পাতা:প্রবাসী (ত্রয়োবিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/২৭০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিবিধ প্রসঙ্গ বিশ্বভারতী-নারীবিভাগ আমরা শ্ৰীযুক্ত রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর মহাশয়ের নিকট হইতে নিম্নলিখিত পত্ৰখানি প্রকাশ করিবার জন্য পাইয়াছি – “শাস্তিনিকেতন আশ্রমে বিশ্বভারতীর অন্তর্গত নারীবিভাগ হইতে স্ত্রীলোকদের শিক্ষার জন্য বিশেষ ব্যবস্থ৷ করা হইয়াছে । আপাততঃ এখানে অন্যান্য শিক্ষণীয় বিষয়ের সঙ্গে সঙ্গে সঙ্গীত, চিত্রকলা, বস্ত্রবয়ন এবং বই-বাধানে প্রভৃতি হাতের কাজ শিক্ষা দেওয়৷ চলিতেছে । সেইসঙ্গে স্বাস্থ্য তত্ত্ব, রোগীপরিচর্য্য, শাকসব্জী ফুলফলের বাগান তৈয়ারী, বিজ্ঞানবিচিত গৃহকৰ্ম্ম-প্রণালী প্রভৃতি বিষয়ে ছাত্রীর পারদর্শিতা লাভ করে, ইহা আমাদেব ইচ্ছা । নানা কারণে পুরুষ ছাত্রদিগকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাধ। নিয়মে পরীক্ষায় উৰ্ত্তীর্ণ হইবার দিকে লক্ষ্য রাখিয় সঙ্কীর্ণ পথে বিদ্য উপজ্জন করিতে হয়। সৌভাগ্যক্রমে, আমাদের নারীদেব পক্ষে এ সম্বন্ধে অবশ্যবাধ্যতা নাই । এজন্য, বুদ্ধি চরিত্র কৰ্ম্মপটুতা ও সৰ্ব্বাঙ্গীন উৎকর্মসাধনের প্রতি লক্ষ্য রাখিয়, উদারভাবে তাহাদিগকে শিক্ষা দেওয়া সম্বন্ধে বধি অপেক্ষাকৃত অল্প। এই স্থযোগ আছে বলিয়া, ভরসা করি, নারীশিক্ষায় আগ্রহবান ব্যক্তিদিগের নিকট হইতে মথোচিত আহুকুল্য পাইলে দেশবিদেশ হইতে উপযুক্ত। শিক্ষয়িত্রী সংগ্ৰহ করিয়! এখানে উচ্চ আদর্শেব নারীশিক্ষালয় গড়িয়া তুলিতে কৃতকাৰ্য্য হইব । এই উদ্দেশ্য সাধনের জন্য দেশের বিদ্যোৎসাহী বদান্ত ব্যক্তিদিগের নিকট হইতে এককালীন বা মাসিক বা বার্ষিক দান প্রার্থনা করিতেছি ; আশা করি, আমাদের আবেদন বিফল হইবে না । শীরবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ।” নারীর অর্থকরী বৃত্তি আমাদের দেশে, অর্থাৎ ভারতবর্ষে, শিক্ষিত মহিলার শিক্ষা, চিকিৎসা, পুস্তক-রচনা, সংবাদপত্র-চালনা, ধাত্রী বিদ্যা, পোষাক-নিৰ্ম্মাণ, শুশ্ৰুষ, বস্ত্রব্যবসায়, ও সৰ্ব্বশেষে ওকালতীর কার্য্যে দেখা দিয়াছেন । নিম্ন শ্রেণীর মধ্যে কুলি, কণ্টাক্টর, দোকানদার, কৃষিব্যবসায়ী, দুগ্ধব্যবসায়ী, ধোপানী, নাপিতনী, রাধুনী, দাসী, প্রভৃতির কাজ করিয়া বহু রমণীকে উপার্জন করিতে দেখা যায়। পাশ্চাত্য দেশে মেয়ের যে কত রকম ব্যবসায় আরম্ভ করিয়াছেন, আমেরিকান "ওম্যান সিটিজেন” পত্রে তাহার কিঞ্চিৎ আভাস পাওয়া যায় । এই পত্রে দেখি :– “এ পর্য্যস্ত কৰ্ম্মক্ষেত্রের যে-সকল বিভাগে কেবল মাত্র পুরুষের গতিবিধি ছিল, রমণী জাতিও যে সেই-সকল বিভাগে ক্রমশ দ্রুত-গতিতে আসিয়া প্রবেশ করিতেছেন, মহিলা-কৰ্ম্মীসভেনর একটি আধুনিক পরিবীক্ষণের ফলে তাহা প্রমাণ হইয়ু গিয়াছে । মাল প্রভৃতির চালান বিভাগে নারী কৰ্ম্মীর সংখ্যা গত দশ বৎসরে দ্বিগুণ হইয়াছে ; এই দশ বৎসরেই কেরাণী, রেখাক্ষর-লেখক, টাইপিষ্ট, হিসাব-রক্ষক, টেলিফোন-যন্ত্রী, শুশষাকারিণী প্রভৃতি নারীর সংখ্যা ৫০,০০ এরও বেশী বাড়িয়াছে । শিক্ষিত ও দক্ষ শ্রমিকদের ব্যবসায়েও রমণীর সংখ্যা ধীরে ধীরে বাড়িতেছে ; অনেকে যন্ত্রনিৰ্ম্মাতা, যন্ত্রচালক, রাজমিস্ত্রী, হাতিয়ার-নিৰ্ম্মাতা, লোহ ঢালাইকর, পলস্তরাকারী, নল-মেরামত-কারী, গ্যাসযোজনকারী, এমন কি মুচি, কামার প্রভৃতির কাজেও ঢুকিতেছেন। . সরকারী কাজেও ইহাদের নিয়োগ বাড়িতেছে ; কারণ ইহাতে এই দশ বৎসরে ইহাদের হার শতকরা ৬০৭ করিয়৷ বাড়িয়াছে। ১৯১০ খৃষ্টাব্দে জেলার কৰ্ম্মচারী, সম্মিলিত রাষ্ট্রমণ্ডলের কৰ্ম্মচারী, পোষ্টমিষ্ট্রেস ( ঢাককত্ৰী ) প্রভৃতির সংখ্যা ছিল ২৭৫ ; দশ বৎসরে বাড়িয়া হইয়াছে ৬৫২ ; বাল অপরাধীদের ও পলাতক এবং ভবঘুরে বালকদের তত্ত্বাবধায়কের কাৰ্য্যে মহিলার সংখ্যা ১৮৮ হইতে ৭৮০ হইয়াছে। এই রিপোর্টে ৮ জন আকাশযান-চালক, ৫৭ জন যন্ত্র-উদ্ভাবক, ৪১ জন এঞ্জিনিয়ার, ১৩৭ জন সৌধশিল্পী,