পাতা:প্রবাসী (ত্রয়স্ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৪৩৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

জাতিগঠনে গ্রন্থালয়ের স্থান ঐমুণীন্দ্র দেব রায় মহাশয় ঋষিগণ মুখে মুখে কিরূপ চলন্ত লাইব্রেরীর কার্য্য করিয়া বেড়াইতেন মহাভারতের যুগে আধুনিক ক্লাবের মত প্রতিষ্ঠানের মধ্য দিয়া কিরূপ সাহিত্যালোচনা হইত বা বৌদ্ধযুগে নালন্দ, বিক্রমশীলা ও ওদগুপুরীর বিরাট লাইব্রেরীর কথা অথবা অধ্যাপকদের আশ্রমে বা চতুষ্পাঠগুলিতে জ্ঞানের অফুরন্ত ভাণ্ডার অগাধ পাণ্ডিত্যের আধার অমূল্য শাস্ত্রগ্রন্থ সংগৃহীত ও সঞ্চিত থাকিত সে-সকল বিষয়ে আজ আমি আলোচনা করিব না। তথনকার দিনে জগতের সর্বত্র গ্রন্থসংরক্ষণ ছিল গ্রন্থাগারের প্রধান লক্ষ্য, আমাদের দেশে পুথিগুলি কাষ্ঠখণ্ডে আবদ্ধ করিয়া বস্ত্রাবৃত করিয়া রাখা হইত। এত যত্বে রক্ষিত ছিল বলিয়া আজও বহু অমূল্য গ্রন্থ জগত হইতে বিলুপ্ত হইতে পারে নাই। একখানি সম্পূর্ণ মহাভারত বা শ্ৰীমদ্ভাগবত নকল করিতে বৎসরের পর বৎসর অতিবাহিত হইত—এত পরিশ্রমলব্ধ দ্রব্যের আদর ও ঘত্ব অস্বাভাবিক নহে । খৃষ্টীয় ষোড়শ শতাব্দীতেও বিলাতে ও ইউরোপের নানা স্থানে আলমারীতে পুস্তক শুঙ্খলাবস্থায় রাখিবার ব্যবস্থা ছিল। প্রথমতঃ, পিতলের ফ্রেমে পুস্তক আবদ্ধ রাখা হইতে। ফ্রেমের সহিত আঙট থাকিত, তাহার ভিতর দিয়া লৌহের শিকল লইয়া গিয়া তাকের দুই দিকে আটকান হইত। শিকল যতটা লম্বা তাহার অতিরিক্ত দূরে পুস্তক লইয়া যাওয়া চলিত না। তখন ব্যবহার অপেক্ষা পুস্তক সংরক্ষণ ছিল মুখ্য উদ্দেশু। মুদ্রাঘন্ত্র আবিষ্কারের পরও বহুদিন পৰ্য্যস্ত পুস্তক শৃঙ্খলমুক্ত হয় নাই। সেটা একটা অভ্যাসের মধ্যে দাড়াইয়া গিয়াছিল। মুত্রাযন্ত্রের দ্রুত উন্নতি ক্রমশঃ পুস্তকের শৃঙ্খল মোচনের সহায়ক হয়। স্বাধীনতালাভ সত্বেও পুস্তক সাধারণের ব্যবহারে আসিতে আরও এক শতাব্দী কাটিয়া যায়। “পুস্তক-সংরক্ষণ” নীতি অপসারিত হইয়া “ব্যবহারের জন্তই পুস্তক’-নীতি ক্রমে অবলম্বিত হয়। কিন্তু তাহ আবদ্ধ রাখা হয় ক্ষুদ্র গওঁীর মধ্যে। যাহারা অর্থসাহায্য বা চাঁদ t)=\తి দিতে পারিত কেবল তাহারাই গ্রন্থালয়ে বসিয়া পুস্তকপাঠের অধিকার পাইত ক্রমে মূল্য জমা দিয়া নির্দিষ্ট সময়ের জন্য পুস্তক গৃহে লইয়া যাইবার নিয়ম প্রবর্তিত হয়। পুস্তকের অবাধ ব্যবহার-নীতি প্রবর্তিত হইয়াছে—নিতান্ত আধুনিক যুগে। কিছুকাল পূৰ্ব্বে হারভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়-সংশ্লিষ্ট গ্রন্থাগারের অধ্যক্ষ পূৰ্ব্ব তালিকার সহিত পুস্তক মিল করিয়া নূতন তালিকা প্রস্তুত করিতেছিলেন, কাৰ্য্যশেষে তিনি দেখেন, কেবলমাত্র দুইখানি পুস্তক জনৈক পাঠকের নিকট হইতে ফেরৎ আসে নাই আর সকলই যথাযথভাবে আলমারীতে বদ্ধ আছে দেখিয়৷ তিনি উৎফুল্ল হন। এখনকার দিনে সে মনোবৃত্তি পাণ্টাইতে হুইবে । এখন পাঠকদের মধ্যে পুস্তক বিলি করিয়া অালমারী খালি করিতে পারিলে গ্রন্থাধ্যক্ষ তাহার কৰ্ত্তব্যপালনে কৃতকাৰ্য্য হইয়াছেন বলিয়া আত্মপ্রসাদ লাভ করেন। এখন ইউরোপ ও আমেরিকার স্বদূর পল্লীতে লোকের দ্বারে দ্বারে চলন্ত পুস্তকের বাক্স পল্লীবাসীকে পুস্তকপাঠে আকৃষ্ট করিবার চেষ্টা করে— পাঠস্পৃহা বৰ্দ্ধিত করিবার সহায়ক হয়। স্ত্রী-শিক্ষা সম্বন্ধেও আধুনিক সভ্য দেশসমূহ অৰ্দ্ধ শতাব্দী পূৰ্ব্বেও অধিক দূর অগ্রসর হয় নাই। আমাদের দেশে বহু পুৰ্ব্বকালেও স্ত্রীলোকের জ্ঞানচর্চার কোনও বাধা ছিল না। ইউরোপ ও আমেরিকায় পঞ্চাশ বৎসরের মধ্যে নারীশিক্ষা বিষয়ে সামাজিক মতের পরিবর্তন হইয়া গিয়াছে। এখন সকল বিষয়ে পুরুষের সহিত নারীর সমানাধিকারের যুগ আসিয়াছে। আমাদের দেশেও এখন সেই হাওয়৷ বহিতেছে। জ্ঞানলাভে স্ত্রী-পুরুষনিৰ্ব্বিশেষে আপামরসাধারণের সমান অধিকার আবহমান কাল হইতে আমাদের দেশে স্বীকৃত হইয়া আসিতেছে। নিরক্ষরতা এথানে জ্ঞানলাভের অন্তরায় হয় নাই। নিরক্ষর থাকিয়াও সকলে জ্ঞানার্জনের কিছু স্নযোগ ও মুবিধা পাইত ; কথকতা, পুরাণ, ভাগবত, মহাভারত, রামায়ণ প্রভৃতি সদগ্রন্থ পাঠের পূৰ্ব্বে বহুল প্রচলন ছিল, নিরক্ষর লোক পাঠ শুনিয়া শুনিয়া