পাতা:প্রবাসী (ত্রয়স্ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৫১৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8ԳՆ আরম্ভ করিল। পড়া শেষ করিয়া পাতার ভিতর হইতে সযত্নে পাতাপান কাটিয়া লইয়। সেখান বুকপকেটে ভাজ করিয়া রাথিতে রাথিতে বাহির হইয় গেল। একটা নিফল আক্রোশ নিফলতর স্বতীব্র বিরক্তি যেন নিমেষের জন্য মনের মধ্যে উদিত হয়। নিশীথ ভাবে, সেও এইবার লিখিতে পারিবে, দিনের পর দিন এই রক্তমাংসের দেহটা লইয়া পৃথিবীতে বাচিয়া থাকিব। দুঃখ হয় পার্থের মস্তিষ্ক, পার্থের বিজ্ঞানের সাধন, পার্থের যুদুংম-পন্থী বলিষ্ঠ মন যদি তাহার থাকিত ! পার্থদের গৃহ ইষ্টতে শ্মশান মিনিট দশেকের পথ। ওই পল্লীর মধ্যে গঙ্গাতীরের এই জায়গাটি সৰ্ব্বাপেক্ষা প্রয়োজনীয় এবং বিখ্যাত স্থান ! নিশীথ দ্রুতপদে সেইদিকে অগ্রসর হইল। পথে আরও তিন-চার জন বন্ধুর সহিত সাক্ষাৎ-- পাড়ার বহু ছেলেবুড়ে দল বাধিয়া পার্ণের প্রতি সন্মান প্রদর্শনের উদ্দেশে শ্বশানঘাটের অভিমুখে চলিয়াছে। প্রমথ কহিল, “ ট্রেনটা তখনও দাড়িয়ে, চট করে যে নড়বে এমন ভরসা ছিল না - পার্থের তথন কলেজের বেলা হয়ে গিয়েছে কে আবার অতটা ঘুরতে যায় ? আর কোনও কাজ দেরি করে করবার ছেলেও পার্থ নয়। সে ট্রেনের নীচে দিয়েই রাস্ত পার হতে গেল, ইঞ্জিনট এসে লাগল ঠিক এমনি সময় ! কেমন করে কি হ’ল কেউ বলতে পারে না। পার্থ বোধ হয় একেবারেই প্রস্তুত ছিল না, বুকের উপর দিয়ে চলে গেল একটা চাকার খানিকটা, সব নয়, এই খানিকটা— * শ্মশানে পৌঁছিয়া নিশীথর সংবাদ পাইল পার্থকে সেখানে আনা হয় নাই, মর্গের নিকটবর্তী ঘাটে লষ্টয়া যাওয়া হুইয়াছে। খবরটা দিলেন শ্মশানঘাটের কাঠের ঠিকেদার। ডিনমাইটের মত ফাটিয়া পড়িয়া তিনি নিশীথের মুখের কাছে হাত বাড়াইতেই, তাড়াতাড়ি নাক সরাইয়া লইয়া নিশীথ আত্মরক্ষা এবং নাসিক রক্ষা করিল। গোলদার বলিল, “মশাই, আপনি পাথবাবুর বন্ধু, আপনিই বলুন তার এ কি রকম ব্যাভার - আমার ঝুড়িরডিকশনের লোক তিনি, মরলেনও আমার ঝুড়িরডিক্শানে—কিন্তুন দাহ হতে গেলেন সেই বেপাড়ার ঘটে – আর আমি পাখবাবুকে ভদ্রলোক বলে জানতুম ! এইটে হ'ল ভারলোকের কাজ ।” ఏనOBO বন্ধুবৰ্গস নিশীথ আহাম্মকের মত চাহিয়া রহিল – লোকটা পুনরায় কহিল—“এমন করলে ব্যবসা চলে কখনও ! শালা সব-রেজেষ্টার আছে, শাল কাঠের দাম ন-আনার জায়গায় স’ ন-আন কর দিগিনি একবার, আসবে দাত বীর করে ক্ষাপ কুকুরের মত তেড়ে —গাম্‌ছাট, কলসীটি সব একেবারে ফিক্স রেট। তার ওপর এই মন্দার বাজার, একে খন্দের-পত্তর নেই আবার জোটে আমার বরাতে আপনাদের মত ভদ্রলোক ! তেরোস্পৰ্শ আর কি !" বলিতে বলিতে কোধতিশয্যে তাহার বাকরোধ হইয়া গেল। মুহূর্ত পরে কহিল, “বলব কি মশাই আপনাদের ব্যাভারে—” বলিয়। সে হাত মুঠ করিয়া ক্ষিপ্তভাবে নিশীথের দিকে অগ্রসর হটয়া আসিয়া কহিল, “দুঃত্তোর তোর ভদ্রলোকের নিকুচি করেছে --” o নিশীথ পুনরায় তাড়াতাড়ি মুখ সরাষ্টয়া লইয়া নাসিকার মহিম বজায় রাখিল । গলার স্বর অপেক্ষাকৃত মোলায়েম করিয়া গোলদার কহিল, আপনাদের হলে আপনার বুঝতেন, যে রকম বাজার পড়েছে- * নিশীথকে একপাশে ডাকিয়া লইয়া গিয়া কণ্ঠস্বর আরও মিহি করিয়া বলিল, “পাখবাবুকে বেশ ঘট করেই দাহ করা হবে, ওদের অবস্থা ভাল আর আমন ছেলে বাপ-মার কত আদরের ! চন্দনকাঠের দর আমি স্ববিধে করে দেব, বিশ্বেস না হয় আপনারা যাচাই ক’রে নেবেন। আপনি তাড়াতাড়ি করে গিয়ে এখানে ওদের ফিরিয়ে নিয়ে আসতে পারেন না? আপনার কথা ওরা শুনবে, কতদিনের বন্ধু!—বলিয়া মৃদ্ধ হাসিয়া কহিল, “বলাটা ভাল দেখায় না, কিন্তুন না বললেও নয়, আপনাকেও না-হয় কিছু দেব’খন।” নিশীপের বেদনাৰ্ত্ত দৃষ্টি অসঙ্গ ক্রোধে রক্তবর্ণ হইয় উঠিল। লোকটা কিন্তু নিজের মনেই বলিতে লাগিল, “স্মশান কালীর পূজোয় কতকগুনে টাকা খরচ করে ফেলহু অথচ এগন পর্য্যন্ত তার কোনও ফলই দেখতে পাচ্ছিনে,--ব্যবসার বাজার যে মন্দা সে মন্দা । কদিনে ষে টাকা উঠবে ভগমান জানেন?” . ঘৃণায় নিশীথের সর্বশরীর কুঞ্চিত হইয়া গেল, বন্ধুবর্গের সহিত স্থানত্যাগ করার উদ্যোগ করিতেই তাহার হাত ছুইটী .