পাতা:প্রবাসী (চতুস্ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৫৯৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শ্রাবণ বিধবার সজ্জণ ছিল। সে দেখিল জয়ন্তী তাহার বক্স-প্যাটর সমস্ত খুলিয়। ঘরময় ছড়াইয়াছে, নানা রকম রঙের মুন্দর কাপড় ও গহন! বিছানার উপর ছড়ান । জয়ন্তী নিজে আয়নার সম্মুখে দাড়াইয় আছে, তাহার পরণে সেই জরির চৌখুপি ঘলনীল রেশমের শাড়ী, দুই হাতে দশ গাছ মুক্তার চুড়ি, গলায় বিবাহের সাতলহরী। সধবা অবস্থায় ছোটখাট আর যা দুই-চারিট অলঙ্কার সে পরিত, সমস্তই আজ আবার পরিয়াছে। মুন্ধবিস্ময়ে সে নিজের প্রতিবিম্বের দি ক ত কাইয়া আছে, তাহার অধরে স্মিত হাস্ত্যের পিছনে বেদনার রেথ ফুটিয়াছে । শমীন্দ্র বলিল, “কি হয়েছে ? একেবারে যে জমে গেল ! নড়ছ না কেন, পায়ে কি শিকড় গজিয়েছে ?” উৰ্মিল চোখ ফিরাইয়। স্বামীকে ইসার করিয়া ডাকিল, “দেখে যাও ” শমীন্দ্র দুই প। অগ্রসর হইয় আসিল । কিন্তু শমীন্দ্রর গলার আওয়াজ পাইয়াই জয়ন্তী খুট করিয়া ঘরের বাতি বিবাইয়া দিল । শমীন্দ্র ও উর্মিল নিজেদের ঘরে চলিয়া গেল । উৰ্মিলা গায়ের গহনাগুলা খুলিয়া খুলিয় ড্রেসিং টেবিলের উপর রাখিতে রাথিতে বলিল, “কি ব্যাপার বল ত 1 কিছু বুঝতে পারছি না । দুপুর রাত্রে গয়ন। কাপড় প’রে আয়নার সামনে এত সাজগোজ করবার ম) নে কি ?” শমীন্দ্র বলিল, “মানেট। ঠিক বুঝতে পারছি না। আমিও । কিন্তু ৰূপ যদি কারুর থাকে ত সে তোমার দিদির । অম্পরীর। কি এর চেয়েও সুন্দরী হয় ?” উৰ্ম্মিল স্বামীক একটা ঠেল| দিয়া বলিল, “অপ্তারীদের সঙ্গ ত আমার কারবার নেই, কি ক’রে বল্ব বল । তবে তুমি ত দেখছি একেবারে প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছ।” শমীন্দ্র তাহার নাকর ডগাট ধরিয়া নাড়িয় দিয়া বলিল, “তাই বুঝি ভয়ে এক সেকেণ্ডর বেশী দেখতে দিল না ।” উঠিল! বলিল, “আহ, দিদিই ত আলো নিবিয় দিল । যাই বল, দিদি কিন্তু বড় অদ্ভূত মানুষ । স্বামীর নাম শুমূলই তার দু-চোখ জল ভরে ওঠে অথচ এই সামান্ত গয়না কাপড়গুলোর ওপর কি ক’রে ওর এত লোভ ? কাল আমাকে নতুন কাপড় গয়নাগুলো . দেখাচ্ছিল, বলল যে একদিনও সেগুলো পরিনি । হয়ত খুব পরতে ইচ্ছে করে তাই লুকিয়ে পরে । কি ক’রে পারল কে জানে ?” শমীন্দ্র বলিল, “কেন, তোমার সুধা-দিদি ত সৰ্ব্বদ এক-গা গয়না প’রে বেড়ান । তার কি শোক নেই বলতে চাও ” উঞ্চিল স্বামীর মুখে হাত চাপ দিয়া বলিল—“fছঃ, কি যে তুমি ? যা মুখে আসবে তাই বলবে । সুধাদি এয়োস্ত্রী মানুষ, ভগবান ছেলেপিলে কেড়ে নিয়েছেন, কি করবে বল ?” শমীন্দ্র বলিল—“স্বামীকে কি তোমরা সন্তানের চেয়ে বেণী ভালবাস ?” - উৰ্ম্মিল হালিয়। বলিল—“তোমার বুঝি শোনবার সথ হয়েছে ? তা যতই বড়শি ফেল, তোমাকে বাৰু রুণু দীRর চাইতে বেণী ভালবাসতে পারব না । কিন্তু তবুও ত স্বামীই স্ত্রীলোকের সব ।” শমীন্দ্র উৰ্ম্মিলার পিঠ চাপড়াইয়! বলিল—“উঃ কি নিদারুণ যুক্তি P শমীন্দ্র ঘুমাইয় পড়িলেও উৰ্ম্মিলার চোথে ঘুম আসিল না । সারারাত্রিই তাছার জয়ন্তীর কথা ভাবিয়া কাটিয়া গেল। জয়ন্তীকে কোন সুদূর শৈশব হইতে সে চেনে । তাহাক ত এমন মনে হয় নাই । সে হিন্দুঘরের যেয়ে, আজন্ম হিন্দুঘরের মত চালচলনে অভ্যস্ত ; তারপর বিবাহের পর স্বামীকেও ত সে কম ভালবাসিত না । তাহার মনে পড়ে জয়ন্তীর বিবাহের পর উৰ্ম্মিল জয়ন্তীর স্বামীর উপর কি বিযম চট ছিল। কতদিন দুই সীতে এই লইয়। তুমুল কলহ হইয়া যাইত। কিশোরী উৰ্ম্মিল বলিত—“ও; ভারি ত তোমার দু-দিনের বর, তার জন্তে চিরকালের বন্ধুকেও ভুলে গেলে । ফু-দণ্ড কথা বলবার সময় পাও না ।” জয়ন্তী বিজ্ঞের মত হাসিয়া উৰ্ম্মিলাক ঠাণ্ডা করিবার চেষ্টা করিত, কিন্তু দুই-দশ মিনিট পরেই ছল করিয়া স্বামীর সন্ধানে পলায়ন করিত । আর এতদিন পরেই বা কোন কম ছিল ? এই ত আট বৎসরের মধ্যে উৰ্ম্মিল