পাতা:প্রবাসী (ত্রয়স্ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৩৬২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

*** বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বারমোচন করিম জীবনসংগ্রামে প্রবেশ করেন তখন অন্ধকার দেখিতে থাকেন ও একটু একটু করিয়া মোহ ঘূচিতে থাকে। কত বিধবা মা হৃতসৰ্ব্বস্ব হুইয়৷ শেষ গহনখানি পৰ্য্যন্ত বিক্রয় - করিয়া এবং কত দরিদ্র পিতা নিজের পৈতৃক ভিটামাটি বন্ধক দিম৷ যে কি প্রকারে ব্যয়সস্কুলান করেন তাহ ভাবিতেও কষ্ট হয়, এবং তাহাদের আশাভরসাস্থল বিশ্ববিদ্যালয়ের তকৃমাযুক্ত পুত্ৰগণের দিকে তাকাইয় তাহারা যে ভবিষ্যতের মুখস্বপ্নের কল্পনা করিয়াছিলেন তাহী ক্রমে ক্রমে বিলয়প্রাপ্ত হয় । কয়েক বৎসর হইল আমাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোর্ট মেম্বার স্বরূপ বছরে একবার করিয়া তথায় গমন করিতে হয় । ঢাকা শহরেও সিনেমা একটি দুইটি করিয়া গড়িয় উঠতেছে এবং তাহারই নিকটবৰ্ত্তী নারায়ণগঞ্জেও এই পাপ ঢুকিয়াছে। তথাকার একজন উকিলের মুখে শুনা গেল, “আমি একটি সিনেমার পরিচালক (ডিরেক্টর ) । দু-পয়সা রোজগার হয় বটে, কিন্তু যখন টাকা গুণিবার সময় দেখি অনেকগুলিতে সিঁদুরের ছাপ আছে (ম-বোনদের বলিয়া দিতে হুইবে না যে এগুলি লক্ষ্মীর কোঁটা হইতে অপহৃত) তখন হৃদয় শুদ্ধ হয় এবং ভাবি যে কি পাপের প্রশ্রয় দিতেছি।” ছাত্রদিগের মধ্যে শহরে আসিয়া বিদ্যাশিক্ষা করার একটি প্রবল আকর্ষণ আছে, কারণ শহরের হ্যায় আর কোন স্থানে বিলাসপ্রিয় ও অনায়াসলন্ধ জীবন যাপন করা চলে না । এ-স্থলে বাগেরহাট কলেজের বিষয় কিছু না-বলিয়৷ থাকিতে পারিতেছি না। আজ প্রায় চোদ-পনর বৎসর হইল একদিন তত্রস্থ কয়েক জন নেতা ও কী কলেজ অফ সাম্রান্সে আমার নিকট আসিয়া উপস্থিত হইলেন এবং বলিলেন, তাহারা বাগেরহাটে একটি কলেজ সংস্থাপনের জঙ্ক স্থিরসঙ্কল্প হইয়াছেন, তাহাতে আমার সাহায্য ও সহানুভূতি প্রার্থনা করেন ; আরও বলিলেন কলিকাতায় ছেলেপিলে পড়ান বহু ব্যয়সাধ্য, বিশেষত শহরের ছাত্রগণ নানাবিধ প্রলোভনের মধ্যে পতিত হয় । আমিও মাঝে মাৰে ভাবিতেছিলাম ম্যালেরিয়ামুক্ত কোন পল্লীগ্রামে, যেখানে বিস্তৃত ভূমিথও সহজলভ্য ও রেলওয়ে ষ্টীমার সাহায্যে যাতায়াতের স্ববিধা আছে, এইরূপ স্থানে একটি কলেজ করিতে {zo SO8O পারিলে বোধ হয় বর্তমান শিক্ষাপ্রণালী ও পূৰ্ব্বেকার টোলের ছাত্রাবাস উভয়েরই সামঞ্জস্ত রক্ষা করা হইবে। প্রথম অবস্থায় ছাত্রাবাসের জন্য নদীতটে তৃণাচ্ছাদিত ভূমিখণ্ডের উপর ঘর তৈয়ারী করা হইল, চারিদিকে উন্মুক্ত প্রাস্তর এবং হুহু করিয়া বাতাস প্রবাহিত হয়। সেই স্থানে কলিকাতার অলিগলির ভিতরের একতালা ঘরের স্যাতসেঁতে ভাব একেবারেই নাই, এক একটি ঘর আবার কতকগুলি প্রকোষ্ঠে বিভক্ত এবং তাহার ভাড় মাত্র এক টাকা ধার্ঘ্য হইল ; প্রকাগু মাঠ, ফুটবল ক্রিকেট খেলিবারও যথেষ্ট স্থান এবং নদীর উপর নৌকা-সঞ্চালন দ্বারা ব্যায়াম করিবারও স্নবন্দোবস্ত । কিন্তু ইহার বিপরীত ফল ফলিল। এই সকল সৰ্ব্ববিধ সুবিধা থাকা সত্ত্বেও ছাত্রসংখ্যা দিনের পর দিন হ্রাস পাইতে . লাগিল। প্রথম দুই এক বৎসর কলেজে প্রায় তিন চারি শত ছাত্র অধ্যয়ন করিত, কিন্তু গত বৎসরে তাহা একশত চল্লিশ জনে আসিয়া দাড়াইয়াছিল এবং এ-বৎসর টানাটানি করিম বোধ হয় দুইশত পঞ্চাশ জন হইবে। এই বাগেরহাট কলেজের অধ্যক্ষ অতি অমায়িক অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ব্যক্তি এবং ছাত্রবৎসল ও সহজঅধিগম্য। ইনি এবং আর কয়েক জন অধ্যাপক এই কলেজের আশেপাশের বাসিন্দা, সেজন্য সকল সময়ই তাহার ছাত্রদিগের লেখাপড়ার দিকে স্বদৃষ্টি রাথিতে পারেন। বাছিয়া বাছিয়া এমন সব অধ্যাপক নিযুক্ত করা হইল যে, তাহারা কোন অংশেই কলিকাতার কলেজের অধ্যাপকদের তুলনায় নিকৃষ্ট নহেন। যখন ছাত্রসংখ্যা কমিতে লাগিল তখন ছেলেদের পক্ষ হইতে এই অভিধোগ আসিল যে, তাহার কাচা ঘরে থাকিতে নারাজ, কাজেই গ্রীষ্মাবকাশের সময় আমিও সেইস্থানের কর্তৃপক্ষদের সহিঃ ভিক্ষার ঝুলি কাধে লইয়া নানাস্থানে ঘুরিতে লাগিলাম এবং এই প্রকারে কতকগুলি পাকা বাড়িও হইল। কিন্তু তাহাতেও বিশেষ ফল ফলিল না। তখন ব্লগেরহাটের কেহ কেহ আমাকে বলিলেন, “মহাশয় আপনি বুঝিলেন না যে, এ পাড়াগায়ে ছেলেরা থাকিতে আদৌ রাজী নয়। আজব শহর কলিকাতায় বহুবিধ আকর্ষণের বস্তু আছে, সেখানে বিজলী বাতিসংযুক্ত বড় বড় হোষ্টেল এবং রেস্তোর সিনেমা প্রভৃতি বিদ্যমান। বিশেষতঃ বাগেরহাটে থাকিলে