পাতা:প্রবাসী (ত্রয়স্ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৩৭৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আষাঢ় উমানাথ ধমকে উঠে বললেন, “রাখে রাখে,— তোমার ও-সব নাকে-কাদা শিভালরি আমার ঢের শোনা আছে।’ তিনজনে নীরব। সব মিথ্য, মুহিতার সব মিথ্যা। আবহমানকালের শুনে-আসা রীতি এমন করে তার মিথ্য হল ! আতি-অপরিচিত অজানা একব্যক্তি এক সন্ধ্যার মন্ত্রবলে জন্মজন্মাস্তরের নিকটতম হয়ে উঠবে এই চিরন্তন প্রথাকেই ত সে মেনে নিয়েছিল। তাই ত জীবনের এ নব-অধ্যায়ের অতিথিকে যখন সে চোখ মেলে দেখলে তখন এমন সহজে তাকে গ্রহণ করতে পারলে। তার কুমারী জীবনে যে পথিকের আগমন আশায় প্রদীপ জলেছে, বিবাহের শুভলগ্নেই তাকে সে পাবে, বিবাহের বরসজ্জায় যার আগমন সে-ই তার জন্মতোরণে হারিয়ে-যাওয়া জন অরণ্য হতে খুঁজে পাওয়া জন্মান্তরের পরিচিত—এর মাঝে ত সংশয় জাগে নি! অমিতাভকে এই যে তার ভাল লাগা, . সে জেনেছে এটা হ’ল বিবাহের মন্ত্রশক্তির প্রভাবে । সে ধারণা এত ভ্রান্ত এত মিথ্যা হ’ল আজ ! এমন ক’রে তাকে প্রতারিত করলে –আচ্ছা-দশনে সে অধর দংশন করলে। প্রতারণাকে প্রতারিত করবে সে । তার হৃদম্বের নিতৃত কন্দরশায়ী দেবতা তাকে দিয়ে যার গলায় বরমাল্য পরিয়েছেন, তাকেই সে বরণ করে নেবে,—আজন্মের সংস্কার, বিবাহের বাহ অনুষ্ঠান তার পক্ষে ব্যর্থ হোক্‌ গ্রাহ করবে না ... উমানাথ ডাক দিলেন, ‘চল না মুহিতা ' —“আমি যাব না।’ বক্ত পড়লেও উমানাথ এত চম্কে উঠতেন না। তড়াক করে তিন হাত লাফিয়ে উঠে বললেন, ‘কি ? অমিতাভ বাইরের দিকে তাকিয়ে ছিল। বিদ্যুৎস্পৃষ্টের মত চমকে ফিরে মুহিতার মুখের দিকে চাইলে । স্বহিত বললে, “আমি যাব না।’ এতদিন সে সকল সংস্কারকে নির্বিচারে মেনে এসেছে। আজ দেখেছে প্রতারণার রূঢ় আঘাত বুকে এসে বাজল। আজও কি তার নিজে পথ দেখে চলার সময় হ’ল না ! এ নবজীবনের পথ তার জ্যোৎস্না-সরস হবে না নিশ্চয়,— রুত্রের ললাটনেত্রের বহির আলোয় যাত্রা তাদের স্বরূ-— আকাশে তার রঙের লীলা নাই বা রইল, মহাসন্ন্যাসীর ভবিতব্যতা WS)02 বাধন-খসা জটার জটিলতা সেখানে দেখে সে ত ফিরবে না – সে এরই মাঝে সত্যের সন্ধান পেয়েছে, সংস্কার কি আর তাকে বাধতে পারে! বাকশক্তি ফিরে পেয়ে উমানাথ গর্জন করে উঠলেন, - “কি বললে, আসবে না ! জান ওর সঙ্গে তোমার বিয়ে इश्च नि ।।' মুহিতা মাথা হেলাল । কত বড় রাজবাড়িতে তোমার বিয়ে হয়েছে জান তুমি ? তাদের নামে বাঘে-গরুতে এক ঘাটে জল খায়, জান ? "দরকার নেই জানবার।’ 'না, তা কেন দরকার থাকবে । শুধু ভুল করে এই যে তোমার এখানে চলে আসা এতেই আমাদের কত মাথা ইেট হয়েছে, কত গুণোগার লাগবে এ শোধরাতে, জান ! আমাদেরই ত গরজ, ওদের আর কি ! একটা ছেড়ে দশট বিয়ে করতে পারে । এখনই চলে এস বলছি !’

  • ন’ ’

ওদের গরজ ঘদি এত সহজেই শেষ হয়ে থাকে, তার গরজও তবে শেষ হয়েছে। দুৰ্য্যোগনিশায় অন্ধকারের অপরিচয়ে একজনের সঙ্গে মুহিতা সন্ত্রের বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিল, তার পরদিন প্রাতে যার সাথে পরিচয়—তাৰে নয়ন মেলে দেখে গ্রহণ করে নিলে । এখন শোনে ভুল হয়েছে--রাত্রের অন্ধকারে মন্ত্রের সম্বন্ধে সম্বন্ধ হ’ল যাৱ সঙ্গে এ সে নয় ! নাই হোক,- আজ অকুণ্ঠ আলো আভায় যার সঙ্গে পরিচয়, তারই আবির্ভাব একান্ত সত মুহিতার জীবনে। রাত্রের অন্ধকারে মন্ত্রের পরিচ দুঃস্বপ্নের মত মিথ্যা হয়ে গেছে এখন ...তাদের এই মিলনে সাহানার স্বকোমল স্বর বাজবে না, নিন্দ-অপবাদের রক্তিম ভৈরে রাগে হবে তাদের পরিচয় । সমাজ তাকে এড়িয়ে যাবে। জন-অরণ্যে এই স্বেচ্ছাকৃত নিৰ্ব্বাসন তাকে কাটার মত বিধবে । বিধুক তা ... ক্রোধে কম্পিত হয়ে উমানাথ বললেন, ‘না ! বটে ! তুমি রাজবধু হতে চাও না, তুমি আমাদের ত্যাগ করে, সমাজ ত্যাগ করে এখানে এই স্বেচ্ছাচারে থাকতে চাও ’ অমিতাভের ললাট লাল হয়ে উঠল। সে নিজেকে সামূলে রাখলে ।