পাতা:প্রবাসী (ত্রয়স্ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৪২১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আষাঢ় शृजण "ebo আমি নিতে পারব। অবস্তি আমি নিজের ইচ্ছেন্ন আসিনি তা বলাই বাহুল্য...” অজয় কহিল, “ঘরে থামিটার নেই, কিন্তু আমি নিশ্চয় বলতে পারি ওর জর একশোতিনের কম হবে না। পরশু রাত থেকে কিছু না খেয়ে আছে, আজ এইমাত্র একটু জল পেটে পড়ল। এ অবস্থায় ওকে কোথাও নিয়ে যাওয়া কি ঠিক হবে ?” দারোগী কহিলেন, “হাসপাতালে যাচ্ছেন মনে করুন না, ব্যাপারটা আসলে ত তা-ই। এই ত আধ-কোশ রাস্ত, মোড় থেকে ট্রামে চলে যাব।...আমার পরামর্শ যদি শোনেন, ত, ঐকে এখুনি এখান থেকে সরাবার ব্যবস্থা না করলেই ওঁর মারা যাবার সম্ভাবনা বেশী। আপনাদের অবস্থা জানতে ত আমার বাকী নেই ?” অজয় তবু দৃঢ়ভাবে মাথা নাড়িয়া কহিল, “ও যেতে পারবে না। দারোগা কছিলেন, “ইচ্ছে থাকৃলেই যে ফেলে রেখে যেতে পারব সে সাধ্যি কি আর আছে ? জানেনই ত, আমর। হুকুমের চাকর ... তা বেশ, নন্দবাবুর ওপরেই ভার দেওয়া যাক। কি করা উচিত তিনিই বলুন।" নন্দ উঠিয়া বসিয়াছিল, লাল ক্যানভাসের জুতাজোড়াটাতে পী ঢুকাইতে ঢুকাইতে কহিল,"আমি যাচ্ছি, চলুন।” অত্যন্ত কাতর মিনতির স্বরে অজয় কেবল কহিল, “নন্দ...” নন্দ আসিয়া তাহাকে প্রণাম করিল, কহিল, অজয়দা, অনুমতি করুন ঘুরে আসি। এসব আমার গা-সওয়া হয়ে গিয়েছে, জানেনই ত, কিছু কষ্ট হবে না। তাছাড়া হয়ত বেশীক্ষণ রাখবেই না, এমনি কতকগুলি প্রশ্ন করবে, জবাব দিয়ে চলে আসব।” অজয় তাহার মুখের দিকে চাহিল না। দারোগ অজয়ের অবস্থাটা বুঝিতে পারিলেন, কাছে আসিয়া বলিলেন, “অজয়বাবু, মনটাকে একটু ঠিক করুন। আমরা মানুষ ত ? নাহয় পুলিশে কাজ করি, আমাদেরও ভাইবোন আছে, ছেলেমেয়ে আছে। ওঁর কিছু কষ্ট হবে ন, আপনি একজন ছিলেন, আমরা সবাই মিঙ্গে ওঁকে দেখব । সরকারের যত দোষই দিন, অরখে বিমুখে সি-ক্লাশ প্রিজনাররাও বা টি টুমেন্ট পায় তা আমার আপনার সাধ্যের বাইরে, সমালোচনার বাইরে ত বটেই। এমন হতে পারে যে এখান । থেকে চলে যাবার ফলেই উনি বেঁচে যাবেন।” অজয় কিছু না বলিয় বিমানের ধরণে একটু হাসিল মাত্র। তাহার দিকে চাহিয়া নন্দের দুইচোখ অশ্রুসিক্ত হইয়া উঠিল, কিন্তু সেও নিজের মুখ হইতে একটুখানি হাসিকে কিছুতেই মিলাইয়া যাইতে দিল না। নন্দকে লইয়া দারোগ চলিয় গেলে সেইখানেই দুইহাতে মাটিতে ভর দিয়া অজয় বসিয়া পড়িল। মুখের হাসি ক্রমে বেদনায় রূপান্তরিত হইয়া যাইতেছে। দুই হাত কানের উপর চাপিয়া সে রক্তস্রোতের শব্দ বন্ধ করিতে প্রয়াস পাইতেছে, কিন্তু শব্দ দ্বিগুণতর হইতেছে। অনাহারে শরীর দুৰ্ব্বল ছিল, মনে হইল, হৃৎপিণ্ডের সমস্ত রক্ত মাথায় •উঠিয়া পড়িয়াছে, এখনই হৃৎযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হইয়া যাইবে। দুই হাতে বুকটা চাপিয়া ধরিয়া মাটিতেই সে উপুড় হইয় গুইয়া পড়িল । তারপর কাল রাত্রিতে নন্দ কঁাদিতে কঁাদিতে যেখানে লুটাইয়া পড়িয়াছিল, সেখান অবধি গড়াইয়া গিয়া নিজেকে ধূলিধূসরিত করিতে করিতে নিৰ্ম্মম হাতে নিজের গলা টিপিয়া ধরিয়া রহিল। সহসা সমস্ত অস্তিত্ব-ভর হিংস্র কঠোরতা লইয়া সে বলিয়া উঠিল, “আমি চাই না, এই ক্লিন, ধূলিমলিন, আবমানিত জীবনকে আমি চাই না। এই নিরুপায়, নিরানন্দ, আশাহীন, উদ্দীপনাহীন জীবনে আমার কোনো প্রয়োজন নাই। হে দেবতা, তুমি ইহাকে ফিরিয়া লইতে পার, এই মুহূৰ্ত্তে ফিরিয়া লইতে পার। তুমি বাছিয়া বাছিয়া আর দেশ পাও নাই, আমাকে ভারতবর্ষে জন্মগ্রহণ করিতে পাঠাইয়াছিলে। তুমি বাছিয়া বাছিয়া আর কোনও মানুষ করিতে পার নাই, আমাকে আমি করিয়া স্বষ্টি করিয়াছিলে । জীবনে বহুবার তোমার বহু অনুগ্রহের দানকে প্রত্যাখ্যান করিয়াছি, তুমি জানো। আজ তোমার দেওয়া সৰ্ব্বোত্তম দান এই জীবনকেই আমি প্রত্যাখ্যান করিতেছি, ইহাকে ফিরিয়া লও, ফিরিয়া লও।” দেবতা সে-প্রার্থনায় কর্ণপাত করিলেন কিনা বোঝা গেল না, কিন্তু অজয়ের চোখের সম্মুখে দিনের আলো রক্তবর্ণ হইয়া ক্রমে কালো হইয়া আসিল। এই পৃথিবী, পৃথিবীর মানুষ, তাহাদের সমস্ত স্মৃতি, নিজের জীবনের