পাতা:প্রবাসী (ত্রয়স্ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৪২৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মেয়েদের ভোটের অধিকার ঐস্বৰ্ণলতা বসুঞ্জ ভোটু কথাটা আমরা অনেকে গুনি, এবং মনে করি ভোট দেওয়াটা কেবল পুরুষেরই অধিকার । কাউন্সিল, স্কুল, কলেজ, থেলার মাঠ—সব জায়গাতেই আজকাল ভোটের সাহায্যে সভ্য নির্বাচন করা হয়। আমি শুধু মেয়েদের বাংলা কাউন্সিলে ভোট দেওয়ার ব্যবস্থাসম্বন্ধে কয়েকটি কথা বলিতে চাই। যে-মেয়েরা আজকাল বাংল| কাউন্সিলে ভোট দিবার অধিকার পাইয়াছেন তাহাঁদের সংখ্যা খুবই কম। কেনন, যাহাদের একটা নির্দিষ্ট আয়ের সম্পত্তি নাই, তাহারা পুরুষই হউন, কিংবা মেয়েই হউন, ভোট দিতে পারেন না ; আর ঐরূপ সম্পত্তির মালিক মেয়েদের সংখ্যা এদেশে বেশী নহে। শীঘ্রই ভারতে নূতন শাসন-ব্যবস্থার প্রচলন হইবে। এ সময় মেয়ে-ভোটারদের সংখ্যা বাড়াইয়া লওয়া দরকার ; কেন-ন পুরুষদের মত আমাদেরও যে দেশের উপর একটা দাবি আছে, এবং দেশের প্রতি কৰ্ত্তব্য আছে, সে-কথাটা আমরা এতদিন ভাবি নাই। এখন শিক্ষাবিস্তারের সঙ্গে সঙ্গে আমরা গৃহস্থালী, শিক্ষা, ও সমাজ-সংস্কারের কাজে ক্রমশঃ অগ্রসর হইতেছি। এসব কাজ করিতে গিয়া বুঝিতে পারিতেছি যে, আমাদের ও ভোট দেওয়ার অধিকার থাকা দরকার। এই অধিকার থাকিলে ভোটপ্রার্থিগণ মেয়ে-ভোটারদের একেবারে তুচ্ছ করিতে পরিবেন না। কাউন্সিলে সভ্যরূপে নিৰ্ব্বাচিত হইবার ইচ্ছা থাকিলে, আমাদের মতামতের বিরুদ্ধে সহজে তাহারা যাইতে পরিবেন না। প্রায় সমুদয় সভ্যদেশেই নিৰ্ব্বাচনপ্রার্থীদিগকে ভোটারদের মুখাপেক্ষী হইতে হয়, ভোটারদের অভাব-অভিযোগ সম্বন্ধে সজাগ থাকিতে হয়, আর ভোটারদের অধিকাংশের মতের প্রভাবে নিজেদের মত গঠন করিয়া লইতে হয়। যাহার ভোটপ্রার্থী হন, তাহাদিগকে একটা ঘোষণাপত্র প্রচার করিতে হয়, এবং এ-পত্রে তাহারা দেশের কি কি কাজ করিয়াছেন, এবং কাউন্সিলে ঢুকিয় কি কি কাজ করিতে প্রস্তুত আছেন, তাহার একটা বর্ণনা দিয়া

  • জীযুক্ত স্বর্ণলতা বন্ধ (মিসেস পি. কে. ৰঙ্গ) বেঙ্গল প্রভিনগুল ফ্রানচিজ কমিটির সভ্য ছিলেন —প্রবাসীর সম্পাদক ।

থাকেন। ঐ ঐ কাজগুলি করিয়া উঠিতে না পারিলে, র্তাহারা পরের বারে নির্বাচিত হইবার আশা করিতে পারেন না। আমাদের দেশেও ভোটপ্রার্থীরা পুরুষ-ভোটারদের মুখাপেক্ষী হইতে আরম্ভ করিয়াছেন, কিন্তু আমাদের মেয়েভোটারদের সংখ্যা এত কম. যে, তাহারা আমাদের ভোটের উপর মোটেই নির্ভর করেন না ; সুতরাং আমাদের নিকট তাহাদের দায়িত্বের কোনও বালাই নাই। মেয়েদের উন্নতির জন্য কাজ করার কোনও অঙ্গীকারপত্র উহাদের দিতে হয় না, এবং কেহ তাহাদিগকে ঐরপ কাজে বাধা করিতেও পারেন না । এই অবস্থার প্রতিকার শুধু আমাদের মেয়ে ভোটারদের সংখ্যা বাড়াইলেক্ট সম্ভব হইতে পারে। এ বিষয়টি এখন অনেকেই ভাবিতেছেন, এবং র্যাহারা মেয়েদের হিতকর অনুষ্ঠানগুলির সহিত লিপ্ত আছেন, তাহার মেয়ে-ভোটারদের সংখ্যা বাড়াইবার উদ্দেশ্যে গবর্ণমেণ্টের নিকট আবেদনও করিয়াছেন। এ-বিষয়ে রাজপুরুষগণের দৃষ্টিও যে আকৃষ্ট হয় নাই তাহা নহে। সাইমন কমিশন, বিলাতের প্রধান মন্ত্রী ম্যাকডোনাল্ড সাহেব এবং লোথিয়ান কমিটি— প্রত্যেকে মন্তব্য প্রকাশ করিয়াছেন যে, মেয়ে-ভোটারদের সংখ্যা বাড়ানো দরকার। এ-বিষয়ে আমাদের দেশেও অনেক আন্দোলন হইতেছে । পুরুষেরাও এখন আমাদের পক্ষপাতী হইয়া বলিতেছেন যে, মেয়ে-ভোটারদের সংখ্যা বাড়ানো উচিত। আমরাও এখন বুঝিতেছি যে, আমাদের ভোটারের সংখ্যা বাড়ানোর কতখানি প্রয়োজন । আমরা এ-বিষয়ে অনেকে চিন্তা করিয়াছি, এবং ঠিক করিয়াছি যে, মেয়েদের কাউন্সিলে ভোট দেওয়ার যোগ্যতা শুধু সম্পত্তিগত করিলে চলিবে না। যোগ্যতার অন্তরূপ মাপকাটিও ঠিক করা প্রয়োজন হইবে। তাহ না হইলে নূতন শাসনপ্রণালী প্ৰবৰ্ত্তিত হইবার পর কাউন্সিলে মেয়েদের নির্বাচিত হইবার কোনও সম্ভাবনাই থাকিবে না বলিয়া আমাদের বিশ্বাস। এতদ্ভিয়, আমাদের মধ্যে নিজেদের ভাল-মন্দ বিবেচনা করিবার প্রবৃত্তিও জঙ্কিবে না,