পাতা:প্রবাসী (ত্রয়স্ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৮৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ৰাতিক কিছুক্ষপ পর সে আবার আরম্ভ করিল আমি প্রাণপণে যাবার চেষ্টা করলাম । কিন্তু পিছল পথে তাড়াতাড়ি চললার উপায় ছিল না । সামনে থেকে জলের ফোটা কাটার মত মুখেচোখে বিধছিল। হঠাৎ একটা চীংকার শব্দ কানে এসে পৌছুল-বাবা, বাবা ! শেষটা আর গুনতে পেলাম না। চিনতে পারলাম যে আমার স্বামীর গল, ছুটে এগিয়ে যেতে গিয়ে পথে পড়ে গেলাম। উঠে একটু দূর এগিয়ে যেতেই দেখি একজোড়া আঙরার মত চোখ ধক ধৰ্ব্ব করে জলছে। এই চোখ দেখে চিনলাম সে আমার শ্বশুর । আমার শ্বশুরের চোথের তার বেরালের চোখের মত খয়র রঙের, সে চোখ আঁধারে জলে। অন্ধকারের মধ্যে চলে চলে চোখে তখন অন্ধকার সয়ে গিয়েছিল, আমি তখন দেখতেও পাচ্ছিলাম। দেখলাম আমার শ্বশুর একটা মানুষকে কাধে ফেলে আখড়াইয়ের দীঘির পাড় দিয়ে নেমে গেল। বুক । ফেটে কান্ন এল—কিন্তু র্কাদতে পারলাম না । গলা যেন বন্ধ হয়ে গিয়েছিল, চোথে যেন আগুন জলছিল। আমিও তার পিছন নিলাম । সাক্ষীকে বাধা দিয়া বিচারক প্রশ্ন করিলেন—তোমার ভয় হ’ল না ? সাক্ষী উত্তর দিল-হুজুর, আমর। বাগদীর মেয়ে । আমাদের মরদে খুন করে, আমরা লাস গাম্বে করি । হুজুর, আমার হাতে যদি তখন কিছু থাকত তবে ঐ খুনেকে ছাড়তাম না । সাক্ষী অকস্মাৎ উত্তেজিত হইয়া কাঠগড়া হইতে বাহির হইয়া পড়িয়া আসামীকে আক্রমণের চেষ্টা করে । তাহাকে ধরিক্স ফেলা হয় ও তাহার উত্তেজিত অবস্থা দেখিয়া সেদিনকার মত বিচার স্থগিত রাখিতে আদেশ দেওয়া হয়। সাক্ষী কিন্তু বলে যে সে বলিতে সক্ষম এবং আর সে এরূপ আচরণ করিবে না। সে কহিল--তারপর দীঘির গর্ভে দেহটাও পুতে দিলে সে আমি দেখলাম। তখন পশ্চিম আকাশে কাস্তের মত এক ফালি চাদ মেঘের আড়ালে উঠছিল। অন্ধকার অনেকটা পরিষ্কার হয়ে এসেছে। সেই আলোতে পরিষ্কার চিনতে পারলাম খুনী আমার শ্বশুর। সে বাড়ির দিকে হন হন করে চলে গেল। আমি পিছু ছাড়ি নাই। বাড়িতে এসে লাফ দিয়ে পাচিল ডিড়িয়ে সে বাড়ি ঢুকল। আমি দাড়িয়ে রইলাম। Vð অল্পক্ষণ পরেই কে বুক ফাটিয়ে কেঁদে উঠল। চিনলাম সে আমার শাশুড়ীর গল, কিন্তু একবার কেঁদেই চুপ হয়ে গেলএই সময় আসামী বাধা দিয়া বলিয়া উঠিল--আমি তার মুখ চেপে ধরেছিলাম। হজুর, আর সাক্ষী-সাবুদে দরকার নাই। আমি কবুল খাচ্ছি। আমিই আমার ছেলেকে খুন করেছি। হুকুম পেলে আমি সব বলে যাই । বিচারক এরূপ ক্ষেত্রে বিবেচনা করিয়া আসামীকে. স্বীকারোক্তি করিবার আদেশ দিলেন। আসামী বলিয়া গেল--হুজুর, আমরা জাতে বাগদী, আমরা এককালে নবাবের পল্টনে কাজ করতাম। আজও আমাদের কুলের গরব লাঠীর খায়ে, বুকের ছতিতে। কোম্পানীর আমলে আমাদের পণ্টনের কাজ যখন গেল তখন থেকে আমাদের এই ব্যবসা। হুজুর, চাষ আমাদের ঘেন্নার কাজ ; মাটির সঙ্গে কারবার করলে মাহ মাটির মতই হয়ে যায়। মাটি হ’ল মেয়ের জাত। জমিদার বড়লোকের বাড়িতে এককালে আমাদের আশ্রয় হত। কিন্তু কোম্পানীর রাজত্বে থানা-পুলিসের জবরদস্তিতে তারাও সব একে একে গেল। যারা টিকে থাকল তারা শিং ভেঙে ভেড়া ভালমানুষ হয়ে বেঁচে রইল। তাদের ঘরে চাকরি করতে গেলে এখন নীচকাজ করতে হয়, গাড়ু বইতে হয়, মোট মাথায় করতে হয়, জুতে ঘুরিয়ে দিতেও হয় হুজুর। তাই আমরা এই পথ ধরি। আজ চার পুরুষ ধ'রে আমরা এই ব্যবসা চালিয়ে এসেছি। জমিদারের লগদীগিরি লোকদেখান পেশা ছিল আমাদের । রাত্রির পর রাত্রি চামড়ার মত পুরু অন্ধকারে গা ঢেকে কুলীর ঘাটিতে ওং-পেতে বসে থেকেছি। মদের নেশায় মাথার ভেতরে আগুন ছুটত । সে নেশা ঝিমিয়ে আসতে পেত না। পাশেই থাকত মদের ভাড়। সেই ভাড়ে চুমুক দিতাম। অন্ধকারের মধ্যে পথিক দেখতে পেলে বাঘের মত লাফ দিয়ে উঠতাম । হাতে থাকত ‘ফাবড়া—শক্ত বাশের দু-হাত লম্বা লাঠি, সেই লাঠি ছুড়তাম মাটির কোল ঘেষে। সাপের মত গোঙাতে গোঙাতে সে লাঠি ছুটে গিয়ে পথিকের পায়ে লাগলে আর তার নিস্তার ছিল না। তাকে পড়তেই হত। তারপর একখানা বড় লাঠি তার ঘাড়ের ওপর দিয়ে চেপে দাড়াতাম, আর পা দুটাে ধরে দেহটা উল্টে দিলেই ঘাড়টা ভেঙে যেত। •.

  • يعية : : " "