পাতা:প্রবাসী (ত্রয়স্ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৫৮৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

জমির অধিকার শ্ৰীঅবিনাশচন্দ্র দত্ত, এম-এ, বি-এল আমাদের সমাজ-ব্যবস্তায় জমির অধিকারের সমস্যা একটি বড় সমস্তা। বাংলা দেশে প্রজাস্বত্বের ১৯২৮ সনের সংশোধিত আইন প্রজা ও মধ্যবিত্তের অবস্থার জটিলতা দূর না করে, তাকে আরও সঙ্কটাপন্ন করে তুলেছে। এক দিকে নানা অর্থনৈতিক কারণে কৃষিজাত দ্রব্যের মূল্যের অল্পত এবং অন্য দিকে আইনের বিধানে কুযকের জমির মূল্যের হ্রাস, জনসাধারণের আর্থিক দুর্দশ বুদ্ধি করেছে । আমাদের সমাজ-ব্যবস্থার কথা যারা ভাবেন, তাদের লেখায় সময় সময় আমরা এ প্রসঙ্গের উল্লেখ দেখে থাকি। সমাজের বৃহত্তর কল্যাণের দিকে লক্ষ্য রেখে, এ সমস্তার সমাধান-বিষয়ে আরও বিশেষ আলোচনা এবং আন্দোলন হওয়া উচিত। ১৯৩১ সনের মার্চ মাসে ভারতের জাতীয় কংগ্রেসের করাচী অধিবেশন মহাত্মা গান্ধীর যে প্রস্তাব গ্রহণ করেছিলেন, তাতে মজুর ও কৃষক উভয় শ্রেণী সম্বন্ধেই কংগ্রেসের অভিপ্রায় ব্যক্ত হয়েছে। উক্ত প্রস্তাবে কারখানা ও ভূমির উপর মজুর ও কৃষকের স্বত্ব সম্বন্ধে কংগ্রেস কিছু বলেন নি । ংগ্রেসের এই অর্থনৈতিক প্রস্তাবের ৮, ৯ ও ২০ দফায় এইরূপ বলা হয়েছে, – “ভূমির রাজস্বের ও কৃষকের গরলায়েক ( unranonie ) জমিবাবদ দেয় খাজনার প্রভুত হ্রাস ; এবং সেজন্য যতকাল প্রয়োজন, খাজনা থেকে অব্যাহতি ।” “নিদিষ্ট পরিমাণ আয়ের অতিরিক্ত কুমির আয়ের উপর আয়-কর ধাৰ্য্য করা ? ‘প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ চড়া স্কদের দমন ।’ কংগ্রেসের নিখিল ভারতীয় রাষ্ট্রসমিতি ১৯৩২ সালের ১লা জানুয়ারি তারিখে বম্বের অধিবেশনে একটি প্রস্তাবে জমিদারদিগকেও আশ্বাস দিয়েছেন যে, জমিদাররা ন্যায়সঙ্গত ভাবে যে সম্পত্তি অর্জন করেছেন, তা নষ্ট করার জন্য কংগ্রেসের কোনরূপ মতলব নেই।* - - • “The working Committee passed a resolution assuring zemindars that there was no design on their interests legitimately acquired-A. P. Meurs. অধ্যাপক ডাঃ রাধাকমল মুখোপাধ্যায় মহাশয়ের মত હફે, “যে-কোন বিধিব্যবস্থায় হউক না কেন, জমিদারী স্বত্বের সংক্ষেপ করিয়া, জমির হস্তান্তর প্রতিরোধ করিয়া মজুর, বর্গাদার, আধিয়ার প্রভৃতিকে কায়েমী স্বত্ব দিয়া পল্লীসমাজের অনৈক্য দূর করিতেই হইবে । ধনী ও মধ্যবিত্ত শ্রেণ। রাষ্ট্রক স্বাধীনতা লাভ করিয়া তাহা দেশের ও দশের অকল্যাণে নিয়োজিত করিকে, যদি এক্ট অনৈক্যের একটা সমাধান না হয় । লোকসংখ্যা বৃদ্ধিহেতু জমি ক্ষুদ্র হইতে ক্ষুদ্রতম হইয়া চলিয়াছে । ফলে অনেক প্রদেশে শতকরা ৪• হইতে ৬০ জন কৃষকের জমির পরিমাণ এত ক্ষুদ্র যে, তাহাতে কৃষক-পরিবারের সন্ধুলান হয় না । গ্রামে গ্রামে নিরবলম্বন শ্রমিক দলের সংখ্যা এই কারণেও বৃদ্ধি পাইতেছে । যদি দেশের অৰ্দ্ধেক পরিমাণ ক্ষেতে কেবলমাত্র কৃষি হইতে জীবিকানিৰ্ব্বাহ অসম্ভব হইয় পড়ে তবে সমাজে ঘোর অশাপ্তি, এমন কি, বিপ্লবও ঘটবার সম্ভাবনা ।” ইহা নিরাকরণের তিনটি প্রধান উপায় তিনি নির্দেশ করেছেন ; যথা,-কৃষকের মৃত্যুর পর হয় জ্যেষ্ঠ, না-হয় কনিষ্ঠ পুত্র উত্তরাধিকারসূত্রে জমি পাবে ; কৃষকবিশেষকে জমির খাজনা থেকে নিস্কৃতি দেওয়া ; এবং জন্মপ্রতিরোধের চেষ্টা । মাটির অধিকারের সমস্যা বর্তমানে শ্রেণীবিশেষের কাছে প্রবাসী-পুত্রের মায়ের স্নেহাধিকারের সমস্তার স্থানীয় হয়ে দাড়িয়েছে। কারণ, উক্ত শ্রেণীভুক্ত অনেককে বিদেশে ব্যবসা, চাকরি বা মজুরি করতে হয়, সেই আয় জমির সামান্য আয়ের সঙ্গে সংযুক্ত করে পরিবার প্রতিপালন করতে হয়। পৃথিবীর সমস্ত সভ্য দেশেই আজ ধনী ও নিধনের সংঘাত অল্প-বিস্তর জেগে উঠেছে। ভারতে এ সংঘাত যে খুব তীব্র হয় নি তার একটা কারণ এই যে, প্রাচীন কালে ধৰ্ম্মের নামে সম্প্রদায় গঠন করে মানুষে মানুষে লড়াই হত, শিক্ষার অপ্রসারহেতু এবং কতগুলি বাহিক কারণে ভারতের বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে সেই দ্বন্দ্বকে কৃত্রিমভাবে জাগিয়ে রাখা হয়েছে। হিন্দু-মুসলমানসমস্ত তার মধ্যে প্রধান। শ্রমিকদের নিয়ে অর্থনৈতিক শ্রেণীগঠনকাৰ্য্য এখনও বেশী দূর অগ্রসর হয় নি বলে ধনিকের সঙ্গে তাদের বিবাদ এখনও তেমন জোরে বাধে নি। দ্বিতীয় কারণ,—ভারতের সমাজ