পাতা:প্রবাসী (ত্রয়স্ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৪৩৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8०२ অনেক জ্ঞান লাভ করিত। যাত্র প্রভৃতি আমোদামুষ্ঠানের ভিতর দিয়াও নানা বিষয়ে শিক্ষালাভ করিতে পারিত। নিরক্ষর থাকিয়াও হিতাহিত বিচারশক্তি ফুরিত হইত, লোক স্বধৰ্ম্মপরায়ণ থাকিয়া সমাজের অশেষ কল্যাণসাধন করিতে পারিত। এখন কালধৰ্ম্মে সব ওলট-পালট হইয়া যাইতেছে। এখন আর নিরক্ষর থাকিলে চলিবে না। এদেশে প্রাথমিক বিদ্যাশিক্ষার আইন বিধিবদ্ধ হইয়াছে--- ইহাতে নিরক্ষরত বিদূরণের পথ উন্মুক্ত হইবে। প্রাথমিকবিদ্যা শিক্ষালাভের প্রথম সোপান ; দ্বিতীয় সোপান হইতেছে উচ্চ বিদ্যালয়, ও তৃতীয় সোপান কালেজী বিদ্যা। আমাদের এ গরিব দেশে দ্বিতীয় সোপানে উঠতে পরিবে কয় জন ? অার গরিবের পক্ষে বহুব্যয়সাধ্য তৃতীয়ের কথা ছাড়িয়া দিলাম। এখন প্রাথমিক শিক্ষা পৰ্য্যন্ত যাহারা শিক্ষালাভ করিবে, তাহাদের উত্তরোত্তর জ্ঞান বর্ধনের ব্যবস্থা না করিলে এখন তাহারা যাহা শিখিবে তাহাও ক্রমে বিস্তৃত হইবে, তাহদের জন্য যে বিপুল ব্যয় হইবে সবই ব্যর্থ হইয়া যাইবে । সেজন্য গ্রামে গ্রামে চলন্ত লাইব্রেরী প্রেরণের ব্যবস্থা করা একান্ত প্রয়োজন হইবে। জ্ঞানশূহ বৰ্দ্ধন ও পুস্তকপাঠের আগ্রহ জাগাইয়া রাখিতে হইলে দেশের ভবিষ্যতের প্রতি লক্ষ্য রাখিয়৷ একটা কিছু ব্যবস্থা করিতেই হইবে। আপামর সাধারণের মধ্যে জ্ঞানপ্রচার এবং জ্ঞানান্ধকার বিদূরণ মহা পুণাকৰ্ম্ম। বিদ্যালয়ের শিক্ষা নির্দিষ্ট কালের জন্য, আর গ্রন্থালয়ের শিক্ষা জীবনব্যাপী। প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলিতে ছেলেদের লাইব্রেরীর ভালরূপ বন্দোবস্ত করিবার জন্য আমি গবর্ণমেণ্টকে বিশেষভাবে অনুরোধ করিব। জনৈক বিভাগীয় স্কুল-পরিদর্শকের সহিত সম্প্রতি এ-বিষয়ে আমি আলোচনা করিতেছিলাম। তিনি স্বীকার করেন যে, এ দেশে স্কুল-সংলগ্ন লাইব্রেরীগুলি অকিঞ্চিৎকর, ছেলেদের পক্ষে আদৌ চিত্তাকর্ষক নহে এবং পাঠেচ্ছাবদ্ধনে কিছুমাত্র সহায়তা করে না। জগতে সৰ্ব্বত্র শিশু-পাঠাগারের শ্ৰীবৃদ্ধিকল্পে বিপুল প্রচেষ্টা চলিতেছে। দেশের ভবিষ্যং তো এই ছেলেদেরই হাতে। পোল্যাগু দেশে শিশু-লাইব্রেরী পরিচালনের ভার তাহাদে ই হাতে ন্যস্ত থাকে। এই দায়িত্বপূর্ণ স্বায়ত্তশাসনকার্য্যে এইখানেই তাঁহাদের হাতেখড়ি হয়। শিশুপ্রতিভা ফুরণের কি অপূর্ব উপায়। নরওয়ের শিশু-লাইব্রেরীগুলিতে SOBO গল্পের ক্লাস আছে, গল্পের সঙ্গে সঙ্গে নানা বিষয়ে শিক্ষা দেওয়া হয়, জ্ঞানশূহ ও পাঠেচ্ছ বর্ধনের উদ্দেশেই গল্পের অবতারণা করা হয়। নির্দোষ আমোদ-প্রমোদের সঙ্গে জ্ঞানবৃদ্ধিকল্পে তাহাদের লইয়া নাটকাদি অভিনয়েরও ব্যবস্থা করা হইয় থাকে। খেলার ছলে যুদ্ধকৌশলও শিক্ষা দেওয়া হয়। আমাদের দেশে সন্তান-শাসনের ব্যবস্থাই চলিয়া আসিতেছে। তাহাদের প্রকৃত মানুষ করিবার চেষ্টা দেখি না। ভারতবর্ষের বড়োদ রাজ্যে ছেলেদের লাইব্রেরীর স্বন্দর ব্যবস্থা আছে। এখন গ্রামে গ্রামে ছেলেদের উপযোগী চিত্তাকর্ষক লাইব্রেরী-প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা অত্যাবশ্বক হইয়াছে। নরওয়ে দেশে একজন সামান্য ধীবরের পুত্র একমাত্র লাইব্রেরীর সাহায্যে জ্ঞানলাভ করিয়া এখন আমেরিকায় সেণ্টওলাফ কলেজে অধ্যাপকতা করিতেছেন। র্তাহার নাম Prof Rolvuag. বালকের পিতা চৌদ্দ বৎসর বয়সে তাহাকে স্কুল হইতে ছাড়াইয়৷ লইয়া নরওয়ের উত্তরোপকূলে এক নির্জন স্থানে ধীবরের কাৰ্য্যে নিযুক্ত করেন। বালক মৎস্ত ধরিয়া জীবিকার্জন করিত এবং অবকাশ পাইলে সমুদ্রতীরস্থ একটি লাইব্রেরী হইতে পুস্তক লইয়া পড়িত। আটাশ বৎসর বয়সে সে আমেরিকার ডিগ্রী পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হইয়া ক্রমে অধ্যাপকের পদ লাভ করে । বিগত ইউরোপীয় মহাযুদ্ধের পর হইতে জগতের সর্বত্র লাইব্রেরী-আন্দোলনের একটা সাড়া পড়িয়া গিয়াছে। বৰ্ত্তমান যুগে লাইব্রেরীগুলি জ্ঞানার্জনের প্রকষ্ট স্থান বলিয়া স্বীকৃত হইয়াছে। লাইব্রেরীর কার্য্য স্বচারুরূপে পরিচালন জন্য ইউরোপের প্রত্যেক রাজ্যে ও আমেরিকার প্রত্যেক ষ্টেটে ও ব্রিটিশাধিকৃত প্রায় সমস্ত উপনিবেশে লাইব্রেরী আইন বিধিবদ্ধ হইয়াছে। বিলাতে এবং নানাস্থানে অন্যান্ত ট্যাক্সের মত পৃথক লাইব্রেরী ‘রেট’ ধাৰ্য্য হইয়াছে। কোথাও কোথাও গবর্ণমেণ্ট সাধারণ রাজস্ব হইতে লাইব্রেরীর ব্যয়ভার বহন করিতেছেন। অনেক রাজ্যে লাইব্রেরীর উন্নতিকল্পে শিক্ষামন্ত্রীর অধীনে পৃথক লাইব্রেরী বিভাগ স্বষ্ট হইয়াছে। জগতের মধ্যে আমেরিকার যুক্তরাজ্য লাইব্রেরী আন্দোলনে শ্রেষ্ঠ স্থান অধিকার করিয়াছে। তাহার মূলীভূত কারণ হইতেছে নিউ ইয়র্ক শহরের দানবীর এনডু কার্নেগীর অতুলীয় বান্তত। তিনি মানবের কল্যাণের জন্ত এক শত কোটী টাকা দান