পাতা:প্রবাসী (ত্রয়োবিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৬৬৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৫ম সংখ্যা ) নামে বাঙ্গালা অক্ষরে ও সংস্কৃত ভাষায় টাকা ছাপাইয়াছিলেন। র্তাহার নাম শ্ৰীদকুজমর্দন দেব । মুসলমানের ইতিহাসে, অর্থাৎ—“তারিখ ই-ফেরেস্তা” ও “রিয়াজউস-সালাতীন”এ এই দমুজমর্দনের নাম পাওয়া যায় না । ইনি ১৩৩৯ শককে অর্থাৎ ১৪১৬ ১৭ খৃঃ বাঙ্গালা দেশে স্বাধীন রাজা হইয়াছিলেন এবং পাণ্ডুনগর, স্ববর্ণগ্রাম ও চাটিগ্রাম নামক তিনটি স্থানে তাহার টাকশাল ছিল । মুসলমান বিজয়ের পরে নিজ বাঙ্গালা দেশে, অর্থাৎ— কুচবিহার, ত্রিপুরা, আসাম প্রভৃতি অনার্য-শাসিত প্রদেশগুলি বাদ দিলে বর্তমান বাঙ্গালার যেটুকু অবশিষ্ট থাকে তাহাতে কোন হিন্দুরাজা নিজের নামে টাকা ছাপাইতে ভরসা করেন নাই। প্রতাপাদিত্য রায় নিজের নামে টাকা ছাপাইয়াছিলেন বলিয়া শুনিতে পাওয়া যায়, কিন্তু সেকথা সম্ভবতঃ মিথ্যা । প্রতাপীদিত্য সম্বন্ধে রামরাম বন্ধ প্রভৃতি লেখকগণ অনেক মিথ্যা কথাই বলিয়া গিয়াছেন এবং সেইজষ্ঠ তাহাদের কোন কথা নূতন প্রমাণের সমর্থন না পাইলে বিশ্বাস করা উচিত নহে। মুদ্রণ ছাড়া এই দনুজমর্দনের অস্তিত্বেব অপর কোন প্রমাণ নাই। ১৮০৭ খৃঃ এর পূৰ্ব্বে "গৌড়-বিবরণ" রচয়িত ক্রেটনের (Creighton ) মৃত্যু হইয়াছিল এবং ১৮১৭ খৃঃ প্রকাশিত ক্রেটনের গ্রন্থে দনুজমর্দন দেবের একটি মুদ্রার চিত্র আছে * ১৩১৭ বঙ্গাব্দের পূৰ্ব্বে মালদহ জেলায় পাণ্ডুয়ার আদীনা মসজিদের উত্তর-পূৰ্ব্বাংশের দুই ক্রোশের মধ্যে একজন সাঁওতাল ক্লষক হলকর্ষণকালে দনুজমর্দন দেবের আর-একটি মুদ্রা আবিষ্কার করিয়াছিল এবং এই মুদ্রাটি মালদহের উকিল, ৬ রাধেশচন্দ্র শেঠের হস্তগত হইয়াছিল । * ১৯১১ খৃঃ খুলনা জেলায় বাস্থদেবপুর গ্রামে জনৈক মুসলমান সমাধি-খনন-কালে দনুজমর্দনের আর-একটি রঞ্জত মুদ্র আবিষ্কার করিয়াছিল। দৌলতপুর হিন্দু একাডেমীর অধ্যাপক শ্ৰীযুক্ত সতীশচন্দ্র মিত্র এই মুদ্রণটি সংগ্ৰহ করিয়া আনিয়া বঙ্গীয়-সাহিত্য

  • Creighton's Ruins of Gaur, p. 11. + রঙ্গপুর-সাহিত্যে-পরিষৎ-পত্রিকা, ৭ম ভাগ, পৃঃ ৭৩-৭৪ ।

গণেশ ও দনুজমর্দন やGr> পরিষদে উপহার প্রদান করিয়াছেন ।* ১৯১৩ খৃঃ মুর্শিদাবাদ জেলার কোন স্থানে দতুজমর্দনের আরও একটি রঞ্জত মুদ্রা আবিষ্কৃত হইয়াছিল। ইহার পরে উত্তর ও পূৰ্ব্ববঙ্গের নানা স্থানে দনুজমদন দেবের মুদ্রা আবিষ্কৃত হইয়াছে। সম্প্রতি শীঘুক্ত নলিনীকান্ত ভট্টশালী প্রণীত Coins and Chronology of the Early Independent Sultans of Bengal ainz; altz os ojos করিয়াছেন যে, দনুজমর্দন রাজা গণেশের অপর নাম । ভট্টশালী-মহাশয় দনুজমর্দন বা রাজা গণেশ সম্বন্ধে নৃতন কোন প্রমাণই আবিষ্কার করিতে পারেন নাই, অথচ তিনি কেমন করিয়া এত বড় একটা গুরুতর সিদ্ধান্তে উপনীত হইলেন তাহ বিচার করিবাব পুৰ্ব্বে অতি সংক্ষেপে সেই সময়ের বাংলা দেশের অবস্থা পৰ্য্যালোচনা করা উচিত । ভোগলক বংশীয় ফিরোজ শাহ ৭৫২ হিঃ ( ১৩৫১-৫২ খৃ: ) দিল্লীর সিংহাসনে আরোহণ করিয়াছিলেন । সেই সময়ে শমস উদ্দীন ইলিয়াস শাহ বাঙ্গালীর স্বাধীন রাজা । কেহ কেহ বলেন যে, ইলিয়াস শাহ ৭৪০ হিঃ অর্থাৎ ১৩৩৯ খৃঃ বাঙ্গালার স্বাধীন রাজা হইয়াছিলেন, কিন্তু ভট্টশালী-মহাশয়ের মতে তিনি ৭৪৩ হিঃ পশ্চিম বঙ্গে রাজ হইয়াছিলেন । ৭. শামসউদ্দীন ইলিয়াস শাহের পরে তাহার পুত্র সিকন্দর শাহ এবং পৌত্র গিয়াসউদ্দীন আজম শাহ বাঙ্গালা দেশে রাজত্ব করিয়াছিলেন । আজম শাহের পরে তাহার পুত্র কৈ ফউদ্দীন হমজা শাহ ও পৌত্র দ্বিতীয় শামসউদ্দীন বাঙ্গালার সিংহাসন লাভ করিয়াছিলেন । ইহার পরে শিহাবউদ্দীন বায়জীদ শাহ ও আলাউদ্দীন ফিরোজ শাহ নামক বাঙ্গালা দেশের দুইজন স্বাধীন স্বলতানের অস্তিত্বের প্রমাণ তাহাদিগের মুদ্রা হইতে আবিষ্কৃত হইয়াছে। বায়াজীদ শাহের সহিত ইলিয়াস শাহের বংশের কোন সম্বন্ধ ছিল কিনা তাহা বলিতে পারা যায় না। "রিয়াজ-উস-সালাতীনে” দেখিতে পাওয়া যায় যে, দ্বিতীয় শামসউদ্দীনের প্রকৃত নাম শিহাব

  • প্রবাসী, ১৩১৯, ১ম খণ্ড, পৃঃ ৩৮৬ ৷ 4 soins and Chronology of the Early Independent Sultans of Pengal, p. 21.