পাতা:প্রবাসী (চতুস্ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৫৭৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ادامه নিজের গৃহে আমাকে অতি সাদরে স্থান দিয়াছিলেন, নিজের শয্যাটি পর্য্যস্ত আমাকে ছাড়িয়া দিয়াছিলেন । আপনার নৃত্য আমি দেখিয়াছিলাম, আপনার কাহিনীও শুনিয়াছিলাম। আপনার নামটি আমি ভুলি নাই।” তাহার কথায় বৃদ্ধ অতিশয় বিস্মিতা ও সঙ্কুচিত হইয়া পড়িল । সে প্রথমে কিছুতেই উত্তর দিতে পারিল না, কারণ বাৰ্দ্ধক্য ও দুঃখ-দারিদ্র্যের পীড়নে তাহার স্মৃতিশক্তি ক্ষীণ হইয়া পড়িয়াছিল । কিন্তু চিত্রকর সদয়কণ্ঠে আরও অনেক কথা বলাতে, এবং তাহার পূর্ব বাসস্থানের বর্ণনা দেওয়াতে, তাহারও বিগত দিনের সকল কথা মনে পড়িল এব’ সে সঞ্জল চক্ষে বলিল, “ভগবানই আমাকে পথ দেখাইয়া এখানে আনিয়াছেন। কিন্তু আপনার পবিত্র পদধূলি যখন আমার ক্ষুদ্র কুটীরে পড়িয়াছিল, তখন আমি এখনকার মত ছিলাম না। প্রভু বুদ্ধের কৃপাতেই কেবল আপনি আমাকে চিনিতে পারিয়াছেন।” তাহার পর সে নিজের দুঃখের কাহিনী বলিতে লাগিল । চিত্রকর চলিয়া যাইবার পর, কয়েক বৎসরের মধ্যেই তাহার অবস্থা অত্যন্ত খারাপ হইয় পড়ে এবং বাধ্য হইয়া কুটারখানি বিক্রয় করিয়া, তাহাকে আবার রাজধানীতে ফিরিয়া আসিতে হয়। রাজধানীতে তাহার নাম পর্য্যস্ত সকলে ভুলিয়। গিয়াছিল। নিজের কুটারটি ছড়িয়া আসিতে তাহার মনে অত্যন্তই ব্যথা লাগিয়াছিল, কিন্তু বাৰ্দ্ধক্য ও দুৰ্ব্বলতাবশতঃ সে যখন বেদীর সম্মুখে নৃত্য করিবার ক্ষমতাও হীরাইয়া বসিল, তখন তাহার আর মনে বেদনার সীমা রহিল না। প্রিমূতমের আত্মার সহিত তাহার যেন, নূতন করিয়া বিচ্ছেদ ঘটিল। সে এখন নৰ্ত্তকীর বেশে এবং নৃত্যের ভঙ্গীতে নিজের একটি চিত্র অঙ্কিত করাইতে চায়, উহা সে বেদীর সম্মুখে ঝুলাইয়। রাখিবে। যাহাতে তাহার এই ইচ্ছা পূর্ণ হয়, তাহার জন্য সে ক্রমাগত প্রার্থনা করিয়াছে । সে সাধারণ কোনো চিত্রকরের নিকট না গিয়া স্বয়ং চিত্রকররাজের নিকট এই কারণেই আসিয়াছে যেন চিত্রটি অতি স্বন্দর হয়। নিজের নৰ্ত্তকীর পোষাকটিও সে লইয়া আসিয়াছে এই আশায় যে, তিনি ইহার সাহায্যে ছবিটি আঁকিতে পরিবেন। চিত্রকর তাহার কথা গুনিয়া হাসিয়া বলিলেন, “আপনি নী ; ఎని8ు যেরূপ চিত্র চান, তাহা আমি অতি আনন্দের সহিতই আঁকিয় দিব । আজ আমি ব্যস্ত, একটি কাজ আমাকে আদ্যকার মধ্যে অবশুই শেষ করিতে হইবে। কিন্তু কাল যদি আপনি আসেন, আমার সাধ্যমত যত্ন করিয়া আমি ছবিখান। আঁকিয়া দিব ।” স্ত্রীলোকটি বলিল, “কিন্তু একটা প্রয়োজনীয় কথা আপনাকে বলা উচিত, বলিতে আমার অত্যন্ত সঙ্কোচ বোধ হইতেছে। আপনার পরিশ্রমের আমি কোনো মূল্য দিতে পারিব না, কারণ এই নৰ্ত্তকীর পোষাকটি ভিন্ন আমার নিকটে আর কিছু নাই। এইটি মাত্র আপনাকে আমি দিতে পারি। এখন ছিন্ন ও বিবর্ণ, যদিও এককালে উহা অতি মূল্যবান ছিল । তবুও আশা করি, মহাশয় অনুগ্রহ করিয়া এটি গ্রহণ করিবেন, কারণ পুরাণ জিনিষ হিসাবে ইহার একট। মূল্য আছে । আজকালকার নৰ্ত্তকীরা এই ধরণের পোষাক আর পরে না ।” চিত্রকর বলিলেন, “এ-বিষয়ে আপনার কিছুমাত্র ভাবিবার প্রয়োজন নাই । আপনার ঋণের অল্পমাত্রও যে শোধ করিতে পারিব, ইহাতেই আমি অত্যন্ত সুখী । কাল আমি অবশুই আপনার চিত্র আঁকিতে আরম্ভ করিব।” স্ত্রীলোকটি তিন বার তাহার সম্মুখে আভুমি প্রণত হইয় বলিল, “আপনি আমাকে ক্ষমা করিবেন, আমার আরও কিছু বলিবার আছে। আমাকে এখন যেরূপ দেখিতেছেন এই ভাবেই অঙ্কিত করিবেন, ইহা আমি চাই না। আপনি প্রথম আমাকে যেরূপ দেখিয়াছিলেন, সেই ভাবেই অঙ্কিত করিবেন, ইহাই আমি চাই।” "ωκ চিত্রকর বলিলেন, “আমার স্মরণ আছে, আপনি অপূৰ্ব্ব সুন্দরী ছিলেন।” স্ত্রীলোকটি ধন্যবাদ জ্ঞাপনার্থে আর একবার চিত্রকরকে প্ৰণাম করিল, তাহার পর বলিল, “আমি যাহা কিছুর জন্য প্রার্থনা করিয়াছিলাম, সবই তাহা হইলে হইতে পারবে। আপনার যখন আমার পূর্বকালের আকৃতি স্মরণ আছে, অনুগ্রহ করিয়া অামাকে সেই ভাবেই অঙ্কিত করিবেন। দয়া করিয়া আমাকে আবার তারুণ্য ও সৌন্দৰ্য্য ফিরাইয়া দিবেন, তাহা হইলেই আমি সেই পরলোকবাণী আত্মাকে আনন্দ দিতে পারিব । তাঁহারই জন্তু আমি ইহা ভিক্ষা