পাতা:প্রবাসী (ত্রয়স্ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৬৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8%, —সে ছাই গাড়ী। কলের গাড়ী দিবি বলেছিলি, দে এক্ষুনি । জগদ্ধাত্রী হাসিতে হাসিতে বলিল— রেলগাড়ী আমি গড়াই নাকি ? মেলার থেকে কিনে ত দেব— অতএব জগদ্ধাত্রী নিতান্তই বেকায়দায় পড়িয়া গিয়াছে। দে এক্ষুনি-—বলিতে বলিতে উদ্যত হাতে নিতাই তীরবেগে ছুটিয়া আসিল । ছোটবে তাড় দিয়া উঠিল— খবরদার ছেলে, ছুয়ে দিও না ওঁকে—শুদ্ধ কাপড়চোপড় পরে মঠবাড়ি যাচ্ছেন— নিতাই ছু ইল না, থ, থু: করিয়া মুখের সমুদয় চিবানো পেয়ার জগদ্ধাত্রীর গায়ে ঢালিয়৷ দিল । দিয়াই পলাইতেছিল, জগদ্ধাত্রী ধরিয়া ফেলিয়। ঠাস-ঠাস করিয়া পিঠে দিল দুই চাপড়। প্রবল চীৎকারে নিতাই আছড়াইয়। মাটিতে পড়িল । তরঙ্গিনী কোথাম্ব ছিল, ই-ই করিয়া আসিল । সকলের দিকে অগ্নিগুষ্টি হানিয়া বিনাবাক্যে সে ছেলে কাড়িয়া লইয়৷ গেল। ঘরের মধ্যে গিয়া নিতুর কান্ন থামিল । তাহাকেই সম্বোধন করিয়া তরঙ্গিনী তীক্ষকণ্ঠে বলিতে লাগিল - আর যদি কারও কাছে বাস হতভাগা ছেলে, মেরে একেবারে খুন করে ফেলব। শত্তরের হাতে ছেলে ফেলে দিয়ে সব দাড়িয়ে দাড়িয়ে তামাসা দেখে তাহার পর কয়েক মুহূৰ্ত্ত নিস্তব্ধত। কোন দিক দিয়া কোন সাড়া আসিল না দেখিয়৷ এবারে তরঙ্গিনী ঘরের আড়খুটিগুলিকে শুনাইয় বলিতে লাগিল মিছরির ছুরি । গ্রামসুদ্ধ মানুষ ডাকাডাকি, কি সমাচার ? মা- জমিদারী ভালুকদারী সমস্ত ফাকি দিয়ে থাচ্ছে, তার সালিশী হবে। আবার ভিতরে এসে কত রঙ্গরস : ছেলে খুন করবার মতলব —ধমে-প্রাণে মারতে এসেছে আমাদের ৷ মেজবে কথন উঠয় গিয়াছে । ছোটবে মুখ লাল করিয়া নথ খুটিতে লাগিল। জগদ্ধাত্রী কথা কছিল, কিন্তু কণ্ঠস্বরে উত্তাপ নাই, বলিল—ছেলেকে অত আদর দিও না বউ, একটু শাসন করলে ছেলে খুন হয়ে যায় না-- ** ঘরের মধ্য হইতে জবাব আসিল পেটের ছেলেকে শাসন করুক গিয়ে লোকে--- | স্নান হাসি হাসিয়া জগদ্ধাত্রী বলিল- তা যে নেই। SనOBO মুখের কথা কড়িয়া তরঙ্গিনী বলিতে লাগিল ভগবান দেয় নি। সে অন্তর্যামী--সব বোঝে, খুনে মেয়েমানুষের কোলে দেবে কেন ? যে যেপানে ছিল সব শেষ করে আমার সংসারে নজর দিতে এসেছে— - কি, কি বললি? জগদ্ধাত্রী বাঘিনীর মত উঠিয়া চক্ষের পলকে উঠানের এই প্রাস্ত অবধি আগাইয়া আসিল বলিতে লাগিল বুঝি গো বুঝি, খাওয়া জিনিষ উগরে দিতে বড় লাগে । কিন্তু এত দেমাক ? দপহারী আছেন, এখনও চন্দ্রস্তুর্য্যি আছে। আমি আর কি বলব ? গলা আটকাইয় আসিল, সামলাইয়া লইয়া বোধ করি যাহাতে সেই দৰ্পহারীর কান পর্যন্ত পৌছিতে পারে এমনি উচ্চকণ্ঠে কহিতে লাগিল - ছেলের দেমকে মরে যাচ্ছিস তবু যদি নিজের ছেলে হ’ত ! খোট। দেবার জিনিস এ লয় বউ, এক দণ্ডে কার যে কি হয় কেবল ঐ উপরওয়াল জানে মুহূর্বের জন্য জগদ্ধাত্রীর বোধ করি একটি অতি চরমক্ষণের কথা মনে পড়িয়া গেল। নূতন গিল্পীপনার আনন্দে লঙ্কায় তখন দিনগুলি উড়িয়া চলিয়; যায়। জগদ্ধাত্রী ছ'মাসের অন্ত:স্বত্ব । স্বামী কষ্ট ষ্টিরী কাজ করিতেন, দুপুরের পর দিব্য পান চিবাইতে চিবাইতে ভাল মানুষ বাহির হইয় গেলেন । ঘণ্ট দুই পরে তাঙ্গকে ফিরাইয়া আনিল, সৰ্ব্বাঙ্গ রক্তে ভাসিতেছে, চক্ষু মুদ্রিত, এক উচু পাচিলের উপর হইতে পড়িয়া গিয়া প্রাণটুকু ধুকধুক করিতেছিল, বাড়ি আনিবাব পথে তাহ নিঃশেষ হইয়া গিয়াছে । জগদ্ধাত্রী আছাড় খাইয়! অজ্ঞান হইয় পড়িল ; একবার জ্ঞান হয়, আবাব তখনই অজ্ঞান হইয় পড়ে। পরের দিন প্রসল করিল অপরিণত একটি রক্তপিণ্ড, মানব-শিশু বলিয়া তাহাকে চিনিবার জো নাই। মা হইয়া নিজের শিশুকে সত্যই সে খুন করিয়াছে। তারপর কতদিন গিয়াছে, এখনও মাঝে মাঝে সেইসব মনে পড়িয়া দৃষ্টি তাহার ঝাপসা হইয় আসে ।... বাহিরে তখন অনেকগুলি কণ্ঠ চীৎকারের যেন প্রতিযোগিতা চালাইয়াছে । হৃদয় ব্যস্ত হইয়া আসিয়া ডাকিল—দিদি, আমুন তো শিগগীর । তারপর হাসিয়া গলা থাটো করিয়া বলিতে বলিতে সঙ্গে চলিল-আচ্ছা এক মজা হয়েছে । বিপিন চক্কোক্তি-টকোক্তি সবাই হাজির, তারষ্ট