পাতা:প্রবাসী (ত্রয়স্ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৩৫৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আষাঢ় বড় বউকে প্রণাম করিল। বলিল,--ম, একজামিন আজ শেষ হ’ল, আমি বোধ হয় পাস হব। যোগেশের মাত মৃদু স্বরে কহিলেন;–ঠাকুর তাই করুন, তুই পাস হলে সকলের কত আহলাদ হবে। কথা কহিতে র্তাহার, স্বর ভঙ্গ হইল। যোগেশ বিস্মিত হইয় তাহার মুখে দিকে চাহিল, পিসিমার, বড় বউর মুখ চাহিয়া দেখিল। সকলের মুখ মান, কাহারও মুখে কোন কথা নাই। অজানিত আশঙ্কায় যোগেশের বুক কঁাপিয়া উঠিল। উদ্বিগ্ন হইয়া জিজ্ঞাসা করিল, তোমরা সব অমন করে চুপ করে রয়েচ কেন ? কি হয়েচে ? তাহার স্মরণ হইল সে যখন ঘরে প্রবেশ করে সে-সময় সরোজিনীকে উঠিয়৷ অন্য ধরে যাইতে দেখে নাই। সরোজিনী কোথায় ? সরল সঙ্কেত করিয়া যোগেশকে ডাকিল। যোগেশের মাতার দুই চক্ষু বাহিয়া অশ্র প্রবাহিত হইতেছিল। যোগেশ ও সরলা যোগেশের ঘরে প্রবেশ করিল। সে ঘরেও সরোজিনী নাই। যোগেশ অধীর ভাবে বলিল, কি হয়েচে বড়বউ ? ছোটবউকে দেখতে পাচ্চি নে । অশ্রীরূদ্ধ কণ্ঠে, ধীরে ধীরে, থামিয়া থামিয়া সরলা সকল কথা বলিল। সরোজিনী চিতায় উঠিয়া বসিয়াছিল শুনিষ্ঠ যোগেশ শিহরিয়া উঠিল, বলিল,- কি সৰ্ব্বনাশ ! জ্যান্ত মানুষকে পোড়াতে নিয়ে গিয়েছিল। যখন আবার জ্ঞান হ’ল ছোটবউ বাড়ি ফিরে এল না কেন ? —সকলে বললে দানোয় পেয়েচে । ছোটবউ বাম কৈবৰ্ত্তানীর বাড়িতে রয়েচে । কর্তা বলচেন, তাকে আর এ বাড়িতে আনা হবে না। আমরা সব ছোটবউকে দেখতে গিয়েছিলাম। সেও কোনমতে আসবে না । যোগেশ ঘরের বাহিরে আসিয়া মাতাকে বলিল,-ম, একটা আনাড়ী বৈদ্যের কথায় জ্যান্ত মানুষকে সকলে পোড়াতে গিয়েছিল। যদি জ্ঞান না হত তা হলে ত তাকে পুড়িয়েই মারত। তোমার মনে পড়ে তুমি যখন জিজ্ঞাসা করেছিলে মরা মানুষ কি বঁচে তখন আমি বলেছিলাম একটা মুছ1 ব্যারাম আছে যাতে মানুষ বেঁচে থাকলেও মনে হয় মরে গিয়েচে । এই অপরাধে জ্যাঠামশায় ছোটবউকে জার বাড়ি চুকতে দেবেন না ? - - وی است و 9 . পুনর্জীবন ৬২১ ' যোগেশের মাত কাদিয়া বলিলেন- বাবা, আমরা কি বলব, আমাদের কি কোন হাত আছে ? — তা জানি। কিন্তু আর কারুর কথায় যদি বিন অপরাধে আমি আমার স্ত্রীকে ত্যাগ করি তা হলে আমার নরকেও ঠাই হবে না। ছোটবউ এখানে না এলে আমাকেও বাড়ি থেকে বেরুতে হবে সে কথা ভাবা উচিত ছিল। যোগেশ ব্যাগ হাতে করিয়া বেগে বাড়ির বাহির হইয়৷ গেল। ছেলে বাড়ি আসিলে কোথাম সকলে আহলাদ করিবে, না সকলে কাদিতে আরম্ভ করিল। বাড়ি ফিরিয়া উমেশ দেখিলেন স্ত্রীলোকেরা অধোমূপে অশ্রু বিসর্জন করিতেছে। তিনি বিস্মিত ও বিরক্ত হটস্থা জিজ্ঞাসা করিলেন. কিসের কান্নাকাটি ? আবার কি হ’ল ? উমেশের ভগিনী বলিলেন, বউটী ত বাড়ি থেকে গিয়েইচে, এখন ছেলেটাও বাড়ি থেকে লেরিয়ে গেল । কথাটা উমেশ প্রথমে বুঝিতে পারিলেন না, জিজ্ঞাস করিলেন, কার কথা বলচ ? — আবার কার, যোগেশের । সে এই মাত্র কলকেতা থেকে এল. তার পর যেই শুনলে ছোটবউমা এপানে নেই, বাম কৈবৰ্ত্তানীর বাড়িতে আছে আমনি ব্যাগ হাতে ক’রে’ ছুটে বেরিয়ে গেল। উমেশ স্তব্ধ হইয়া রহিলেন । এরূপ সম্ভাবনা তাহার মনে কখনও উদয় হয় নাই । তিনি জানিতেন, যোগেশ র্তাহার বিনা অনুমতিতে কিছুই করিতে পারে না। যোগেশের স্ত্রী যখন কৈবৰ্ত্তর ঘরে আশ্রয় গ্রহণ করিয়াছে তখন তাহাকে ত্যাগ করা ব্যতীত আর কি উপায় আছে ? নিতান্তপক্ষে আর কিছুদিন পরে যোগেশের আবার বিবাহ দিলেই গোল ফুরাইবে। যোগেশ যে এমন বাকিয় দাড়াইবে তাহা তিনি স্বপ্নেও কল্পনা করিতে পারেন নাই। কিছুক্ষণ চুপ করিয়া থাকিয় উমেশ বলিলেন,-আজকালকার ছেলেদের কাগুজ্ঞান নেই। যোগেশ কি বলে আমার সঙ্গে দেখা না করে আমাকে কিছু না বলে বাড়ি থেকে চলে গেল? যাক, এখন হয়ত তার মাথার ঠিক নেই, কাল সকালে তাকে ডেকে নিয়ে আসব। যোগেশ হন-হন করিয়া কৃতপদে একেবারে বামার বাড়িতে