয়া গেল না বা ছিল না—জ্যাঠামশায়দের খিড়কী পুকুর ধারের গোয়াল বাড়ি থেকে গরু বধিবার দড়া নিয়ে এল—তাই দিয়ে বাধা হ’ল । আমার মনে হ’ল অতটা জোর করে বাবাকে বধিবার দরকার কি ! বাবার হাতের শির দড়ির মত ফুলে উঠেচে যে। সেজকাকাকে চুপিচুপি বললুম-কাকাবাবু, বাবার হাতে লাগচে, অত কসে বেঁধেচে কেন ? বলুন না ওদের ? কাক সে-কথা জ্যাঠামশায়কে ও নিতাইমের বাবাকে বললেন-তুমিও কি থেপলে নাকি রমেশ ? হাত আলগা থাকৃবে পাগলের ?...তা হলে পা খুলতে কতক্ষণ—তারপরে আমার দিকে চেয়ে জ্যাঠামশায় বললেন – যাও জিতু বাবা--- তুমি বাড়ির ভেতর ধাও-নয় তো এখন বাইরে গিয়ে বসো । আবার বাবার হাতের দিকে চেয়ে দেখলুম-– দড়ির দাগ কেটে বসে গিয়েচে বাবার হাতে । সেই রকম তুলেমাখ অদ্ভুত মূর্তি ! -- বাইরে গিয়ে আমি এক! গাম্বের পেছনের মাঠের দিকে চলে গেলুম—একটা বড় তেঁতুলগাছের তলায় শব। দুপুর - বিকেল চপ করে বসে রইলুম । 8 দিনকতক এই ভাবে কাঢ়ল । তার পর পাড়ার দু-পাচ জন লোকে এসে জ্যাঠামশায়ের সঙ্গে কি পরামর্শ করলে । বাবাকে কোথায়ু তারা নিয়ে গেল সবাই বললে কলকাতায় হাসপাতালে নিয়ে গেছে । তার ফিরেও এল, শুনলুম বাবাকে নাকি হাসপা কালে ভৰ্ত্তি করে নিয়েচে । শীগগিরই সেরে বাড়ি ফিরবেন । আমরা আশ্বস্ত হলুম। দশ-বার দিন পরে একদিন বিকেলের দিকে আমি ও সীত পথে খেলা করচি, এমন সময়ে সীতা বললে – ঐ যে বাবা !... দূরে পথের দিকে চেয়ে দেখি বাবাই বটে। ছুটে আমরা বাড়িতে মাকে খবর দিতে গেলুম। একটু পরে বাব বাড়ি ঢুকলেন—এক হাটু ধুলো, রুক্ষ চুল । ওপর থেকে জ্যাঠাইমা নেমে এলেন, কাকার এলেন । বাবাকে দেখে সবাই চটে গেলেন। সবাই বুঝতে পারলে বাবা এখনও সারেন নি, তবে সেথান থেকে তাড়াতাড়ি চলে আসার কি দরকার ? বাবা একটু বসে থেকে বললেন ভাত আছে ? কাল ওই দিকের একটা গায়ে দুপুরে দুটো খেতে দিয়েছিল, আর কিছু থাইনি সারাদিন, খিদে পেয়েচে । কলকাতা থেকে পায়ে